ছেলের এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মামলা-তদন্ত চলার মধ্যেই চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথকে বদলি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সরকারি কলেজ-২ শাখার উপসচিব চৌধুরী সামিয়া ইয়াসমীনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এই কর্মকর্তাকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে বদলি করার কথা জানানো হয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে শিক্ষাবোর্ডের নতুন সচিব হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিপদপ্তর, ঢাকার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অধ্যাপক আমিরুল মোস্তফাকে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নারায়ন চন্দ্র নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে বেশ কয়েকবছর ধরে নানা পদে দায়িত্বে ছিলেন। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেন। গত বছরের ১৯ অক্টোবর তিনি সচিব পদে নিয়োগ পান। পাশাপাশি শিক্ষাবোর্ডের নিয়মিত চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতে বেশ কয়েকমাস ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেন। প্রজ্ঞাপনে আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে দুজনকে অবমুক্ত হয়ে নতুন পদে যোগদান করতে বলা হয়েছে। অবশ্য প্রজ্ঞাপনে নারায়ন চন্দ্র নাথকে কেন বদলি করা হয়েছে, সেটি উল্লেখ করা হয়নি।
তবে গত একবছর ধরে শিক্ষাবোর্ডেরই আরেকটি পক্ষের ‘রোষানলে’ ছিলেন নারায়ন চন্দ্র নাথ। যার শুরু গত বছরের শেষের দিকে। গত বছর নারায়ন চন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেব নাথ গতবারের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। তবে তিনি একটি বিষয়ে জিপিএ-৫ পাননি। সেজন্য সচিবের পরিবার পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করতে চায়। কিন্তু পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গিয়ে দেখতে পায়, কে বা কারা আগেই নক্ষত্র দেব নাথের ছয় বিষয়ের ১২টি পত্রের আবেদন করে ফেলেছেন।
বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় সচিবের স্ত্রী বনশ্রী নাথ পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনকারীকে শনাক্ত ও আইনি প্রতিকার চেয়ে গত বছরের ৪ ডিসেম্বর পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরে এ নিয়ে তদন্তে নামে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীমের মোবাইল ফোন নম্বর রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে নক্ষত্র দেব নাথের নামে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনটি করা হয়েছিল। বিষয়টি উল্লেখ করে গত ১৫ জানুয়ারি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয় পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।
এই ঘটনায় শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিব আবদুল আলীম ও চট্টগ্রাম কলেজের সাবেক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বোর্ডের বর্তমান সচিব নারায়ন চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী দেবনাথ। ইদ্রিসকেও আসামি করা হয়েছে। কারণ, তিনি অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেই বক্তব্যগুলো বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর বলে অভিযোগ করেন নারায়ন চন্দ্র নাথ।
এদিকে, সচিবের ছেলের ফলাফল সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও অর্থাৎ একই বিষয়ে একটি সাইবার ট্রাইব্যুনাল মামলার ফৌজদারি মামলার তদন্ত এবং অন্যটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশক্রমে তদন্ত চলছে। গত ৩ জুন নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাক্ষাৎকার নেয় তদন্ত কমিটি। ওইদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানের সম্মেলন কক্ষে বোর্ডের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে কথা বলেন তদন্ত কমিটির দুই সদস্য। তবে কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। তবে ওইদিন তদন্ত কমিটির ‘গোপনীয়’ বৈঠকে বোর্ডের একজন কর্মকর্তা উপস্থিত থেকে সাক্ষাৎকার দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাবিত করার অভিযোগ তোলে ন্যায়বিচার পাওয়া নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন নারায়ন চন্দ্র নাথ।