তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে ১০০ কূপ খনন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন বলে বার্তা২৪কমকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়ার আগে থেকেই আমরা কাজগুলো এগিয়ে রেখেছিলাম। যাতে দ্রুত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) করা যায় সে বিষয়ে কাজ এগিয়ে রাখা হয়েছে। আমরা সময় ও অর্থ সাশ্রয় করার জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগ এড়াতে চাইছি। একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে কাজগুলো করতে চাচ্ছি, যেখানে পেট্রোবাংলার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞরা যুক্ত থাকবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কনসালটেন্ট নিয়োগ প্রক্রিয়া খুবই দীর্ঘ প্রক্রিয়া, আবার অনেক ব্যয়বহুল। কনসালটেন্টের মাধ্যমে যে কাজ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা খরচ হবে। একই কাজ আমরা নামমাত্র মূল্য ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় সম্পন্ন করতে পারবো। কনসালটেন্ট যে কাজ করতে কয়েকমাস সময় নেবে আমরা সেই কাজ ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে পারবো।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, পেট্রোবাংলা কূপ খনন করবে সেই কূপে গ্যাস পাওয়া যেতে পারে আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। যেখানে শতভাগ ফেল করার সম্ভাবনা থাকে সেখানে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত না। পেট্রোবাংলার কাজের ধরণ পুরোপুরি ভিন্ন বিধায় সেইভাবে কাজ করতে দেওয়া উচিত। তাহলেই দেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে গতি আসবে।
বর্তমানে ৪৮ কূপ খননের একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া ১০০ কূপ খনন প্রকল্প ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হবে। এতে ২০ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেওয়া হবে ৭ হাজার কোটি টাকা। সরকারের কাছে প্রত্যেক বছরে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা করে অর্থায়ন চাওয়া হয়েছে।
দেশে গ্যাস সংকটের জন্য অনুসন্ধান স্থবিরতাকেই দায়ী করে আসছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। পেট্রোবাংলার কয়েক দশকের ঢিলেমির কারণে সমালোচনায় মুখর ছিলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তবে সেই দিন এখন বদলে যেতে শুরু করেছে। পেট্রোবাংলার খোলনলচে বদলে দিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। একদিকে যেমন গতিময় হয়েছে, অন্যদিকে নতুন মাত্রাও যুক্ত হয়েছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে।
এতদিন তেল-গ্যাস অনুসন্ধান একটি নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। আরও ছোট করে বলতে গেলে সুরমা বেসিন তথা, সিলেট থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী এবং ভোলার মধ্যে আটকে ছিল। অন্যান্য এলাকায় কিছু অনুসন্ধান কার্যক্রম হলেও তার পরিমাণ নগণ্য বলাই যায়। সেখানেও আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে পেট্রোবাংলা।
বাংলাদেশ ভূ-খণ্ডে ১১২ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ৯৯টি। আর ৩ বছরে ৬৯টি কূপ খনন করতে চায় পেট্রোবাংলা। একে অনেকে উচ্চাভিলাষী মনে করলেও খুবই জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, একটি কূপে গ্যাস পাওয়া না গেলে হৈচৈ শুরু করলে চলবে না। ১০টির মধ্যে ৮টি ড্রাই হলে ফেলে আসবো তাহলে সম্ভব না। রাজস্থানে ইউনোকল টানা ১৩টি কূপ খনন করে ড্রাই পায়। এরপর কোম্পানির সদরদফতর বলেছিল আর কূপ খনন না করতে, কিন্তু জিওলজিস্ট অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চৌদ্দ নম্বর কূপ খনন করে ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বড় খনি আবিষ্কার করেছে।
পেট্রোবাংলার ১০০ কূপ খনন প্রকল্প সংক্রান্ত সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেছিলেন, ২৫টি কূপ খনন করে যদি ব্যর্থ হন, আর ছাব্বিশ নম্বর কূপে গিয়ে যদি গ্যাস পাওয়া যায়, তার দাম অনেক বেশি। খরচের কয়েকগুণ উঠে আসবে।
ওই অনুষ্ঠানে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমরা অন্ধকার যুগ থেকে বের করে এনেছি। কূপ ফেল করলে আমি চেয়ারম্যান দায় গ্রহণ করবো। কথা দিচ্ছি কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা কিংবা তদন্ত কমিটি হবে না। সাফল্য পেলে সবার আর ফেল করলে দায়িত্ব আমি মাথা পেতে নেবো।
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানের এমন ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সাহসের সঞ্চার করেছে। যে কারণে বাস্তবিক অর্থেই গতিতে ফিরেছে পেট্রোবাংলায়।