কক্সবাজারে ট্রেন চলাচল নিয়ে সংশয় কাটবে কি?

, যুক্তিতর্ক

আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক বার্তা২৪.কম | 2024-06-13 19:36:07

দুয়ারে কড়া নাড়ছে ঈদ। এখনকার ঈদ উৎসবে ধর্মীয় আচার পালনের চেয়ে ঈদের ছুটিতে ঘুরে বেড়ানোই বড় চাহিদা হয়ে ধরা দিয়েছে। আর্থ-সামাজিক অসমতা থাকলেও দেশের মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন যে হয়েছে তা উৎসবের দিনগুলিতে বেশ টের পাওয়া যায়। ঈদে শুধু ঘুরতে যাওয়াই নয়, ঈদ কেনাকাটা করতেও অনেকে এখন সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড ঢু মারেন। নিদেনপক্ষে সীমান্তের উপারের শহর কলকাতার কথা তো বলাই বাহুল্য। তবে মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করতে দেশের অভ্যন্তরে ভ্রমণের প্রবণতাও বেড়েছে বহুলাংশে। 

গণমাধ্যমগুলো বরাবরই তুলে ধরছে বাংলাদেশে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনার কথা। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে দেশে রপ্তানি খাতের মতোই উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পর্যটন কেন্দ্রগুলোর। কিন্তু হতাশার কথা হচ্ছে, পর্যটনের বিদ্যমান এই সম্ভাবনাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সহায়ক অবকাঠামোগুলো পুরোপুরি ব্যবহারের পূর্বেই মুখ থুবড়ে পড়ছে!  

গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারছি, পর্যটননগরী কক্সবাজারে বহুল প্রতীক্ষিত ট্রেন চলাচল শুরু হলেও তা ব্যাহত করতে সক্রিয় একটি অশুভ চক্র। পর্যটননগরী কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের গমনাগমন নির্বিঘ্ন করতে বহু অর্থ ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে আইকনিক স্টেশন। কক্সবাজারে ট্রেন চালু উপলক্ষে আড়ম্বরপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আশাবাদের কথা শুনিয়েছিলেন তা ভ্রমণপিপাসু সবাইকে তা আশান্বিত করেছিল।

গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন চালুর পর বহু আবেগঘন খবর এসেছে সংবাদপত্রে। বাসে চড়তে না পারা মানুষদের জন্য কক্সবাজারে ট্রেন চালুর খবর আনন্দের বিশেষ মাত্রা যোগ করেছিল। ‘কক্সবাজার যেতে চাওয়া বৃদ্ধের স্বপ্ন পূরণ হবে এবার’-এমন খবরও পড়েছি আমরা। কিন্তু ‘ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার সংকট’ দেখিয়ে গত ৩০ মে (২০২৪) বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্রেনটি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মোজাম্মেল হক চৌধুরী তখন দাবি করেছিলেন, মূলতঃ ঢাকা-কক্সবাজার রুটের বাস মালিকদের আঁতাতেই ট্রেন বন্ধের সিদ্ধান্ত।

ভ্রমণপিপাসুদের অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিত ১২ দিন বন্ধ থাকার পর স্পেশাল ট্রেনটি ১২ জুন (২০২৪) সকালে চট্টগ্রাম থেকে ফের কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এই খবর নতুন আশার সঞ্চার করলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘আপাতত’ ট্রেনটি চলবে ২৪ জুন পর্যন্ত। কক্সবাজার রেলযাত্রা নিয়ে পর্যটকদের যেখানে এত আগ্রহ, সেখানে কর্তৃপক্ষ কেন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টার এতদিনেও ব্যবস্থা করতে পারল না? এত বিপুল অর্থ ব্যয়ে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, আইকনিক স্টেশন-এই সবই যদি করা সম্ভব হলো; তবে ইঞ্জিন আর লোকোমাস্টারের সংকট দেখানো কি ঠুনকো অযুহাত নয়?

আকাশপথে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী উড়োজাহাড় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কিংবা সরকারি টেলিফোন অপারেটর টেলিটক এর ক্ষেত্রে দেখেছি-কিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে সেবা ও মুনাফা অর্জনে প্রতিযোগিতার দৌঁড়ে অন্যদের থেকে পিছিয়ে রাখা হয়। রাষ্ট্রের এমন বহু প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাবে, যেখানে এই অশুভ হাত ছায়া ফেলেছে।

কক্সবাজারের রেলপথ ও সেখানকার পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে যোগাযোগের এই অনায়াস মাধ্যমটিও যে এ ধরণের অশুভ চক্রের হাতে পড়বে তা পূর্বেই অনুমান করা হয়েছিল। প্রতীক্ষিত ট্রেনটি চালু করা নিয়ে বিদ্যমান দোলাচল তারই ইঙ্গিত বহন করছে বলে মনে করছেন অনেকে। পর্যটন নগরীর বিকাশে এত বিপুল ব্যয়ে নির্মিত রেলপথ স্বার্থান্বেষী বিশেষ চক্রের একচেটিয়া ব্যবসার আধিপত্যকে ভেদ করে ট্রেন চলাচল সচল থাকবে কিনা তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। আমরা প্রত্যাশা করব, সম্ভাবনার এই যোগাযোগ খাতটি মুখ থুবড়ে পড়ার আগেই সরকার এ বিষয়ে সচেষ্ট হবে। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর