জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন পেশাজীবীদের মধ্য থেকেও ভোটের লড়াইয়ে অনেকের আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। এ প্রবণতা চিরচেনা হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক সংখ্যায় আগ্রহীদের দেখা মিলছে।
ক্রীড়াঙ্গন থেকে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ছাড়া অধিকাংশই বিনোদন জগতের মুখ। তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে বেশ মরিয়া ছিলেন। গত পরশু ২৫ নভেম্বর ২০২৩ আওয়ামীলীগ দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর নতুনদের মধ্যে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান আর সিনেমার নায়ক ফেরদৌস ছাড়া আর কাউকে ক্ষমতাসীন দল বেছে নেয়নি। কিন্তু সংখ্যা উল্লেখ না করলেও বিনোদন জগত থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সারি বেশ দীর্ঘই ছিল।
বার্তা২৪.কম দেশের সাংস্কৃতিক জগতের দুই পুরোধা ব্যক্তিত্বের কাছে জানতে চেয়েছিল অভিনয় শিল্পী বা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সদস্যদের রাজনীতিতে জড়ানোর এই ঝোঁক কতোটা ইতিবাচক কিংবা তাদের এই প্রবণতা কি বার্তা দেয়। নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এই ইস্যুতে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন তাদের নিজস্ব ভাবনার কথা। তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বার্তা২৪.কম-এর পরিকল্পনা সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম।
‘‘সুযোগ-সুবিধার জন্য পার্লামেন্টে যাব’-সেটা যেন না হয়’’
নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারের কাছে প্রশ্ন ছিলো বিনোদন জগতের শিল্পীদের রাজনীতিতে জড়ানোর সাম্প্রতিক প্রবণতা নতুন না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটি বহুল সংখ্যায় দেখা দেওয়া কি ইতিবাচক, বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ার ক্ষেত্রে?
এ প্রসঙ্গে শ্রী মজুমদার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ রাজনীতিতে আসলে ভালোই হয়। অভিনয় শিল্পীদের একটি প্রভাব আছে সমাজে। সুতরাং ওরা সহজে সেই প্রভাবকে কাজে লাগাতে পারে।’
‘প্রথম কথা হচ্ছে, তারা যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন, মানুষের জন্য কাজ করবেন; সেটা যেন কখনো ভুলে না যান। আমি সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য পার্লামেন্টে যাব, যশখ্যাতি করব, সেটা যেন না হয়’-বলেন দেশের নাট্য আন্দোলনের অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব।
দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে বুদ্ধিজীবী সমাজের গৌণ ভূমিকার কারণ প্রসঙ্গে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বুদ্ধিজীবীরা রাজনীতির এই অচলায়তন ভাঙতে পারবেন না। এটা রাজনীতিবিদদেরই ভাঙতে হবে। এখানে অনেক বৈদেশিক প্রভাব কাজ করে। বুদ্ধিজীবীরা হয়তো আহ্বান জানাতে পারেন কিন্তু তারাও কোন কার্যকর ভূমিকা নিতে পারবেন না বলেই মনে হয়।’
হঠাতই রাজনীতির ময়দানে আবির্ভূত হওয়া বিনোদন জগদের শিল্পীদের আদর্শিক সংহতি কতোটা কতোটা সুদৃঢ়, এমন প্রশ্নে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি, গবেষক-প্রাবন্ধিক গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘অনেকেই রাজনীতিতে আসতে চাইতে পারেন, ব্যক্তির ইচ্ছাকে কিছু বলবার নেই। আমি মনে করি যে প্রত্যেকেরই একটি রাজনৈতিক দর্শন, সামাজিক দর্শন জীবনের উদ্দেশ্য-এগুলো থাকে। যারা আগ্রহী হয়েছেন, যদি তারা রাষ্ট্র-সমাজ নিয়ে তাদের ভাবনা থাকে তবে তা অন্যায় নয়।’
‘…এবং আমরা তো নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের কথা বলি, বিশেষ করে যদি আওয়ামলীগ থেকে যারা মনোনয়ন পেয়েছেন, যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, যা আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি, এটি তাদের স্বাধীনতা; তারা চাইতেই পারেন তবে প্রশ্ন আসতে পারে যে দলের মনোনয়ন তারা প্রত্যাশা করেছেন সেই দলের সামগ্রিক রাজনীতির সঙ্গে তারা কতদূর সম্পৃক্ত? যদি তারা নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে তাদের কর্মধারা পরিচালনা করতে চান, সেভাবে তারা কাজ করেন তাহলে কিছু বলার নেই আমার’
‘কিন্তু যদি কেউ মনে করেন যে আমি টেলিভিশনে বা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি, মানুষ আমাকে চেনে সুতরাং আমার পরিচিতিটাকে কাজে লাগিয়ে যদি এমপি হতে পারি তাইলে আমার জন্য ভালো। যদি এই ধারণা থেকেই কেউ এসে থাকেন আমি সেটাকে সমর্থন করি না’-বলেন গোলাম কুদ্দুস।
রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পূর্বে জনগণের সঙ্গে একাত্ম হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বলেন, ‘দল নিশ্চয়ই বিবেচনা করবে, করার কথা যে কে দলের জন্য প্রয়োজনীয় আর কে না। তবে নীতি আদর্শটাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। কারও কারও ভূমিকা স্পষ্ট তারা বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে দেখেছি। মানুষ যদি কাউকে অনুসরণ করার যোগ্য ভূমিকা রেখে থাকেন তাদের আমরা গ্রহণ করব। কিন্তু যদি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নির্বাচন করতে চান সেটা তাদের একান্ত তার ব্যক্তিগত ইচ্ছা।’