পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ল্যান্ডকো নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জমি ক্রয় ও জোরপূর্বক দখলের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে গড়া ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদল ঘুরে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
রোববার (২১ এপ্রিল) ভার্চুয়াল এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক) ও বিডব্লিউজিইডি।
সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, কৃষি জমিতে কোন স্থাপনা করার সুযোগ নেই। ল্যান্ডকো এখানে মৌসুমী কৃষি খামারের সাইনবোর্ড কিনেছে। তবে ভূমি অফিস বলছে ওই কোম্পানির নামে কোন জমি নেই। জমি কিনেছেন ওসমান কায়সার চৌধুরীর সন্তান নীলাঞ্জনা চৌধুরী ও দীপ্ত কায়সার চৌধুরী। ওসমান কায়সার চৌধুরী বেক্সিমকো গ্রুপের সিইও হিসেবে রয়েছেন। তাদের জন্য ১২.৫ একর জমি নামজারি করা হয়েছে।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয় সাংবাদিক সম্মেলনে। তেঁতুলিয়া উপজেলার শেখগছ গ্রামে পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নাম করে জমি দখলের অভিযোগ করে আসছেন স্থানীয়রা। জোরপূর্বক জমি দখল করতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে কয়েক দফায় সংঘাত হয়েছে। কিছু মামলাও চলমান রয়েছে।
ক্লিন ক্যাম্পেইন সমন্বয়কারী এসকেএমডি বহলুল আলম বলেন, জমি নামজারি হয়েছে ১২,৫ একর, আর ৭০ একরের মতো জমি রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
ল্যান্ডকো নামে কোন কোম্পানির অস্তিত্ব আমরা কোথাও দেখতে পাইনি। এটি একটি বায়বীয় কোম্পানি বলে জানায় প্রতিনিধিদল।
রেজওয়ানা হাসান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, আগে করতোয়া সোলারের নামে যে ১৫০ একর জমি কেনার পারমিশন দিয়েছিলেন, সেটি এখন বাতিল করবেন। দুই ফসলি কোন জমিতে সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্প করতে পারবেন না। তার অনুমোদন আপনি দিতে পারেন না।
তেঁতুলিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম বলেন, করতোয়া সোলার পাওয়ার প্লান্ট নামে জমি কেনার অনুমতি নেয়। অনেক আগেই তাদের অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়েছে।
দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার খুলনা ব্যুরো চিফ গৌরাঙ্গ নন্দী ছিলেন ওই টিমে। তিনি বলেন, তেঁতুলিয়ায় সংঘাতময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ল্যান্ডকো জোরপূর্বক ১০০ একর জমির দখল নেয়। তারা দাবি করে ২৩৭ একর জমি কিনেছে। ২০১৭ সালে জমি কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে। মধ্যস্বত্বভোগীরা কাগজ নিয়েছেন, কমবেশি টাকা দিয়েছেন। তবে বিক্রেতারা অভিযোগ করেছে, এক একর বিক্রি করলেও তারা দাবি করেছে ১০ একর। জমি কেনার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব ছিল। একটি ট্যাপের মধ্যে দিয়ে তারা জমি কিনেছেন।
প্রচন্ড রকমের অস্বচ্ছতা ছিল, তারপর তারা জমি দখল করতে যান। যারা বিক্রি করেননি তারা বাঁধা দিতে গেছেন। ইউএনও একটি তদন্ত করেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। যদিও এখনও রিপোর্ট দেওয়া হয়নি। মৌসুমী কৃষি খামারের সাইনবোর্ড সেখানে দেখতে পেয়েছি। সেটেলমেন্ট অফিসে গিয়ে দেখেছি আরেক নাম, বলেন তিনি।
স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত। এতে ভুক্তভোগী, স্থানীয় প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি সরকারের প্রতিনিধি থাকা উচিত। এরমাধ্যমে প্রকল্প নিয়ে যে রাখঢাক রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার হওয়া উচিত বলে মনে করেন গৌরাঙ্গ নন্দী।
ডেভেলপমেন্ট কনসালটেন্ট মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ বলেন, ভয়ভীতি পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা গেলাম তখন অনেকে মোটরবাইক নিয়ে এলেন যারা ছিলেন কোম্পানির লোকজন। মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া হয়েছে, প্রশাসনও কোম্পানির পক্ষে কাজ করেছেন।
টিমের সদস্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালেয় শিক্ষক বায়েজিদ খান বলেন, তেঁতুলিয়ায় ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ল্যান্ডকো যাদের মাধ্যমে জমি কেনে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তারা বলতে চায় জমি বিক্রেতারা বেশি অপরাধী।
একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন ভাইয়ের মোট জমি ১১ একর। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১১ একর করে মোট ৩৩ একর জমি কেনা দেখানো হচ্ছে।
মিজানুর রহমান ১ একর জমি বিক্রি করেছেন, তার ৪ একর জমি দখল করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তিনি ২ একর ফেরত পেয়েছেন, আর ১ একর তারা জবরদখল করে রেখেছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. তানজিউল ইসলাম ছিলেন ওই টিমের সদস্য। তিনি বলেন, কৃষকরা ল্যান্ডকো র বিরুদ্ধে জোরপূর্বক জমি দখলের অভিযোগ তোলেন। একজন বিধবা মহিলা ঘর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ করেন। বিধবার ভাই জমি বিক্রি করেছেন, সেই জমি দখল করতে এসে তার ঘরও ভেঙে দিয়েছে। কৃষকের ফসল তারা নষ্ট করে ফেলেছেন।
তেঁতুলিয়া থানার ওসি ও ইউএনওর সঙ্গে কথা হয়। ইউএনও বেশ চতুরতার সঙ্গে জবাব দিয়েছেন। কোম্পানি যে দাবি করেছে তার চেয়ে অনেক কম জমি কিনেছে বলে জানান তিনি।