১৮০ কিমি যাত্রা শেষে ‘কাঠবিড়ালি’ দর্শন

সিনেমা, বিনোদন

মাহবুবর রহমান সুমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-12-20 20:15:56

(পাবনা থেকে ফিরে) ঢাকার শীত, আর পাবনার শীত যে এক নয় সেটা বোঝা গেলো যুমনা সেতু পার হওয়ার কিছুটা পর। ভোররাতে গাড়ির গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন বেড়ে চলেছে শীতের তীব্রতা।

গন্তব্য সুচিত্রা সেনের শহর পাবনা। সকাল ১০টায় গাড়ি থামলো নির্ধারিত হোটেলের সামনে। এরপর বিশ্রাম। বিশ্রাম শেষে দুপুরের নাস্তা করতে গিয়ে দেখা মিললো পাবনা শহরের একমাত্র সিনেমা হল রূপকথার। সেখানে চলছে ইন্দুবালা সিনেমা। হলের বাইরে পরিবেশ দেখে যতটা মুগ্ধ হলাম হলের ভিতরের দর্শক সংখ্যা শুনে ততটাই মন খারাপ হলো। সেই মন খারাপ কিছুটা হালকা করলো হলের প্রবেশ পথের ফুলের বাগান।

এরপর আবার গাড়ি চলা শুরু করলো। ৫ মিনিট পথ চলার পর জানানো হলো, সামনেই মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মভিটা। সেখানেই কাটলো এক বিকেল। সেই গল্পের বর্ণনা অন্য একদিন দেওয়া যাবে। তবে দেখে নেওয়া যেতে পারে এক ঝলক। কারণ সূর্য হেলে পড়েছে বেশ কিছুক্ষণ, এখনো যেতে হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ।

 

গাড়ি চলা শুরু করলো পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়ার গজারমারা গ্রামের উদ্দেশ্যে। সেখানে সন্ধ্যা ৮টায় শুরু হবে নিয়ামুল মুক্তা পরিচালিত ‘কাঠবিড়ালি’ সিনেমার প্রিমিয়ার।

৮টার বেশ কিছু আগে গাড়ি থাকলো অন্ধকার ও প্রায় লোক শূন্য এক জায়গায়। বেশ কিছুটা দূরে আলো জ্বলছে। দেখা মনে হবে, যেন মেলা বসেছে। এর মাঝেই গাড়ির কাছে হাজির পরিচালক নিয়ামুল মুক্তা।

জানিয়ে রাখা ভালো, এটাই পরিচালক নিয়ামুল মুক্তার নিজের গ্রাম। আর এখানেই ২০১৭ সালের ২ মার্চ শুরু হয় তার প্রথম সিনেমা শুটিং। এই এলাকাতেই দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে তার পুরো সিনেমার। সেই দায়বদ্ধতা থেকেই সিনেমাটি সবার আগে দেখার অধিকার তার গ্রামের মানুষের। তাই প্রথমবারের নিয়ম ভেঙ্গে নিজের গ্রামের খোলা মাঠে সিনেমার প্রিমিয়ার।

সিনেমাটির নায়িকা অর্চিতা স্পর্শিয়া ও নায়ক আসাদুজ্জামান আবীর

গাড়ি থেকে নামার পর মনে হচ্ছে বাইরে যেন ঝড় বইছে। চারিদিকে শুরু হয়েছে দমকা বাতাস। যা শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে কয়েকগুণ। এর শীতের তীব্রতা দেখা নিয়ামুল মুক্তা প্রস্তাব দিলেন মায়ের হাতের পিঠা খাওয়ায়। এই শীতের মাঝে এমন গরম পিঠা খাওয়ার প্রস্তাব কোনভাবেই হাতছাড়া করা গেলো না।

পিঠা খাওয়া শেষ, শরীরও এখন বেশ কিছুটা গরম। এবার সিনেমা দেখার পালা। অন্ধকার আর সরু রাস্তা পেরিয়ে যেতে হবে এক মাঠে। তাই পথ দেখাচ্ছেন পরিচালক নিজেই। বাঁশ বাগান পর হয়ে যখন আলোর দেখা মিললো, তখন মাঠ জুড়ে মেলার আমেজ লক্ষ্য করা গেল।

মাঠের এক পাশে বিক্রি হচ্ছে চটপটি, ফুচকা, ডিমসহ নানা পদের খাবার। আর দলে দলে মাঠে আসতে শুরু করেছে আশে পাশের গ্রামের লোকজন।

মাঠে প্রবেশ করতেই স্বাগতম জানালেন সিনেমাটির নায়িকা অর্চিতা স্পর্শিয়া ও নায়ক আসাদুজ্জামান আবীর। এরপর কিছু আলাপচারিতা শেষ করে শীতে কাঁপতে কাঁপতে বসে গেলাম ‘কাঠবিড়ালি’তে দেখতে। এই খোলা মাঠে শুধু আমি যে কাঁপছি ব্যাপাটা এমন নয়; প্রায় সবার একই অবস্থা। তবে অবস্থা যাই হোক নিজের গ্রামের ছেলের প্রথম সিনেমা তাই শীতের চেয়ে গ্রামের মানুষের উত্তেজনাটাই বেশি সেটাই মন হল।

‘কাঠবিড়ালি’ সিনেমার প্রিমিয়ারে

এরপর শুরু হলো পরিচয় পর্ব। একে একে বক্তব্য দিলো পুরো ‘কাঠবিড়ালি’ টিম। সবাই ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এই এলাকার মানুষের প্রতি। সেই সঙ্গে অনুরোধ জানালেন, এই সিনেমার দৃশ্য মোবাইলে ধারণ না করতে।

সবাই অনুরোধ মেনে নেওয়ার পরই রাত ৮টার কিছুটা পরই শুরু হলো ‘কাঠবিড়ালি’ সিনেমার প্রিমিয়ার। সেখানে অংশ নিয়েছিলেন, ভাঙ্গুরা পৌরসভার মেয়র গোলাম হাসনাইন রাসেল, মণ্ডতোষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান গোলাম হাফিজ রঞ্জু, পরিচালক নিয়ামুল মুক্তার বাবা আব্দুল হামিদ মাস্টার। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিদা পারভিন পাখিসহ অনেকে।

‘কাঠবিড়ালি’ সিনেমার প্রিমিয়ারে দর্শক

শীতে কেঁপে ‘কাঠবিড়ালি’ দর্শন যখন শেষ হলো তখন বেশ কিছুটা রাত। গ্রামের ছেলের প্রথম সিনেমা দেখে প্রশংসা করতে করতে সবাই যখন বাড়ি ফিরতে ব্যস্ত; তখন মনে হল ঘড়ির কাটায় ২৮ ডিসেম্বর লেখা উঠার আগেই আমারও গাড়ি ধরতে হবে।

সেকারণে শীতে কেঁপে দেখা ‘কাঠবিড়ালি’ কেমন লাগলো; তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বার্তা২৪.কমের পাঠকদের।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর