বাদল ধারায় বিচিত্র রূপে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

, ফিচার

ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-09-15 16:59:06

প্রচণ্ড তাপদাহের পর অবশেষে ইতি টানতে যাচ্ছে ভাদ্রমাস। তবে শেষদিকে এসে টানা বৃষ্টিতে অসহ্য গরমের ক্লান্তি যেন নিমিষেই হারিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টি, বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন ক্যাম্পাস, অল্প একটু ফোন চার্জের জন্য ছুটাছুটি, ক্যাম্পাস জুড়ে খাবার সংকট। এই সবকিছুকে পিছনে ফেলে প্রকৃতি যেনো তার অপরূপ সৌন্দর্য ফিরে পেয়েছে বৃষ্টি স্নানের মাধ্যমে। দিনভর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ফুটবল নিয়ে ছুটাছুটি, প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাস, চায়ের দোকানের আড্ডা সাথে স্নিগ্ধ আবহাওয়া যেনো নতুন করে ক্যাম্পাসের প্রাণের সঞ্চার করে। বলছিলাম দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রকৃতি ঘেরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বৃষ্টিস্নাত দিনের কথা।

বৃষ্টি যেন এক অপরূপ মোহের জন্ম দেয় শিক্ষার্থী মনে। ক্যাম্পাসের পিচঢালা রাস্তায় বৃষ্টির ফোটাগুলো যেন বর্ষার উপস্থিতি জানান দেয়। বৃষ্টির পরশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি প্রাণ ফিরে পায়, ফিরে পায় নিজের সজীব অস্তিত্ব। ব্যস্ত ক্যাম্পাসে হঠাৎ বৃষ্টি এনে দেয় এক গভীর নীরবতা। ডায়না চত্বর, বটতলা, পাই চত্বর, টিএসসি, প্যারাডাইস রোডসহ পুরো ক্যাম্পাস ফিরে পায় তার সজীবতা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করা, এক ছাতার নিচে দুই তিনজনের হেঁটে যাওয়া কিংবা প্রেমিক যুগলের বৃষ্টি বিলাস সবমিলিয়ে রোমাঞ্চকর এক অনুভূতি।

সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে দেশব্যাপী নেমেছে বৃষ্টির ধারা। গত সোমবার থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচণ্ড গরম পড়তে শুরু করে। দেশের অন্তত ২০টি জেলায় বয়ে যায় তাপপ্রবাহ যা বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অব্যাহত ছিলো। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যশোর ও খুলনা অঞ্চলে অবস্থানের পর থেকেই উক্ত অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হয়। যার প্রভাবে বৃষ্টি নেমেছে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও।

ঝড়বৃষ্টির কারণে বিদ্যুৎ না থাকলেও হলের বেশ কয়জন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় রুমে বসে অনলাইনে ক্লাস করতে। আবার কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়ামোড়ে চায়ের টঙে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে। রাত থেকে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে যেয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল চার্জ দিতে। আবার একদল শিক্ষার্থীকে দেখা যায় ঝুমঝুম বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল মাঠে ফুটবল খেলতে। তবে ক্যাম্পাসে চলমান এতকিছুর মধ্যেও অসংখ্য শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় রুমে শুয়ে আরামের ঘুম ঘুমাতে। তাদের কাছে বৃষ্টির দিনের ঘুমটাই যেন সবকিছু।

এক ছাতার নিচে দুজন করে গন্তব্যে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা, ছবি: বার্তা২৪.কম

ক্যাম্পাসে ঘুরে দেখা যায় বেশ কিছু চিত্রের। বঙ্গবন্ধু হলের পুকুরে পাওয়া যায় একদল শিক্ষার্থীকে সাঁতার কাটতে। জিগ্যেস করলে বলেন, ছোটবেলায় বাড়ির পাশের পুকুরে লাফালাফি করতাম। এবারের বর্ষায় পুকুরে বেশ পানি হয়েছে। তাই ছোটবেলার মতো সাঁতার কাটার লোভ সামলাতে পারলাম না। পশ্চিম পাড়ার রাস্তাটা প্রেমিক যুগলদের জন্য। এই ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গার চেয়ে এই রাস্তাকেই তারা আপন করে নেয়। আর যদি হয় বৃষ্টিস্নাত দিন তাহলে তো কিছু বলারই অপেক্ষা রাখেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিস, চিকিৎসাকেন্দ্র, মফিজ লেক এবং প্রতিটি রাস্তার দুপাশে থাকা ফুল ও পাতাবাহার গাছের পাতা গুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ্‌ হলের শিক্ষার্থী জাহিদ বলেন, কৈশোরে বৃষ্টিতে ভেজার কথা খুব মনে পড়ে। কবে বৃষ্টি হবে, আকাশ পানে চেয়ে দিন গুনতাম শুধু বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। মায়ের বকুনি, বিজলি চমকানির ভয়, কিছুই ফেরাতে পারেনি বৃষ্টিতে ভেজা থেকে। তবে ক্যাম্পাসে এসে আর সেভাবে বৃষ্টিবিলাস করা হয়না। ক্লাস-পরীক্ষার চাপে অনেকটা যান্ত্রিক জীবন কাটাই। তাই বৃষ্টির দিন পেলে খুবই ভালো লাগে। অনেকদিন পর বৃষ্টিতে ভেজা, কাকভেজা হয়ে ক্যাম্পাসের সমগ্র এলাকা ঘুরে বেড়ানোর অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন বলেন, কর্মব্যস্ত ক্যাম্পাসের ক্লাস, পরীক্ষা, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইমেন্ট, প্রেজেন্টেশনের মতো ধরাবাধা একাডেমিক কাজ থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে শিক্ষার্থীরা বোধ হয় একটু বৃষ্টির দিনের অপেক্ষায় থাকে। আমাদের ক্যাম্পাসে গাছপালা পরিমাণ বেশ ভালো। হল থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির মধ্যে ক্যাম্পাসে ঘুরতে, বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে খুবই ভালো লাগে। বৃষ্টির মধ্যে টঙের চা পানের অনুভূতিটাও অসাধারণ। বৃষ্টিস্নাত ক্যাম্পাস নিজে যেমন সজীব হয়েছে, তেমনি আমার মনকেও সজিব এবং প্রাণবন্ত করেছে।

বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থী আসিফ জানান, ক্যাম্পাসে আসার পর বৃষ্টি কেন্দ্রীক সময়গুলো খুব মিস করছিলাম। গতকাল রাত থেকেই যখন বৃষ্টি শুরু হয় তখন আমার ভেতরে একটা আনন্দের অনুভূতি কাজ করে। রাতেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে আজকের দিন টা যেকোন ভাবেই হোক উপভোগ করবো। সকালে বৃষ্টি শুরুর পর হলের সবাই ফুটবল খেলতে নেমে যাই। ক্যাম্পাসে এসে বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলতে পারার আনন্দটা শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। আমার কাছে এটা কিঞ্চিত সৌভাগ্যেরও। এরপরে খিচুড়ি-মাংস রান্না করে সবাই একসাথে খাওয়াদাওয়া করবো। এরচেয়ে সুন্দর ব্যাপার আর কি হতে পারে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর