আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল শহরের টঙের দোকানে। দীর্ঘ সময় পর দেখা। কলেজ ছেড়ে আসার পর আর দেখা হয়নি। পড়া শেষ করে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিল। অনেকটা সাধারণ হিসেবে জীবন চলছিল। মাঝে মধ্যে দেশে এসে ঘুরে গেলেও। বাবার বাড়ি, স্বামীর বাড়ির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আর বন্ধুদের খোঁজ নেয়ার সময় হয়ে উঠতো না।
এবারও ছেলেকে কোনো একটা কোচিং সেন্টারে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, দেখা হয়ে গেল পথে। হুম এখন ও দেশেই থাকে। এখন ওর নিজের একটা বাড়িও হয়েছে। ভাড়া বাড়িটা নিজের মতো করে সাজিয়েছে। ছোটখাটো ব্যবসা করছে। গুছিয়ে উঠে বন্ধুদের ডাকার ইচ্ছে ছিল। ঠিকঠাক মতো কি আর গুছিয়ে ওঠা যায়? ডাকতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু দেখা তো হলো। বলল-সরে এসেছে স্বামীর কাছ থেকে। তবে স্বামীর প্রতি ওর কোনো অভিযোগ নেই। বন্ধু বললো- আমরা মেয়েরা আসলে প্রতিপক্ষ ঠিক করতে ভুল করে ফেলেছি। আমার প্রতিপক্ষ তুই না। অর্থাৎ পুরুষ নয়। নারীর প্রতিপক্ষ নারীই।
আমাকে তো সংসার করতে দিল না কয়েকজন নারীই। আমার স্বামীর সঙ্গে বোঝাপড়ায় সমস্যা ছিল না। কিন্তু কোনোভাবেই আমাকে সইতে পারলো না ননদ, শাশুড়ি। আমার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছিল না তাদের। বলতে পারিস এলার্জি। আমার মায়েরও জিদ কম না। তিনি যে কোনোভাবে আমাকে আলাদা বাড়ি নিয়ে থাকতে দেবেন না। দেশে ফিরে আমরা আলাদা বাড়িতে উঠে যেতে চেয়েছিলাম। স্বামীও তাই চাইছিল। কিন্তু আমার মা জেদ ধরে বসলেন, ননদ-শাশুড়িকে শায়েস্তা করতে আমাকে ঐ বাড়িতেই থাকতে হবে। আমি যে ঐ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আলাদা কোনো কাজ করবো মা সেটাও মানতে পারছিলেন না। তাই আমিই ওদের বিদায় দিয়ে ছেলেকে নিয়ে নিজের ঘরে উঠলাম।
দুই বছর হল আলাদা আছি। ও, মানে আমার স্বামী অপেক্ষায় আছে ভুল বুঝতে পেরে ফিরবো কোনো দিন। আমরা শুধু ভুলই করি তাই না রে?
বন্ধু চা খেতে খেতে ঝড়ের বেগে যতোটুকু বললো, তার সঙ্গে চারপাশের ঘর বাড়ির অমিল নেই। কতো মেয়েকে দেখেছি মা চান না বলে ভাল রেজাল্ট থাকার পরেও চাকরি করতে পারল না। মা চান মেয়ে মনোযোগ দিয়ে স্বামীর সংসার করুক। আবার কোনো কোনো মা আছেন নিজের মেয়েকে চাকরি করতে দিলেও, ছেলের বউকে করতে দেবেন না। নিজের মেয়ের জন্য যে যে কাজে সবুজ সংকেত,মেয়ের বেলাতে তার সবকিছুতেই লাল সংকেত। পরিবারে শ্বশুর বউমা’র চাকরির পক্ষে কথা বললেও, শাশুড়ির বিদ্রোহের জন্য বউমা কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। ননদ স্বামীর বাড়িতে যা যা করতে চায় না। সেটি আবার ভাইয়ের বউকে দিয়ে করাতে চায়।
কোনো কোনো মা মেয়ের সঙ্গে লেপ্টে থাকতে চান। মেয়ের জামাই না চাইলেও। জোরপূর্বক থাকতে গিয়ে অনেক মা মেয়ের সংসার ভেঙ্গেছেন। অন্দর মহল থেকে যদি অফিস পাড়ায় ঢুঁ দেই দেখবো নারী কর্মীদের কাজ। কাজের যোগ্যতা, সাফল্য নিয়ে পুরুষ সহকর্মীরা যতোটা না মাথা ঘামান, তার চেয়ে দ্বিগুণ মনোযোগ নারী সহকর্মীদের। নারী কর্মীর ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে নারী কর্মীর চোখেই। নারী সহকর্মী যেন এগিয়ে যেতে না পারে, সেই যোদ্ধা হিসেবে নারীদেরই দেখা যায়। নারী দিবস , নারীর চোখে বিশ্ব দেখার আহ্বান সকল কিছু ছাপিয়ে প্রয়োজন-নারীর প্রতি নারীর সহমর্মিতা। একজন নারীকে আরেকজন নারীর কাজ, চিন্তা এবং অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর মন তৈরি করতে হবে। তবে নারীর প্রতি সহিংসতাও কমে যাবে অনেকটা। কারণ নারীর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যান বলছে, নারীদের হাতে নারীর সহিংসতার শিকার হবার আনুপাতিক হিসেবটাও আঁতকে ওঠার মতো। অতএব নারীর পাশে এসে পুরুষ তো আছেই, এবার নারীও এসে দাঁড়াক।
তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন