সস্তা দরে ভালো কোম্পানির শেয়ার থাকার পরও টালামাটাল পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগে ধস নেমেছে। গত ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত টানা আট মাস দরপতনের ফলে বিদেশিরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন। আর তাতে বিদেশি বিনিয়োগে ধস নেমেছে বলে মনে করেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গেল অক্টোবর মাসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ক্ষুদ্র, বড়, প্রাতিষ্ঠানিক সর্বপরি দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনা-বেচা বাবদ লেনদেন হয়েছে ৭ হাজার ১ কোটি ৮৩ লাখ ১১ হাজার ৭৬ টাকা। তার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫৬০ কোটি ৯২ লাখ ২৮ হাজার ৪৮৬ টাকা। যা মোট লেনদেনের ১২ দশমিক ৪৮ শতাংশ।
এর মধ্যে আলোচিত অক্টোবর মাসে বিদেশি ও প্রবাসীরা ২৩১ কোটি ৯৯ লাখ ৭২ হাজার ১০২ টাকার শেয়ার কেনার পরিবর্তে ৩২৮ কোটি ৯২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮৪ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। অর্থাৎ ৯৬ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ টাকার শেয়ার বেশি বিক্রি করেছেন।
তার আগের মাস সেপ্টেম্বরে ২৫৭ কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৪৮০ টাকার শেয়ার কেনার পবিরর্তে শেয়ার বিক্রি করেছেন ৩১৮ কোটি ১৪ লাখ ২৮ হাজার ৭৮৮ টাকার।
একইভাবে আগস্ট মাসে ১৭৬ কোটি ৭৮ লাখ ৩ হাজার ৪০৮ টাকার শেয়ার কেনার পরিবর্তে বিক্রি করেছেন ২৭৯ কোটি ৩১ লাখ ৮৪ হাজার ৯১১ টাকার। বাজারের এ চিত্র চলতি বছরের মার্চ থেকেই। ফলে বিদেশি ও প্রবাসীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো আশ্বাসেই থামছে না পুঁজিবাজারের দরপতন। তাইতো বাজারে দিন দিন আস্থা ও তারল্য সংকট প্রকট হচ্ছে। ফলে বিষন্ন মনে দেশি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিদেশিরাও শেয়ার বিক্রি করে চলে যাচ্ছেন। তারা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের আশ্বাস এবং বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিশেষ উদ্যোগের ওপরও আস্থা রাখতে পারছেন না।
ডিএসইর তথ্য মতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রবাসী ও বিদেশিদের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৮১৫ কোটি ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪৯৫ টাকা। এর মধ্যে সেই মাসে বিদেশিরা ১৭৫ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৩৩৫ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। এরপরের মাস ফেব্রুয়ারিতেও ৩২৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৭ হাজার ১১০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন তারা। কিন্তু তারপর অর্থাৎ মার্চ মাস থেকে চলা দরপতনের ফলে বিদেশিরা শেয়ার কেনার পরিবর্তে বিক্রি শুরু করেন। মার্চ মাসে ১২৩ কোটি ৭০ লাখ ৮৮ হাজার, এপ্রিল মাসে ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার, মে মাসে ৬৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৫ হাজার, জুন মাসে ১০ কোটি ৫২ লাখ ১ হাজার, জুলাই মাসে ১৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৮ হাজার, আগস্ট মাসে ১০২ কোটি ৫৩ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী বলেন, তিন কারণে বিদেশি বিনিয়োকারীরা সাইড লাইনে আছেন। তার প্রথম কারণ হচ্ছে-বকেয়া পাওনা নিয়ে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সেটা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা সংকট তৈরি হয়েছে।
দ্বিতীয়ত বাজারে গুজব রয়েছে, টাকার মূল্য কমে যাবে। অর্থাৎ ডলারের দাম কমছে। তার মানে হচ্ছে বিদেশিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এছাড়াও বাজার দীর্ঘ সময় ধরে নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে। এসবের ফলে বাজার থেকে বিদেশিরা সাইড লাইনে আছেন। যা শেয়ার ছিল, তা বিক্রি করে তারা চলে গেছেন বলে মনে করেন তিনি।