নারী সহকর্মীদের চরিত্র হননের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আজ সোমবার অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন ও মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারী কর্মকর্তা ও শিল্পীরা।
রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সামনে এই মানবন্ধন কর্মসূচিতে তাদের স্লোগান ছিল ‘শিল্পী-সহকর্মী এক হও, অপপ্রচার রুখে দাও’। মূলত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারী শিল্পী, কর্মকর্তা ও বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি ব্যবহার করে এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে জড়িয়ে সম্প্রতি দুটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পরই তারা সোচ্চার হয়ে ওঠে।
গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আপনারা অবগত আছেন যে, আমরা সমগ্র বাংলাদেশের শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারীরা অপপ্রচারের শিকার হয়ে নানা ধরনের হয়রানির মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছি। অদৃশ্য একটি ঘুষখোর সিন্ডিকেট তাদের ব্যক্তিগত প্রার্থীদের চাকরি দিতে ব্যর্থ হয়ে যে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল, তার ভুক্তভোগী হয়ে আজ আমাদের এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। ঘুষ কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে তারা একটি নীল নকশা তৈরি করে। সে নকশা অনুযায়ী দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সহায়তা নিয়ে ও চাকরি দিতে না পারা প্রার্থীদের উসকানি দিয়ে বিভিন্ন মিডিয়া ও প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ করানো হয় এবং আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নানানভাবে হয়রানি করা হয়।’
আরও বলা হয়, ‘বর্তমান সরকার দেশ সংস্কারের কাজ শুরু করার পর থেকে সিন্ডিকেটটি আবারও নতুন নেটওয়ার্কে সক্রিয় হয়ে ওঠার অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং নতুন এজেন্ডা বাস্তবায়নে মরিয়া হয়ে উঠেছে। নতুন এজেন্ডা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারীদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক অপপ্রচার চালানোর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত কয়েকদিনে দেশের দুটি টেলিভিশন চ্যানেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারী শিল্পী, কর্মকর্তা ও বরেণ্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের ছবি ব্যবহার করে মানহানিকর সংবাদ প্রচার করানো হয়েছে। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে আমাদের সহকর্মী ও একাডেমির লাইট ডিজাইনার মো. জসীম উদ্দীনের দেওয়া কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য ও একাডেমির সাবেক সচিব জনাব জাহাঙ্গীর হোসেন চৌধুরীর ছবি দিয়ে একটি ভিত্তিহীন অডিও রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে এসব সংবাদ প্রচার করানো হয়েছে। হয়রানিমূলক এসব মিথ্যা সংবাদ প্রচারের পর থেকে আমরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে অনাকাঙ্খিত হেনস্থার শিকার হচ্ছি এবং কর্মস্থলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ২ দফা দাবি উপস্থাপন করেন তারা-
১. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত নারী শিল্পী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানির উদ্দেশ্য এবং প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার লক্ষ্যে প্রচারিত সকল মানহানিকর ভিত্তিহীন সংবাদ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার ব্যবস্থা নিতে হবে এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে কর্মরত শিল্পী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শোষণ ও নিপীড়নমূলক সকল প্রকার ষড়যন্ত্র ও কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যূত হলে শিল্পকলা একাডেমির বেশ ক’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কিছুদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এরপর গত ১১ আগস্ট থেকে ১৫ জনের মতো কর্মকর্তার অফিস রুম তালা দিয়ে রাখে অদৃশ্য একটি চক্র। এরপর থেকেই আলোচনায় আসতে থাকে বিভিন্ন ইস্যু।