কবি জীবনানন্দ দাশ ‘সুচেতনা’ কবিতায় বলেছেন, ‘পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন’। সত্যিই মহামারি করোনার তাণ্ডবে পৃথিবীর গভীর অসুখ আজ। মানব সভ্যতা মহাত্রাসের মুখে। ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেনের অবস্থা ভয়াবহ। স্পেনে ঘরের মধ্যেই মানুষ মরে পড়ে থাকছে। সেখানেই পচে যাচ্ছে লাশ। সরানোর বা দাফনের কেউ নেই। মর্গে লাশ রাখার জায়গা না থাকায় শপিংমলকে মর্গ বানাল স্পেন। করোনা আক্রান্তদের ফেলে পালিয়েছে স্পেনের বহু বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষ। ইতালিতে, স্পেনে প্রতিদিনই মৃত্যুর রেকর্ড আগের দিনকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। নির্ধারণ করতে হচ্ছে কাকে চিকিত্সা দেবে আর কাকে চিকিত্সা দেবে না।
প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে ইতালিতে। ২৭ মার্চ আল জাজিরার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে এই ভাইরাসে ৯৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিপর্যস্ত, হতাশ ইতালির প্রধানমন্ত্রী সব আকাশওয়ালার ফায়সালার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। ইতালির সেনাবাহিনীর কনভয়ে যুদ্ধাস্ত্র নয়, তাদের কনভয়ে নিয়ে যাচ্ছে লাশের কফিন।
ইরান করোনার সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত। হাল ছেড়ে দিয়েছ। বিশ্বের সুপার পাওয়ার আমেরিকা করোনায় জর্জরিত। খাদ্যপণ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসবে। ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিন-এর এক গবেষণা বলছে, আগামী চার মাসে করোনাভাইরাস শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কেড়ে নিতে পারে ৮১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ। দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিল আগামী জুন মাস পর্যন্ত বাড়তেই থাকবে।
অনেক আমেরিকান ফোন করে বলছে- আমি মরে যেতে চাই। যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, ৯১১ নম্বরে ফোন করে মানুষজন আত্মহত্যা চেষ্টার কথা জানাচ্ছে। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি হওয়ার শঙ্কায় তারা আত্মহত্যা চেষ্টার কথা বলছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন নাগরিকরা করোনার ভয়ে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এ ধরনের কর্মকাণ্ডের চেষ্টা করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ১২ মার্চ থেকে ২২ মার্চের মধ্যে ৯১১ নম্বরে ফোন করে আত্মহত্যা করতে চাওয়ার কথা জানানোর সংখ্যা ২৩ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাজ্য আশংকা করেছে এভাবে লাশের মিছিল বাড়তে থাকলে তাদের সৎকারের জন্য জায়গার সংকটে পড়বে। মসজিদ, মন্দির, গির্জা, সিনাগগ বন্ধ। প্রায় সারা পৃথিবী সব লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছে।
জীবন মৃত্যুর পার্থক্য একটি স্পর্শ, একটি হাঁচি বা কাশি। করোনা এতটাই সংক্রামক যে, কলিজার ধন সন্তানের শেষ সময়ে মা-বাবা কিংবা মা-বাবার শেষ যাত্রায় সন্তানের স্পর্শ দূরে থাক, কাছেও যেতে মানা। বহু বছর ধরে সংসার করা স্বামী-স্ত্রী শেষ বিদায়ের আগে যে কথা বলার ছিল তা বলার সুযোগও পেল না। সংক্রমণের ভয়ে মৃতের শেষ গোসল হচ্ছে না। দ্রুত দাফনের কারণে মৃতের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী অসিয়ত করা কবরস্থানে শেষ নিদ্রার জায়গা হচ্ছে না। কোথাও কোথাও গণকবর হচ্ছে।
সংক্রমণের ভয়ে ক্রেন দিয়ে লাশ কবরে নামানো হচ্ছে। আবার কোথাও সংক্রমণ থেকে বাঁচতে মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। ফলে চায়নায় করোনায় মৃতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কিছু মানবিক ঘটনা হৃদয়-মনকে আলোড়িত করে। দেশের যেকোনো দুর্যোগে এগিয়ে আসে পুলিশ। গত ২৫ মার্চ ঢাকায় করোনার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে ৪৫০ জনের একটি স্পেশাল টিম গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় পুলিশ। যদি করোনা মহামারি আকার ধারণ করে এই টিমকে আক্রান্তদের হাসপাতালে আনা-নেয়া, মরদেহ সৎকারের কাজ তথা আক্রান্ত ব্যক্তির সকল দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৪৫০ জন পুলিশ সদস্যকে স্বেচ্ছায় এই টিমে যোগদানের জন্য আহ্বান করা হয়েছিল। টিমে যোগদানকারীদের তাদের পরিবারের সদস্য তথা বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে, সকল পিছুটান ভুলে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়।
এরপর এ ৪৫০ জনকে জিজ্ঞেস করা হয়, এখন বলো তোমরা কে কে এই স্পেশাল টিমে থাকতে চাও? প্রায় সাড়ে চারশত উপস্থিত ফোর্স কথা শেষ হওয়ার আগে একসঙ্গে বলে ওঠে, ‘স্যার আমি প্রস্তুত’। ইতালি প্রবাসীর ফোন পেয়ে বাড়ির বাজার করে দিয়েছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ দুপুরে পটুয়াখালী শহরের কলেজ রোড এলাকায় ওই প্রবাসীর বাড়িতে প্রবাসীর দেয়া তালিকা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন সদর থানা পুলিশের সদস্যরা।
নিজের জীবন দিয়ে অপরিচিত করোনা রোগীকে বাঁচালেন ইতালির খ্রিস্টান যাজক। ৭২ বছর বয়সী যাজক জিউসেপ বেরেরডেল্লি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু তিনি শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার কৃত্রিম যন্ত্র নিজে না নিয়ে আরেক জনকে দিয়ে দেন। তিনিও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। ইতালির লভেরা হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নিচ্ছিলেন জিউসেপ বেরেরডেল্লি। একপর্যায়ে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার জন্য কৃত্রিম যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু একই সঙ্গে তার চেয়ে তরুণ একজনের দরকার পড়ে শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার কৃত্রিম যন্ত্র। তাই তিনি নিজে ওই যন্ত্র না নিয়ে অপরিচিত করোনা রোগীকে দিয়ে দেন। তিনি তার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখার কৃত্রিম যন্ত্র অন্যজনকে দিয়ে দেওয়ার কারণে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে মারা যান।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ঢাকায় ৩০১ শয্যার একটি হাসপাতাল তৈরি করছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী আকিজ গ্রুপ। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দুই বিঘা জমিতে হাসপাতালটি তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দুই সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালটিতে রোগীদের চিকিৎসা শুরু করা যাবে। এখানে বিনামূল্যে রোগীদের চিকিৎসা দেবে আকিজ গ্রুপ। এ ছাড়াও আকিজ গ্রুপের পরিচালকেরা ব্যবসার বিভিন্ন বিভাগ থেকে নানাভাবে মানুষকে সহায়তা করছেন। তারা মাস্ক তৈরি করে দিয়েছেন। খাদ্য বিতরণ করছেন। জীবাণুনাশক বিতরণ করছেন।
সমাজের আরও কিছু হৃদয়বান মানুষ ও প্রতিষ্ঠান তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অঘোষিত লকডাউনের কারণে উপার্জনহীন মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরণ করছে। সৃজনশীল মানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন কাউখালির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পিরোজপুরের কাউখালীতে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মানুষকে ঘরে অবস্থান ও বাজারমুখী জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী গৃহস্থের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি চালু করেছেন ভ্রাম্যমাণ বাজার। আজ শুক্রবার থেকে দুটি ট্রাকে এ ভ্রাম্যমাণ বাজার চালু করা হয়েছে। একটি ট্রাকে চাল, ডালসহ নিত্য-ব্যবহার্য পণ্য আর অন্যটিতে তরকারির ভ্রাম্যমাণ বাজার গৃহস্থের দোরগোড়ায় সুলভ মূল্যে পৌঁছে দিচ্ছে এ ভ্রাম্যমাণ গাড়ি। কোন কোন বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া মওকুফ করে দিয়েছেন। মানবিকতার এসব উদাহরণগুলো মানব জনমকে সার্থক করে।
করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাহী আদেশে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছর কারাভোগরত বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি প্রদান মানবিকতার নজিরবিহীন ঘটনা। দেশ স্বাধীনের পর বিচারাধীন মামলায় আসামিদের প্যারোলে মুক্তির অনেক উদাহরণ থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত আসামির দণ্ড স্থগিতের কোনও নজির ছিল না। খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিতের ঘটনা বাংলাদেশে প্রথম নজির।
মানবিকতার পাশাপাশি করোনাকালে কিছু অমানবিক ঘটনা হৃদয়কে দারুণভাবে ব্যথিত করে। একজন এ্যাম্বুলেন্স চালকের করোনা হয়েছে সন্দেহে তাড়াইলের এলাকাবাসী তাঁকে হাসপাতাল ছেড়ে দিতে বলেন। চিকিৎসকেরা বোঝানোর চেষ্টা করেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, এমনটা নিশ্চিত নয়। তারপরও তাঁদের নিবৃত্ত করা যায়নি। একপর্যায়ে পিটিয়ে এলাকাছাড়া করার হুমকিও দেওয়া হয়। চালকের জীবন রক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকেরা। প্রতিকার পেতে বিষয়টি পুলিশ প্রশাসনের নজরে আনা হয়। কিন্তু কিছুতেই স্থানীয়দের চাপ সামলাতে পারছিল না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জীবনের ঝুঁকি টের পেয়ে যান চালকের পরিবারের সদস্যরা। শেষে জীবন রক্ষায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বাঁচে পরিবারটি। মুঠোফোনে এ্যাম্বুলেন্স চালক বলেন, ‘মরার আগেই মরে গেলাম। মানুষের ঘৃণা আর অমানবিকতা দেখে আর বাঁচতে ইচ্ছা করছে না।’ এই এ্যাম্বুলেন্স চালক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে কত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে আর আজ করোনার কারণে তার দুঃসময়ে এলাকাবাসীর কারও মনে করুণা হলো না।
রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার একটি বাসায় এক ব্যক্তির মরদেহ পড়ে আছে। কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে কেউই লাশের কাছে যাচ্ছেন না। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে পুলিশ। গত ২৬ মার্চ বিকেলে মালিবাগের চৌধুরী পাড়ার এক বাসার দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে এই ঘটনা ঘটেছে। নিহতের নাম রাজু (৩৫)। তিনি ওই বাসায় ব্যাচেলর রুমে থাকতেন। এমন আরেকটি ঘটনা ছবিসহ পত্রিকায় পাতায় দেখেছি ইতালির রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে একজন মানুষ। করোনার ভয়ে কেউ কাছে যাচ্ছে না।
অঘোষিত লকডাউনে জীবিকার তাগিদে কোথাও কোথাও সড়কে নেমেছে শ্রমজীবী মানুষ। গত ২৭ মার্চ বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাইয়েমা হাসান এর ভ্রাম্যমাণ আদালত সবজি বিক্রেতা, ভ্যানচালক ও সাইকেল আরোহী তিন বৃদ্ধকে মাস্ক না পরার কারণে কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার শাস্তি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই তার মোবাইল ফোনে এ চিত্র ধারণ করেন এবং জাতীয় তথ্য বাতায়নের ওয়েব সাইটে সে ছবি আপলোড করেন। কী অমানবিক! আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের একাধিক দলিলে উল্লেখ রয়েছে কাউকে মানব মর্যাদার প্রতি অবমাননাকর শাস্তি দেয়া যাবে না। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৫(৫) অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে যে, ‘কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাইবে না কিংবা নিষ্ঠুর, অমানুষিক বা লাঞ্ছনাকর দণ্ড দেওয়া যাইবে না কিংবা কাহারও সহিত অনুরূপ ব্যবহার করা যাইবে না।’ সাইয়েমা হাসান এর ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচার কী সংবিধানে বর্ণিত এ মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করেনি? কেবল সাইয়েমা হাসান নয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাছে নিয়োজিতদের কেউ কেউ এমন অমানবিক, অসহিষ্ণু ও অপেশাদার আচরণ করছেন।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রাস্তাঘাটে চলাচল সীমিত করার সরকারি নির্দেশ রয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, নির্দেশ বাস্তবায়নে জনগণকে নির্বিচারে পিটুনি দিতে হবে। জরুরি সেবায় যারা নিয়োজিতদেরও হেনস্তা করতে হবে। রাস্তাঘাটে চলাচল সীমিত করার সরকারি নির্দেশনার পাশাপাশি এ নির্দেশনাও আছে যে, জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং, মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সব জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
জরুরি সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের বিড়ম্বনার শিকার হতে হলে, তাদের সঙ্গে অসম্মানজনক ও বেদনাদায়ক আচরণ করা হলে জরুরি সেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষ সেবা দেওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এ ছাড়াও সরকারি নির্দেশনা মেনে যারা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র মজুদ করে নাই তাদের তো বের হতে হবে, জরুরি জিনিসগুলো কিনতে হবে, তাদেরও বাঁচতে হবে। এরপরও জনসেবকদের এমন অমানবিক আচরণ তাদের সামন্তবাদী প্রভুসুলভ মানসিকতার পরিচায়ক। এ মানসিকতার জন্যই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব কৃষক। আপনার মাইনে দেয় ঐ গরীব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ওই টাকায়। আমরা গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক। ওদের দ্বারাই আপনার সংসার চলে।’
করোনার আরেক অমানবিকতা করোনায় মরেও শান্তি নেই। লাশ দাফনে বাধা দেয়া হচ্ছে জায়গায় জায়গায়। কোন সন্দেহ নাই, মৃত ব্যক্তির শরীর থেকেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে। সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মৃতদেহ সৎকারের নির্দেশনা জারি করেছেন। তা অনুসরণ করার জন্য বলা যেতে পারে। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘মহামারীর কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত।’ (বোখারি, হাদিস: ২৮৩০) কিন্তু দাফনে বাঁধা দিয়ে শহীদি মৃতের প্রতি এমন অসম্মানজনক আচরণ অমানবিক।
করোনার সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকতে আমরা আরও সতর্ক হই। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সাময়িকভাবে ‘অসামাজিকও’ হই। তবে আমরা যেন অমানবিক না হই। কোন অজুহাতেই আমরা যেন মানবতাকে পদদলিত হতে না দেই। ইতালিয় কবির ভাষায় ‘দিন শেষে আমরা তো একই সাগরের ঢেউ’।
মো. জাকির হোসেন, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।