আমে আমে সয়লাব সাতক্ষীরার বড় বাজার!
গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, গোলাপখাস, সরিষাখাসের ছড়াছড়ি! সকাল হতেই গাড়িভর্তি আমের ভ্যান, ইঞ্জিন ভ্যানের লম্বা লাইন। সাতক্ষীরার সকালের বাজারে আম আসায় এক চিমটি জায়গাও নেই সেখানে। আমে আমে সয়লাব! যেদিকে তাকানো যাবে, সেদিকেই আম আর আম! ভৌগোলিক অবস্থার কারণে আগেভাগে বাজারে আসে সাতক্ষীরার আম।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সাতক্ষীরা বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা ডেনাইট কলেজ মোড় থেকে শুরু করে বড় বাজার পর্যন্ত বড় লম্বা লাইন। আমের গাড়ি ঢুকছে আর বের হচ্ছে। তবে যেন লাইন আর শেষ হচ্ছে না!
এদিকে, একে একে চলছে, আমের বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে দর কষাকষি। গোবিন্দভোগ ২ হাজার ৭শ থেকে ২ হাজার ৮শ টাকা মণ, গোপালভোগ ২ হাজার ৫শ থেকে ২ হাজার ৬শ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে অনেকেই বলছেন, আমের সাইজ এবং রঙ অনুযায়ী দামদর করা হচ্ছে। যে আমের সাইজ অনেক ভালো, তার দর বেশি হচ্ছে।
এদিকে, আমের মৌসুমে সাতক্ষীরার সুমিষ্ট আম ঢাকাসহ ঢাকার বাইরে কুরিয়ারে করে সবার ঘরে পৌঁছে দিতে আম নিয়ে কাজ করছেন অনেক যুব উদ্যোক্তা।
তাদের মধ্যে একজন অপূর্ব রায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর আমরা এই সময় আম নিয়ে কাজ করি। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াতে আমের দামদর নিয়ে পোস্ট করি এবং মার্কেটিং করি। তারপর ক্রেতা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা আম তাদের ঘরে পৌঁছে দিই। আমরা শুধু মাধ্যম হয়ে কাজ করি, যার ফলে আমাদের কিছু লাভ থাকে। এই সময়টা সাতক্ষীরাসহ বাইরের অনেক উদ্যোক্তা এখানে অবস্থান করে অনলাইনে আমের ব্যবসা করেন।
আম কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরার আম মানে ব্র্যান্ড! দেশের অন্য জায়গার আমের থেকে সাতক্ষীরার আম সুমিষ্ট এবং স্বাদে ভরপুর। আম খেলে যাচাই করা যায়, এটা সাতক্ষীরার আম! সাতক্ষীরার আম দেশ ছাড়িয়ে প্রতিবছর বিদেশে রফতানি হচ্ছে। তাছাড়া এই আমের কদরও অনেক বেশি রাজধানী ঢাকাতে।
বাগান চাষি সাব্বির মোড়ল বলেন, আজকের আমের দামটা আগের দিনের তুলনায় বেশি। কোনদিন দাম বেশি হবে, কোনদিন কমবে, এটা আগেভাগে বলা যায় না। তবে এবছর আমের দাম অনেকটা বেশি আগের বছরের তুলনায়; যার ফলে এবছর আম বাগান থেকে পুষিয়ে নিতে পারবো।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২শ ৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬শ ৫৮ হেক্টর, তালায় ৭শ ১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩শ ৮০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮শ ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১শ ৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১শ ৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে।
জেলায় সরকারি তালিকাভুক্ত ৫ হাজার ২শ ৯৯টি আমবাগান ও ১৩ হাজার ১শ চাষি রয়েছেন। সবমিলে ৪ হাজার ১শ ১৮ হেক্টর জমিতে আম আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাতক্ষীরার উপপরিচালক কৃষিবিদ সাইফুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কয়েকটি জাতের আম দিয়ে মে মাসের ৯ তারিখ থেকে সাতক্ষীরায় আম সংগ্রহ শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে ২২ মে হিমসাগর, ২৯ মে ল্যাংড়া ও ১০ জুন আম্রপালী আম সংগ্রহ করা হবে। মনে রাখতে হবে, গাছের সব আম একসঙ্গে পাকে না। সুতরাং আমের রং আসার আগে না-পাড়ার জন্য অনুরোধ জানান তিনি।