আজকের লেখাটা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে কী বোঝায় সেটা দিয়ে শুরু করতে চাই। বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এর মতে "বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান যেখানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেয়া হয় না বরং উন্মুক্ত বা বিশ্ব পরিমণ্ডলের মানুষে-মানুষে যোগাযোগ স্থাপন, কৃষ্টি-কালচার, ভাষা, পোশাক এবং সহনশীল মনোভাব তৈরি করে মনের উৎকর্ষ সাধনে কাজ করে।"
বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা হবে সার্বজনীন বা বিশ্বের মাপকাঠিতে; এটা কখনই কোনো বিশেষ এলাকা বা অঞ্চলের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে না। বর্তমান সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলর হলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি খুবই সহজ-সরল এবং মজার মানুষ। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তনে তিনি হাসি মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে কিছু প্রয়োজনীয় কথা বলেন। আমাদের অভিভাবক হিসেবে যা পরম পূজনীয়। এসব বক্তব্যের মধ্যে উঠে এসেছে- সান্ধ্যকালীন কোর্স, শিক্ষকদের কনসালটেন্সি এবং সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষাসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
গত ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ভাইস-চ্যান্সেলরদের নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কিত একটি সভা করেছে।
ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটতে হয়। সেজন্য পরিবহন ব্যয়সহ বেশ খানিকটা অর্থের প্রয়োজন পড়ে। যা একটা সাধারণ পরিবারের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা হলে যা যা সুবিধা হতে পারে:
০১. শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ একটা বা দুইটা (যেমন: প্রকৌশল, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বা সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি পরীক্ষা দিতে হতে পারে।
০২. পরিবহন ব্যয় এবং ভর্তি ফর্ম তোলা বাবদ টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
০৩. শারীরিক বা মানসিক চাপ কমবে।
০৪. ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা সহজ হবে।
সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হলে যে যে অসুবিধা হতে পারে তা হলো
০১. একজন শিক্ষার্থী কোনো কারণে অসুস্থ হলে তার সারাজীবনের কষ্ট বিফলে যেতে পারে। কারণ একাধিক পরীক্ষার সুযোগ কম।
০২. কোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব ভাল বা খুব খারাপ মানের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সম্ভাবনা হতে পারে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বজনীন ধারণার ব্যত্যয় বলে মনে হয়।
০৩. ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস বা লিয়াজোভিত্তিক ভর্তির সম্ভাবনা বাড়তে পারে। এ বিষয়টি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার প্রধান বাধা হতে পারে।
০৪. বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হয়ে উঠতে পারে অঞ্চলভিত্তিক যেমন, খুলনার শিক্ষার্থীরা খুলনা কেন্দ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার সম্ভাবনা বাড়তে পারে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞার সাথে ব্যত্যয় কিনা বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
০৫. জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং কৃষ্টি-কালচারের আদান প্রদান কমতে পারে।
আপাত দৃষ্টিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় স্বল্প সময়ে সুবিধা হলেও, বৃহত্তর পরিসরে এটি অসংখ্য অসুবিধার কারণ হতে পারে বলে মনে করি। সত্যিই যদি শিক্ষার্থীদের মঙ্গল চিন্তা করি তাহলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষায় সার্বজনীন হতে পারে। যা নিম্নরূপ:
০১. একজন শিক্ষার্থী শুধুমাত্র তার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। সে ক্ষেত্রে বিনামূল্য ভর্তি ফর্মসহ আনুষঙ্গিক ব্যাপার শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা করা যেতে পারে। পরীক্ষার আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারিভাবে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
০২. অঞ্চলভিত্তিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন, ঢাকা বিভাগের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পর পর তারিখে নেয়া যেতে পারে। এরপর খুলনা বা চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বিভাগে চলতে থাকবে।
০৩. অনেক সময় একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে আলাদা আলাদা পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এজন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধুমাত্র একটি পরীক্ষা নীতি চালু করা যেতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনা শুধুমাত্র একটি প্রস্তাবনা মাত্র। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার পূর্বে একটু বৃহৎ পরিসরে আলোচনা জরুরি বলে মনে করি। আলোচনা শেষে এমন একটি উপায় বের করতে হবে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ধারাকে উন্নত করে এবং একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জন্য মঙ্গলজনক হয়। আশা করি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবর্গ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সর্বজন স্বীকৃত উপায় বাতলে দিবেন।
মোঃ হামিদুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কন্সট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)।