বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) অচলাবস্থা দূর হয়নি। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পদে থাকতে অনড়, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পদত্যাগের দাবিতে সোচ্চার। আল্টিমেটামের সময় বাড়িয়ে ১৫ আগস্ট এবং ১৮ আগস্ট থেকে কর্মবিরতি ও অসহযোগের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৪ আগস্ট অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। এতে কমিশনের নানা রকম অনিয়ম ও অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌথসভায় কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। পদত্যাগ না করলে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
কিছু বিষয় নিয়ে অনেকদিন ধরেই বিইআরসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছিল। কমিশনের শুরু থেকে সম্মানি ভাতা ও এনার্জি ভাতা দিয়ে আসলেও ২০২৩ সালে বর্তমান কমিশন এসে বন্ধ করে দেয়। বিদ্যুতের কোম্পানিতে কাজ করা কর্মকর্তারা যেভাবে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বিদ্যুৎ ফ্রি পান, তেমনি বিইআরসির স্টাফদের মাসে ২৫০০ টাকা এনার্জি ভাতা দেওয়া হতো। আবার কমিশনে যোগ্য কর্মকর্তা থাকলেও পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ নিয়েও রয়েছে চরম অসন্তোষ।
কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বর্তমান কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে পরিচিত। তাদের নিয়োগও আইনসিদ্ধ হয়নি। নিয়োগের ক্ষেত্রে কমিশনের আইন মানা হয়নি। কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের অনৈতিক সব নির্দেশনা ফলো করতে গিয়ে কমিশনকে মানুষের কাছে ছোট করেছেন। সব আদেশ দেওয়া হয় কোম্পানির পক্ষে যেভাবে সরকার চান। এতে ভোক্তাদের স্বার্থ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে মানুষের আস্থা হারিয়েছে কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে বিইআরসির সদস্য (বিদ্যুৎ) আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, পদত্যাগের আল্টিমেটাম বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না। আমি শুনেছিলাম তারা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করছেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা যদি আমার পদত্যাগ চান তাহলে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
কমিশনের চেয়ারম্যান নুরুল আমিনকে অফিসে দেখা যায়নি। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দাবি দাওয়া নিয়ে সরব ছিলেন। রোববারের মধ্যে কিছু একটা করবেন বলে আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু তা না করে ১২ আগস্ট (সোমবার) থেকে ৩ দিনের ছুটি নিয়ে অফিসে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বিইআরসির চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমি অসুস্থতাজনিত কারণে ছুটি নিয়েছি। গত পরশু (১১ আগস্ট) অফিস গিয়েছিলাম তারা এনার্জি ভাতা ও বিশেষ ভাতা নিয়ে কথা বলেছে। অর্থমন্ত্রণালয় বলেছে এনার্জি ভাতা দেওয়া যাবে না। আবার বিশেষ ভাতা গণহারে বেসিকের সমান দেওয়া যাবে না। ৩৩ বিধি অনুযায়ী যারা ভালো কাজ করবে, তাদেরকে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
পদত্যাগ দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রণালয় দেখবে, এখনই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধাবিচারিক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গঠিত হয়। গ্যাস ও বিদ্যুতের বিতরণ কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা এবং ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গঠিত বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১১টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আর ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আইনে সকল ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়ার প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি।
২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের সিদ্ধান্তে কার্যত বেকার হয়ে পড়েছে আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠানটি। এখন ক্লিনিক্যালি ডেড বলা চলে। এরমাধ্যমে ভয়াবহ শূন্যতা তৈরি করেছে। বিইআরসি গণশুনানির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করায় ইউটিলিটিগুলোর নানা রকম অসঙ্গতি সামনে আসতো। এতে করে তাদের ওপর এক ধরণের চাপ তৈরি হয়, দিনে দিনে একটি কালচারে পরিণত হতে যাচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়াকে গলাটিপে হত্যা করছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তের পর এখন আবার বিইআরসিকে কার্যকর দেখতে চান সংশ্লিষ্টরা।