বকেয়া গ্যাস বিল চেয়ে কাতার ও শেভরন বাংলাদেশের চিঠি
গ্যাস বিল বকেয়া থাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ৭৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করার জন্য চিঠি দিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ।
গত বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) কোম্পানিটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রেসিডেন্ট এরিক এম ওয়াকার স্বাক্ষরিত চিঠি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের দফতরে জমা দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। চিঠিতে বকেয়া পরিশোধে সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
কত বকেয়া রয়েছে এ বিষয়ে শেভরন বাংলাদেশের কাছে জানতে চাওয়া হলে ম্যানেজার (মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ জাহিদুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কোম্পানির পলিসিগত কারণে ফাইন্যান্সিয়াল কোন ইস্যুতে কোন মন্তব্য করতে পারি না। চিঠি দিয়েছেন কি-না এ বিষয়েও সংবাদ মাধ্যমে তিনি কোন মন্তব্য করেন নি।
শেভরন বাংলাদেশ বকেয়ার পরিমাণ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, কোম্পানিটি সম্ভবত কমবেশি ১৫০ মিলিয়ন ডলারের মতো বিল পাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস ও কনডেনসেট সরবরাহ দিচ্ছে তাতে কোম্পানিটির মাসিক বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪০ মিলিয়ন ডলারের মতো।
বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশের বকেয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু অর্থ ছাড়ও দিয়েছে বাংলাদেশ। তারপরও কোম্পানিটির সরবরাহ করা কয়েক মাসের গ্যাসের বিল বকেয়া পড়েছে। গত ডিসেম্বরে শেভরন ইন্টারন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ক্যাসুলো বাংলাদেশ সফর করেন। ওই সফরে ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠকেও বকেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়ে বলে সূত্র জানায়।
প্রসঙ্গত, শেভরন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত জ্বালানি কোম্পানি। জ্বালানি খাতের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাদের পদচারণা রয়েছে। কোম্পানিটি বাংলাদেশের ব্লক-১২, ১৩ ও ১৪ এলাকায় গ্যাস উত্তোলন করে আসছে। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের বৃহত্তম উৎপাদক, যা মোট দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ এবং দেশীয় কনডেনসেট উৎপাদনের ৮৩ শতাংশের মতো। এরমধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। ১৩ জানুয়ারি গ্যাস ফিল্ডটি ৯৭৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দিয়েছে। এক সময় গ্যাস ফিল্ডটি থেকে ১৩০০ মিলিয়নের উপর উৎপাদন হলেও মজুদ কমে যাওয়ায় কমে আসছে উৎপাদন। এক সময়ে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়নের মতো গ্যাস উৎপাদিত হলেও ১৩ জানুয়ারি মাত্র ১৯৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে। মজুদ কমে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত কমে আসছে উৎপাদন।
অন্যদিকে বাড়ন্ত চাহিদা সামাল দিতে ২০১৮ সালে এলএনজি আমদানি শুরু করা হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে আকাশচুম্বি হয়ে পড়ে এলএনজির দাম। উচ্চমূল্যের পাশাপাশি ডলার দামও বেড়ে যাওয়ায় ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে পেট্রোবাংলা। দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও সামাল দিতে পারছে না। নতুন শিল্প ও ক্যাপটিভে যথাক্রমে ৩০ ও ৩১.৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, দেশীয় উৎস থেকে পাওয়া গ্যাসের গড় দর পড়ছে ৬.০৭ টাকার মতো। এরসঙ্গে ৮০০ মিলিয়নের মতো আমদানি করার পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৯.০৯ টাকা, তখন গড় বিক্রয়মূল্য ছিল ১১.৯১ টাকা, আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪০০ মিলিয়ন আমদানির পর গড় মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৩.৮৫ টাকা। ওই বছরে গড় বিক্রয় মূল্য ছিল ২২.৮৭ টাকা, প্রতি ঘনমিটারে লোকসান হয়েছে ৯৮ পয়সা করে। গত ৬ অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র আরও জানায়, পেট্রোবাংলার কাছে যেমন অর্থ পাওনা রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। তেমনি পাওয়ার সেক্টরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পেট্রোবাংলার বকেয়ার পরিমাণ ২৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মেঘনা গ্রুপের কাছেই প্রায় ৮০০ কোটি টাকা গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে।
উল্লেখ্য, শেভরনের পাশাপাশি কাতার সরকারও বকেয়া পরিশোধের জন্য তাগাদা দিয়েছে। জিটুজি ভিত্তিতে কাতার থেকে বছরে ৪০ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়। বর্তমানে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন বকেয়া পড়েছে বলে জানা গেছে।