বিজয় দিবস উপলক্ষে একদিন ছুটি থাকায় বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ার বাজারে লেনদেন হয়েছে মাত্র চার দিন। এর মধ্যে সূচক একদিন বাড়লেও কমেছে তিনদিনই। এ নিয়ে ডিসেম্বর মাসে দেশের দুই পুঁজিবাজারে টানা তিন সপ্তাহেই দরপতন হলো।
আলোচিত এই সপ্তাহে সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেন ও বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দাম। আর এতে পৌনে ২৬ লাখ বিনিয়োগকারীদের পুঁজি অর্থাৎ বাজারে মূলধন কমেছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা।
এর মধ্যে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৯২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৮ টাকা। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে ৪ হাজার ৪৮৩ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার টাকা।
এর আগের সপ্তাহে দুই শেয়ার বাজারে কমেছিলো ১৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। সব মিলে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার পুঁজি উধাও হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে সরকার মহলের অতি আশ্বাসের পাশাপাশি ডিএসইর কারিগরি ত্রুটির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে একটি চক্র। আর তাতে পুঁজিবাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আস্থার সংকট আরও বেড়েছে। এই অবস্থায় চরম হতাশায় পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।
তবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, 'তিন কারণে পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'প্রথমে দরপতন শুরু হয় এনবিআর চেয়ারম্যান বললো ইনভেস্ট করতে হলে টিআইএন নম্বর লাগবে। এরপর যখন আমরা তার ভুল ধরিয়ে দিলাম তারপরে এটা সংশোধন করা হলো। দুই তিনদিন না যেতেই গ্রামীণফোনের সঙ্গে বিটিআরসির ঝামেলা শুরু হল। এটা শুধুমাত্র বিটিআরসি এবং গ্রামীণফোনের ক্ষতি করেনি। মার্কেটের গঠনতন্ত্র ধ্বংস করেছে। কারণ বিদেশিরা যখন আসে তখন ফান্ডামেন্টাল শেয়ার দেখে। গ্রামীণফোনের পাশাপাশি বিদেশিরা অলিম্পিক, ইউনাইটেড পাওয়ার এবং স্কয়ার ফার্মার শেয়ার কিনেছে।
পাশাপাশি সম্প্রতি আরেকটা আওয়াজ মার্কেটে চলছে যে টাকার অবমূল্যায়ন হবে। আজকে অর্থমন্ত্রী এটা পরিষ্কার করে দিয়েছেন বাংলাদেশে অবমূল্যায়ন হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, টাকার অবমূল্যায়ন করবেন না। অবমূল্যায়ন করলে এক্সপোর্টাররা লাভবান হবে কিন্তু দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাবে। এই আতঙ্কে বিদেশিরা তাদের শেয়ার বিক্রি করছে। তারা গ্রামীণফোনের সঙ্গে স্কয়ার ফার্মা, ইউনাইটেড পাওয়ার, বিএটিবিসি বিক্রি করছে। শুধুমাত্র গ্রামীণফোন আর বিএটিবিসি বিক্রি করার ফলে বিগত দুই মাসে সূচক কমেছে ১৭৪ পয়েন্ট পড়েছে।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করলে মার্কেট প্রেসার নিতে পারে না। বিদেশি যে হাউজ থেকে বিক্রি করে, বড় বড় ইনডেক্সের ওপর তার প্রভাব পড়ে। এতে যত শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারী রয়েছে তারা প্রভাবিত হয়। একটা দেখে আরেকটা প্রভাবিত হয়। এটা সাইকেলের মতো একটা চেইন হিসেবে কাজ করে।
আলোচিত সপ্তাহে (১৫ ডিসেম্বর - ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ডিএসইর প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৫৭ দশমকি ৬১ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৪৫৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। প্রধান সূচকের পাশাপাশি ডিএস-৩০ সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৩৪ পয়েন্ট ১ হাজার ৫১৩ পয়েন্ট এবং ডিএসইএক্স সূচক ১৯ পয়েন্ট কমে ৯৯৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ১১১টির কমেছে ২০৮টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছিলো ৬৪টির, কমেছিলো ২৭৭টির, আর অপরিবর্তিত ছিল ১৫টি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
সবমিলে বিদায়ী সপ্তাহে শেয়ার কেনাবেচা বাবদ ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৮ কোটি ৮৯ লাখ ২২ হাজার ৬২৬ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৭৩ কোটি ৯৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭০৪ টাকা। যা টাকার অংকে আগের সপ্তাহের চেয়ে ৪৫৫কোটি ৬ লাখ ৫৪ হাজার ৭৮ টাকা কম। শতাংশের হিসেবে ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ কম।
গত সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ২০২ পয়েন্ট কমে ১৩ হাজার ৫৩১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ৮৭টির, কমেছে ১৭১টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩২টি কোম্পানির শেয়ার। আর তাতে সিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৬৫ কোটি ৮১ লাখ ৫১ হাজার ৫৫৭ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ১০৪ কোটি ১২ লাখ ১৫ হাজার ৪৭ টাকা।