‘বাংলাদেশের জন্ম থেকে এ পর্যন্ত সীমান্তে ভারত যত মানুষ হত্যা করেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে যুদ্ধ ছাড়া আর কোথাও এতো মানুষ হত্যার শিকার হয়নি। আমরা স্বাধীনতার পর থেকেই এর প্রতিবাদ করে আসছি। যুগে যুগে এদেশে শাসক পাল্টেছে কিন্তু ভারতীয় শোষণ পাল্টেনি। আমরা সরকারকে বলতে চাই- ভারতীয় আগ্রাসন বন্ধে উদ্যোগ না নিলে আমরা ভারতীয় হাইকমিশন ঘেরাও করবো।’
সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবিতে করা মশাল মিছিল পরবর্তী সমাবেশে এমনটাই মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন৷
বুধবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিতের দাবিতে কলা ও মানবিকী অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে একটি মশাল মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে শিক্ষার্থীরা৷ এরপর কলা অনুষদের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
মশাল মিছিলে শিক্ষার্থীরা- ‘সীমান্তে হত্যা কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘নদীর পানি ট্রানজিট গ্যাস, জবাব দিবে বাংলাদেশ’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দিবে জনগণ’, ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, রুখে দিবে জনগণ’, ‘ভারতীয় প্রকল্প, চলবেনা চলবেনা’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ভারত সীমান্তে ৭০০ বাংলাদেশী নাগরিককে হত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন মন্তব্য করে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী জিয়া উদ্দিন আয়ান বলেন, ফ্যাস্টিস্ট সরকারের সময়ে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী ৭০০ বাংলাদেশী নাগরিককে সীমান্তে হত্যা করেছে। পৃথিবীর আর কোথাও এমন নজির নেই। নিরস্ত্র মানুষকে যেন আর সীমান্তে হত্যার শিকার না হতে হয়, আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই৷
ভারত শুধুমাত্র দিল্লির স্বার্থেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে মন্তব্য করে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সিফাত উল্লাহ বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার এরকম মনোভাব দেখায়। কিন্তু পরক্ষণেই আমরা দেখি ভারত হিন্দু ধর্মাবলম্বী দু’জনকে সীমান্তে হত্যা করেছে৷ এর দ্বারা বুঝা যায় ভারত শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলে। তারা এদেশের সংখ্যালঘুদের সাথে নাই, তারা তাদের দেশের সংখ্যালঘুদের সাথেও নাই। তারা শুধুমাত্র দিল্লির স্বার্থেই এদেশের সংখ্যালঘুদের ব্যাবহার করে৷
উত্তরবঙ্গের প্রতিবছরের বন্যা দুই দেশের অভিন্ন নদীরগুলোর পানির নায্য হিস্যা না থাকার ফলাফল মন্তব্য করে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল হাই স্বপন বলেন, উত্তরবঙ্গে প্রতিবছর যে বন্যা হয়, সেটা ভারতের সাথে থাকা অভিন্ন নদীরগুলোর পানির নায্য হিস্যা না থাকায়। দুই দেশের মধ্যে থাকা ৫৪টি অভিন্ন নদীর পানির নায্য হিস্যা আমাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। আর যেন সীমান্তে কোনো হত্যা না হয়। অন্তর্বর্তী সরকার এর একটি স্থায়ী সমাধান করুক৷
সীমান্তে যদি আর একবার গুলি চলে বাংলাদেশের জনগন বসে থাকবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে সমাপনী বক্তব্যে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ১৯৭১ সালের পরবর্তী সময় থেকে ভারতকে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে মনে করে আসছি। কিন্তু তারা এর বিনিময়ে সীমান্তে লাশ, বন্যা ও খরা উপহার দিয়েছে। ভারত সরকারকে বলতে চাই, আপনারা আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করছেন। সীমান্তে যদি আর একবার গুলি চলে আমরা বসে থাকব না। নদীর পানির নায্য হিস্যা বুঝিয়ে দিন। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন চালাবেন না। আমরা যে আপনাদের বন্ধু মনে করছি, সে বন্ধুত্বের পরিচয় দিন৷