"কেনাকাটা করতে এসে এখন আর শান্তি পাই না। যে হারে প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে, সে হারে বেতন বাড়ছে না। এমন অস্বস্তি নিয়ে আর কত দিন চলতে হবে জানি না।" বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে কথাগুলো বলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাবেদ হাসান।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বাজারে বেড়েছে মাছের দাম, সেই সাথে বেড়েছে আলু, আদা ও রসুনের দাম। সবজির বাজার কিছুটা অপরিবর্তনীয় থাকলেও কেনাকাটা করতে এসে হিমশিম খেতে হচ্ছে নিম্ন এবং মধ্য আয়ের মানুষদের।
শ্যাম বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মাহবুব আলম বলেন, ‘মাছের বাজার আজ অনেক চড়া, যে টাকা ইনকাম করি তা দিয়ে সংসার চালাতে এমনিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য যেই হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এভাবে বাড়তে থাকলে এক সময় না খেয়ে থাকতে হবে।’
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর শ্যাম বাজার, কারওয়ান বাজার ও দয়াগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই ও কাতলা মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪৫০ টাকা। মাঝারি ও বড় চিংড়ি মাছ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-১২০০ টাকা, ছোট চিংড়ি ৮০০ টাকা, পাঙাশ মাছ ১৮০-২০০ টাকা ও পাবদা মাছ আকার ভেদে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়।
অন্যদিকে মুরগির মধ্যে ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা, সোনালি ৩০০-৩২০ টাকা ও দেশি প্রজাতির মুরগির কেজি ৪৮০-৫০০ টাকা। এছাড়াও গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। মসলা পণ্যের মধ্যে রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম আগে থেকে বাড়তি। দেশি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা ও আমদানি করা পেঁয়াজ ৬৫-৭৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে বাজারে দেশি রসুন কেজিতে ২২০-২৪০ টাকা ও আমদানি করা রসুন ২১০-২৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে রসুনের দাম কেজিতে ২০ টাকার মতো কম ছিল। এ ছাড়া দেশি আদার দামও কেজিতে ৫০ টাকার মতো বেড়েছে। গত সপ্তাহ থেকেই আলুর দাম ২-৩ টাকা করে বেড়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। বেগুনের দাম কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৭০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এইদিকে গত সপ্তাহে চালের দাম ৩-৫ টাকা বেড়ে চিকন চাল কেজি ৬০-৭৫ টাকা, মাঝারি চাল ৫২-৬০ ও মোটা চাল ৫০-৫৫ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
তবে কাঁচা মরিচের দাম কেজি প্রতি ৩০ কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ১৫০ টাকা। অন্যদিকে শসা, পটোল ও লাউয়ের দামও ৫-১০ টাকা করে কমেছে। প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, পটোল কেজি ৫০ টাকা, লাউ ৫০-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা দিন মজুর রহমত আলী বলেন, ‘বাজারে প্রায় সব ধরনের মাছের দাম বেশি। ডিমের দাম কমলেও তা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। সারাদিন কাজ করে পাই ৩০০ টাকা, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাসুম তালুকদার বলেন, ‘সবকিছুর দাম বাড়ার ফলে আমাদের মেস খরচও বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আমদের খাবার দাবারে। শেষ কবে গরুর মাংস খেয়েছি তা মনে পড়ে না। আগে সপ্তাহে ৩-৪ দিন মুরগির মাংশ খেলেও এখন সপ্তাহে ১ দিন খাচ্ছি।’
বাজার মনিটরিং করে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে এবং দ্রব্যমূল্যের দাম কামানোর জন্য সরকারে প্রতি আহবান জানিয়েছেন ক্রেতারা।