এ কেমন বাংলাদেশ দেখছি? যেমন বাংলাদেশের কথা শুনেছি, তার চেয়ে একদম অপরিচিত। শুধুতো অভিযোগ শুনে এসেছি। এই রাষ্ট্রকে দিয়ে কিছু হবে না। এখানকার রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক ঐক্য ভেঙ্গে গেছে। এই রাষ্ট্রের মানুষেরা একেকজন একেক বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর। হয়তো আমিও এই অভিযোগ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছি। ভেসে গেছি বেনো জলে। ভয়ে থমকে গেছি অনাগত অন্ধকার দিনের কথা ভেবে। এমন সময় বাংলাদেশের সামনে এসে যে দাঁড়ায়নি তা নয়। দশদিক ভেঙে অন্ধকার নেমে এসেছিল দেয়াল ভেঙ্গে। তারপরও আমরা জেগে উঠেছি।
আমাদের অনেক হতাশার সমুদ্রে পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু তাকে আমরা অসময়ে অস্তাচলে পাঠিয়ে দিয়েছি। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ তেমন এক লাল সূর্য ছিল। দেখিয়েছিল ভোরের আলো। সেই আলো দীর্ঘ হতে দেইনি আমরা। ভয় পেয়েছি। কারণ সেই আলোর মশাল ছিল তরুণদের হাতে। তাদের মস্তিষ্কে ছিল নতুন বাংলাদেশ গড়ার চিন্তা। চোখে স্বপ্ন সুন্দরের। কিন্তু আমরা যারা নিত্য অসুন্দরের জাল বুনি, তারা শাহবাগ কেন্দ্রিক পুরো দেশকে এক হতে দেখে ভড়কে গেলাম। মশাল মিছিল, কণ্ঠে কণ্ঠে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি দেখে কুঁকড়ে গেলাম। বুঝলাম পরাজয় আসন্ন অসুন্দরের। তাই মশালের আলো নিভিয়ে, আলোর পথের যাত্রীদের করলাম পথছাড়া। বাংলাদেশ পেছনে হাঁটতে শুরু করলো। ভোরের আনকোরা আলো আর মধ্যগগণে আসার সুযোগ পেলো না।
সূর্য, নতুন আলো অপ্রতিরোধ্য। আবার এলো নিরাপদ সড়কের শ্লোগান তুলে। পুরো দেশ এক বাক্যে স্বীকার করে নিলো, বাংলাদেশের মেরামত প্রয়োজন। একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত আসতে, দেশটির অনেক ক্ষতি করে ফেলেছি আমরা। অযত্ন, অবহেলা এবং শুধুই ভোগ-দখল করতে গিয়ে রাষ্ট্রটির জরাজীর্ণ অবস্থা। তাই রাষ্ট্রের মেরামত কাজের পক্ষে মত দিলো সবাই। শপথ নিলো দেশের সকলে মিলে। খুঁজে বের করা হলো কোথায় কোথায় মেরামত কাজ দরকার। কিন্তু না। এখানেও কোনো কোনো পক্ষের স্বার্থে চির ধরে। সব হারানোর ভয় পেয়ে বসে তাদের। তাই শুরু হয় এই সূর্যকেও মেঘে ঢেকে দেয়ার। তাই হলো। সূর্য চলে গেল কৃষ্ণ মেঘের আড়ালে।
কিন্তু মেঘের জমিন আর কতোটাই বিস্তৃত? কতোক্ষণ জলীয় বাষ্প বুকে ধরে রাখতে পারে। বৃষ্টি হয়ে তাকে ঝরে পড়তে হবেই। মেঘ কেটে গিয়ে উঠবে কনে দেখা রোদ। সেই আলোয় ঝলমল করবে প্রকৃতি। আলোকিত হবে সমাজ, রাষ্ট্র। এখন আবার ফিরে এসেছে সেই রোদ।
কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়ে বিশ্বের প্রায় দুইশটি দেশ এখন লকডাউনে, অচলই বলা যায়। মৃতের সংখ্যা ত্রিশ সহস্রাধিক। পাঁচ লাখ অতিক্রম করছে আক্রান্তের সংখ্যা। বাংলাদেশ বৈশ্বিক এই মহামারী এড়াতে পারেনি। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক নানা অসচেতনতা এবং ঘাটতি ছিল, আছে। এর মাঝেই সংক্রমণের সংখ্যা ও আতঙ্ক বাড়ছে। কিন্তু সেই আতঙ্কে কোনো ভয়াবহ শিলা খণ্ডে নিচে চাপা পড়ছে না বাংলাদেশ। কারণ আবার নতুন সূর্য উঁকি দিয়েছে। ভোরের আলো মানুষের উঠোনে, দরজায়, জানালায় পৌঁছে যাচ্ছে। অসহায়, বিপন্ন মানুষকে বলছে-একা, বিচ্ছিন্ন নয় কেউ।
সবার সঙ্গে আছে সেই রোদের আলো। এই আলো, বাংলাদেশের তরুণেরা। তরুণেরা যেখানে যেমন আছে, সেখান থেকেই মানুষের কাঁধে হাত রাখছে। বলছে-ভয় পাবে না বাংলাদেশ। কোভিড-১৯কে হারিয়ে দেয়ার অস্ত্র আমরাই।
তুষার আবদুল্লাহ, বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন