ব্যাংকে নতুন টাকা নাই, গুলিস্তানে রমরমা বাণিজ্য

, অর্থনীতি

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-04-06 19:16:11

 

ঈদে ছোটদের সালামি দেবেন, এর জন্য বেসরকারি চাকরিজীবী মোতালেব হোসেনের নতুন টাকা দরকার। কিন্তু, একাধিক ব্যাংক ঘুরেও নতুন টাকা পেলেন না তিনি। ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, নতুন টাকা আসে নাই, আসলেও টাকা শেষ। বাধ্য হয়ে গুলিস্তানে এসেছেন মোতালেব হোসেন।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে নতুন টাকার জন্য গিয়েছি, কিন্তু কোথাও থেকে ব্যবস্থা করতে পারিনি। সব জায়গায় বলছে এবার নতুন টাকা আসে নাই। কেউ জানিয়েছে নতুন টাকা শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে গুলিস্তানে নতুন নোট কিনতে এসেছি।

তবে গুলিস্তানে নতুন টাকা বাজারে এসে চোখ ছানাবড়া মোতালেবের। এখানে নতুন টাকা কোন ঘাটতি নেই।  তাই তার প্রশ্ন ব্যাংকে যদি নতুন টাকা শেষ হয়, তাহলে এখানে এত নতুন টাকা কিভাবে বিক্রি হচ্ছে?


ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের বাজারে ব্যবসায়ীরা সব কিছুতে সিন্ডিকেট করে সাধারণ মানুষের কাছে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও নতুন টাকার সিন্ডিকেট করে ব্যবসায়ীদের মতো করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

পরিচয় গোপন করে বার্তা২৪.কম রাজধানীর একাধিক ব্যাংকে নতুন টাকা সংগ্রহ করার জন্য যায়। কিন্তু কোন ব্যাংক নতুন টাকা দিতে পারেনি। 

পরে বহুল পরিচিত গুলিস্তানের নতুন টাকা হাটে যায় বার্তা২৪।  সেখানে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঈদকে ঘিরে জমে উঠেছে নতুন টাকা কেনাবেচা। ব্যবসায়ীরা নতুন নোটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিভিন্ন বয়সী ক্রেতারা ভিড় করছেন নতুন টাকা নিতে। কেউ কেউ আবার পরিবারের ছোট সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে পছন্দ মতো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

দেখা গেছে, গুলিস্তান নতুন টাকার হাট থেকে দুই টাকার দু'শ টাকা এক বান্ডিল টাকা কিনতে হলে গুণতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা, পাঁচ টাকার পাঁচশত টাকার বান্ডিলে ৬৫০ টাকা। আর ১০ টাকার প্রতি বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, ২০ টাকা টাকার বান্ডিলে ৩০০ টাকা, ৫০ টাকার বান্ডিল ৪০০ টাকা, ১০০ টাকার বান্ডিলে ৩০০ টাকা এবং ২০০ টাকার বান্ডিলের জন্য অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

একই বাজারে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে এসেছেন সরকারি চাকরিজীবী ইফতেখার হোসেন। নতুন টাকা হাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বার্তা২৪. কমকে বলেন, আমি সরকারি চাকরি করি। গত সপ্তাহে দুইটা ব্যাংকে গেছি। কেউ আমাকে নতুন টাকা দেয়নি। বাধ্য হয়ে আজ গুলিস্তানে এসে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ১০ টাকার দুই বান্ডেল টাকা সংগ্রহ করেছি।


এই হাটে দীর্ঘ ১১ বছর নতুন ও ছেড়া টাকার ব্যবসা করে কালাম মিয়া। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, এবার মার্কেটের চাহিদা তুলনায় নতুন টাকার সরবারহ অনেক কম। তাই গত ঈদের চেয়েও আমাদের বান্ডেল প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশী দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্য যেকোন বারের চেয়েও এবার নতুন টাকা নেওয়ার ক্রেতা অনেক বেশি।

ব্যাংকের নতুন টাকা গ্রাহকের কাছে না গিয়ে কালোবাজারে গিয়ে অতিরিক্ত কিভাবে বিক্রি তা জানার জন্য গুলিস্তান এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা নজর রাখে বার্তা২৪.কম। এক সেলিম নামে একজন ব্যাগ ভর্তি করে ২০, ৫০, ও ১০০ টাকা আট লাখ টাকার বান্ডেল নিয়ে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতে দেখা যায়।

বার্তা২৪ কমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা তাদের অফিস সহকারীর মাধ্যমে আমাদের কাছে টাকা বিক্রি করে। আমরা পরে এখানে বিক্রি করি। আমাদের প্রতি বান্ডেলে ১৫ থেকে ২০ টাকা লাভ থাকে। বান্ডেলে যে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে তার এক তৃতীয়াংশ লাভ করে ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এদিকে সেলিমের কথা সূত্র ধরে মতিঝিল বাংলাদেশের ব্যাংকের প্রবেশ মুখে দেখা যায়, সেখানে ৩০ থেকে ৪০ জন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী নতুন টাকার পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছেন। কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা জানান, বাংলাদেশে  ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারির মাধ্যমে অতিরিক্ত দাম দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করেন। তাদের কেনা দামের উপর ভিত্তি করে হাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা লাভ করে এই টাকা খুচরা তারা বিক্রি করেন।

এই বিষয়ে কথা বলা জন্য বাংলাদেশের ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হকের সাথে একাধিকবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

এ সম্পর্কিত আরও খবর