আজ পৃথিবী করোনাভাইরাসের সংক্রমণে এক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রোগীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার ও নার্সরা। সারা বাংলাদেশের মানুষ এটা দেখছে। কিন্তু এ মুহূর্তে ফার্মাসিস্টদের কর্মযজ্ঞ দৃষ্টির অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৫৭ লাখ মানুষের জন্য ঔষধ উৎপাদনে কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের দেশের ফার্মাসিস্টরা। এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে বাংলাদেশের মানুষ যখন হোম কোয়ারান্টাইন তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ফার্মাসিস্টরা কাজ করে যাচ্ছেন দেশের মানুষের জন্য। নিরাপদ ঔষধ উৎপাদনের লক্ষ্যে তারা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার ঔষধ উৎপাদন হয়। আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার ঔষধ রফতানি হয় প্রতি বছর। যা দেশের গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও দিকনির্দেশনায় উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের এসেনশিয়াল ড্রাগস বাৎসরিক প্রায় (সরকারি মূল্য) ৬০০ কোটি টাকার ঔষধ উৎপাদন করে কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে।
একজন গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট কাজ করে থাকেন ঔষধ উৎপাদনে, ঔষধের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে, কমিউনিটি ফার্মেসিতে (মডেল ফার্মেসি), হসপিটাল ফার্মাসিস্ট হিসেবে নিরাপদ ঔষধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ও ঔষধ নিয়ে গবেষণায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৬ হাজার ২০০ নিবন্ধিত ফার্মাসিস্ট রয়েছেন। তাদেরকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে, নিশ্চিত হবে ঔষধের সঠিক ও নিরাপদ ব্যবহার।
আজ আমাদের গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের দেশের সকল হাসপাতালে নিয়োগ দিলে তারাও হতে পারতো জাতীয় বীর। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে আমাদের ফার্মাসিস্টরা বিশ্ববিদ্যালয়ে হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানাচ্ছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট নিয়োগপ্রাপ্ত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রোগীদের জন্য হাসপাতালেও হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানাতে পারতো। ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্টরাও রোগীদের নিরলস সেবা দিয়ে যেত।
বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি গবেষণাগারগুলোতে ঔষধ নিয়ে গবেষণায় সরকারি দিকনির্দেশনা ও বিনিয়োগ থাকলে বাংলাদেশও করোনাভাইরাসের ঔষধ আবিষ্কারে ভূমিকা রাখতে পারতো। আমাদের ফার্মাসিস্টরা হয়তো শুধু হ্যান্ডস্যানিটাইজার তৈরিতেই সীমাবদ্ধ থাকত না।
উন্নত বিশ্বে ফার্মাসিস্ট ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা অসম্পূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে? সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি- বাংলাদেশের গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের কাজে লাগান। সরকারি হাসপাতালে গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ দিন। বিসিএসএ ফার্মাসিস্টদের কোটা রাখুন। গুরুত্ব দিন গবেষণায়। তবেই দেশের স্বাস্থ্যসেবা আরও সমৃদ্ধ হবে।
মো. আজিবুর রহমান (এম ফার্ম, এমবিএ, পিজিডি এইএম), সিনিয়র সহ সভাপতি, বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম