গ্যাস চুরির দায়ে ধরা সানজানা ফেব্রিক্স লিমিটেড

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগে লোক দেখানোর জন্য চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতো তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। আর রাঘব বোয়ালদের সঙ্গে আঁতাতের বিষয়টি ছিল অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। এতে করে একদিকে তিতাসের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা সুবিধা নিতেন, অন্যদিকে অসাধু শিল্পমালিকরা পুকুর চুরিতে মগ্ন থাকতেন।

গোপন আঁতাতের মাধ্যমে মাসে শত শত কোটি টাকার গ্যাস চুরি করে সাবাড় করে দিতেন কেউ কেউ। যার কিয়দংশ ঢালতো তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের পেছনে। আবার কখনও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন অবৈধ সিন্ডিকেট।

বিজ্ঞাপন

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পরিবর্তনের পর সেই ধারা বদলে যেতে শুরু করেছে। কয়েক মাস ধরে রাঘববোয়ালদের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি। চলতি সপ্তাহেও কয়েকজন রাঘববোয়ালকে পাকড়াও করেছে তিতাস গ্যাস।

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের দুপ্তারা এলাকায় অবস্থিত সানজানা ফেব্রিক্স লিমিটেডে অভিযান চালিয়ে নজিরবিহীন গ্যাস চুরির (মিটার টেম্পারিং) ঘটনা উদঘাটন করেছে। এশিয়াটিক গ্রুপের ওই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস চুরি করে আসছিল বলে তিতাসের অভিযানে ধরা পড়েছে। মিটার ইনডেক্সে স্কু খোলার চিত্র পেয়েছে টিম।

বিজ্ঞাপন

ভিজিল্যান্স সাউথ বিভাগের ডিএম আলী নওরোজ রাহাত ওই অভিযান পরিচালনা করেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মিটারের সিকিউরিটি পেপার সিল (নম্বর এম০৭৬৭৪২৩, এম০৭৪২৪) প্রতিস্থাপিত ও মেটাল ভিন্ন রঙয়ের, মূলতার সিল নকল পরিলক্ষিত হয়। মিটারে অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রমাণ পাওয়ায় ক্যাপটিভের গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

কোম্পানিটি এবারই প্রথম না, আগেও দুইবার অনিয়মের কারণে শাস্তিভোগ করেছেন, কিন্তু সংশোধন হননি। বরং ভিজিল্যান্স টিমের ওপর হুমকি ধামকি প্রয়োগ করেন। এতে কাজ না হওয়ায় বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিবকে ব্যবহার করেন। ওই উপসচিব কয়েক দফায় তিতাস গ্যাসে ফোন দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করার তদবির করেন। ওই উপসচিব উপদেষ্টার নাম ব্যবহার করে হরহামেশা তদবির করে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। তবে তার কথায় কান দেয়নি তিতাস গ্যাস।

এখানে সাহস হিসেবে কাজ করছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবীর খানের ঘোষণা। তিনি বলেছেন, মিটার টেম্পারিং ও গ্যাস চুরির ক্ষেত্রে কোন রকম তদবির সহ্য করা হবে না।

অন্যদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকারও গ্যাস চুরি ঠেকাতে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এর মাধ্যমে গ্যাসের সামগ্রিক সিস্টেম লস অনেকটা কমে এসেছে।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে শাহনেওয়াজ পারভেজ দায়িত্ব পাওয়ার পর গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে জোরালো অভিযান দেখা যাচ্ছে। সেপ্টেম্বর (২০২৪) থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ১১৪টি শিল্প, ৬৯টি বাণিজ্যিক ও ১১৩৫১ আবাসিকের অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। ওইসব উচ্ছেদের ফলে দৈনিক ৮৫ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৫ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪০ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

শাহনেওয়াজ পারভেজ বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, প্রত্যেক দিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এখানে কারো কোন পরিচয় বিবেচ্য হচ্ছে না। এতে ফলাফলও পাচ্ছি, অনেক অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। প্রত্যেক এলাকায় টিম করে দেওয়া হয়েছে তারা অভিযান পরিচালনা করছেন। আমরা গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করছি, তারা যেনো তথ্য দিয়ে সহায়তা করেন।