সম্প্রতি ভারত বনাম চীন সম্পর্কের নানান গুঞ্জনে উত্তাল হয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। বৈশ্বিক রাজনীতিতে সীমান্ত-বিরোধ নিয়ে দু দেশের মধ্যে বৈরিতা যেন কচ্ছপের কামড়।
ঊনবিংশ শতাব্দীর আগ থেকেই সীমানা ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাস তিক্ত থেকে তিক্ততর হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বিরোধের টানাপোড়েনেই বারবার বিষোদগার হয়েছে উভয়ের ক্ষোভ। প্রাথমিকভাবে বিরোধের শুরুটা হয়েছিল ১৮৬৫ সালের জনসন লাইন ও আকসাই চীনের বিতর্ক থেকে। তার কিছু পরে ব্রিটিশ শাসকদের দ্বারা প্রস্তাবিত ১৯১৪ সালের ম্যাকমোহন লাইনের কিছু অংশ (তিব্বত ও অরুণাচল সীমান্ত) অস্বীকার করে চীন। তিব্বত দখলের পর অরুণাচল ও আকসাই চীনকে চীনের অন্তর্ভুক্ত এলাকা হিসেবে দাবি করে চীন। ভারত—চীন কর্তৃক তিব্বতের দখলের ঘোর বিরোধিত করে এবং এই দ্বন্দ্ব চলাকালে তিব্বত ত্যাগ করা ধর্মীয় নেতা দালাই লামাকে আশ্রয় প্রদান করে। যার ফলশ্রুতিতে বিদ্বেষ আরো ঘনীভূত হয়। সীমান্ত-বিরোধকে কেন্দ্র করেই সূত্রপাত হয় ১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের, যেখানে চীনের কাছে একতরফাভাবে ধরাশায়ী হয় ভারত। এরপর অবশ্য দুই দেশের মাঝে একটা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৯৩ সালে। তার পর থেকে কয়েকবার সীমান্ত-বিরোধের জের ধরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও কোনো প্রথাগত যুদ্ধ জড়ানোর নজির নেই।
কিন্তু, গত ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারতের রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে এবং চীনের অন্তত ৪৩ জন সেনা হতাহতের খবর জানান দিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া উত্তাপ থেকেই বাড়তে শুরু করেছে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ দ্বৈরথের পারদ। ১৯৬২-এর পর দুই দেশ সম্মুখ যুদ্ধে জড়ায়নি, তাদের মধ্যে নতুন করে কোনো যুদ্ধের সম্ভাবনার কথা স্বীকার করতে নারাজ অনেকে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি পুরোপুরি ভিন্ন। দু দেশের মধ্যকার বিরোধ নতুন মোড় নিয়ে যেভাবে জটিল আবহের সৃষ্টি করে চলেছে তাতে যুদ্ধের সম্ভাবনাকে একেবারে উপেক্ষা করা যাচ্ছে না।
বর্তমান সময়ের এই ভিন্ন পরিস্থিতিতে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধে জড়ানো কি আদৌ সম্ভব নাকি নিতান্তই অগড়ম বগড়ম, সেটাই ভাববার বিষয়।
যুদ্ধের আলোচনায় সামরিক শক্তির প্রসঙ্গটি কান টানলে মাথা আসার মতো প্রাসঙ্গিক। বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে দু দেশের সামরিক শক্তির তুলনামূলক আলোচনা করা হচ্ছে। দুটি দেশই পরমাণু শক্তিধর হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য অত্যধুনিক সমরাস্ত্রে বলীয়ান। বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিজেদের তৈরি অস্ত্রে অস্ত্রাগার সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি অস্ত্র আমদানিও করে আসছে এই দুই দেশ। সামরিক শক্তির দিক থেকে আগের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে অস্ত্র আমদানিতে পরপর পাঁচ বছর শীর্ষস্থানে থাকা ভারত। ১৯৭৪ সালে পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকাভুক্ত হওয়া ভারতের বর্তমান পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৫০টি, যদিও চীনের পারমাণবিক অস্ত্র ভারতের বর্তমান পারমাণবিক অস্ত্র সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি (৩২০টি)।
সেনা সদস্য সংখ্যার দিক থেকে পিআরডব্লিউ সূচক অনুযায়ী প্রায় ১৩৮টি দেশের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জনবহুল দেশ চীন। চীনের সেনা সদস্যের সংখ্যা প্রায় ২১ লক্ষ ২৩ হাজার, অন্যদিকে ভারতের সেনা সংখ্যা ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার। যদিও চীনের তুলনায় প্রায় ১৬ লক্ষ বেশি রিজার্ভ সেনা সদস্য নিয়ে চীনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারত। মার্চ মাসে বেলফার সেন্টার থেকে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রায় ২৭০টি যুদ্ধ বিমান এবং ৬৮টি স্থল আক্রমণ বিমান রয়েছে। অপরদিকে স্থল আক্রমণের জন্য ছোট বিমানবহরসহ চীনের প্রায় ১৫৭টি যুদ্ধ বিমান রয়েছে। চীনের রয়েছে ৭৪টি সাবমেরিন, ৩২১০টি এয়ারক্রাফট, ৩২০০টি যুদ্ধট্যাংক, ও ৩০০টিরও বেশি যুদ্ধজাহাজ। যেখানে ভারতের রয়েছে ৪২০০টি যুদ্ধট্যাংক, ২১১৩টি এয়ারক্রাফট, মাত্র ১৮টি সাবমেরিন ও ৪২টি যুদ্ধজাহাজ।
সামরিক দিক বিবেচনার পাশাপাশি উভয় দেশের কূটনৈতিক দিকও সমান গুরত্বের দাবি রাখে। সেকারণেই ভারত ও চীন উভয়ই নজর দিয়েছে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার দিকে। দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা পৃথিবীতে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে বেশকিছু দিন ধরেই চীন বেশ সচেষ্ট। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ প্রকল্পের মাধ্যমে পুরো বিশ্বে নব্য উপনিবেশবাদ কায়েম করার প্রচেষ্টায় মগ্ন চীন। বর্তমানের বিবাদমান ইস্যুগুলোর জন্য চীনের আগ্রাসী মনোভাবকেই দুষছেন অনেকে। নিজের প্রভাব বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকেই প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করে তাদেরকে নিজের পক্ষে টানার প্রয়াস নতুন নয় চীনের। এই পরিকল্পনাকে সামনে রেখেই বিভিন্ন দেশের অবকাঠামো ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে সেসব দেশকে পাশে পেতে চাইছে চীন। কিন্তু অন্যদিকে বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়টি দেশ চীনের বিপক্ষে সোচ্চার হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ইন্দো-মার্কিন সম্পর্কের সুবাতাস কূটনৈতিক দিক থেকে চীনের আনুকূল্যকে প্রশমিত করছে।
বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ভারতও। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ইসরাইল, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু দেশের সাথে যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞাও অর্জন করেছে ভারত। অপরদিকে প্রতিবেশি দেশ নেপাল, ভুটানের সাথে ভারতের সাম্প্রতিক বৈরিতা ভারতকে নতুন প্রতিকূলতার মুখোমুখি দাড় করাতে পারে। উপরন্তু, পাকিস্তানের সাথে ভারতের তিক্ততার বিষয়টি ভারতের উদ্বেগকে তরান্বিত করবে।
প্রকৃতপক্ষে তারত ও চীনের সংঘাতের বিষয়ে ভারতের প্রতিবেশি দেশগুলোর মাঝে খুব একটা হেলদোল লক্ষ করা যাচ্ছে না। তাঁরা চলমান উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রতি গুরুত্বারোপ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান, জাপানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভারত ও চীনকে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। রাশিয়াও উভয় দেশের সাথেই সুসম্পর্ক চায় বলে জানিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারির এই নাজুক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে কোনো দেশই যুদ্ধসৃষ্ট নতুন কোনো দুর্যোগকালের সাক্ষী হতে চাইবে না।
ভারত-চীন সংঘর্ষের পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে ওঝার ঘাড়ে ভূত চাপলে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। করোনাকালের এই অর্থনৈতিক মন্দার সময়ে এই দুই পরাশক্তির সম্পর্কের অবনতির (বিশেষ করে বিশ্বের শিল্পায়নের ৭০ শতাংশ কাঁচামাল সরবরাহকারী চীনের অস্থিতিশীলতা) বিরূপ প্রভাবে অর্থনৈতিক চাপে পড়তে পারে মহাদেশের বাকি দেশগুলোও।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসে যায় দক্ষিণ এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন উভয়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে। চীন-ভারত সংঘর্ষের উত্তাপ বাংলাদেশের ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞজনেরা। সেবিষয়ে ক্রমেই চাপ বাড়ছে বাংলাদেশের ওপর। দু দেশের যে কোনো একটিকে সমর্থন করে একচক্ষু হরিণ হওয়া বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নিজের স্বার্থরক্ষার জন্য উভয় দেশের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে নিরাপদ অবস্থানে থাকতে কূটনৈতিকভাবে আরো কৌশলী হতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।
আপাত দৃষ্টিতে দুই দেশের চলমান উত্তেজনা যখন তুঙ্গে তখনও উভয় দেশের কোনোটিই যুদ্ধ দামামা বাজানোর মতো বোকামি করবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন বিশেষজ্ঞজনসহ সচেতন নাগরিক শ্রেণী। সীমান্তে উত্তেজনা জিয়িয়ে রাখলেও দুই দেশই শান্তি চায়।
ভারত ও চীনের শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা কারো অজানা নয়। বৃহৎ এই দু দেশের অর্থনীতি একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জনবহুল ভারতের অর্থনৈতিক বাজারের সিংহভাগই চীনাদের দখলে। পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে চীন থেকে ভারতে প্রতি বছর গড়ে ৫.২৫ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য আমদানি করা হয়। ২০১৯- ২০২০ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারতে রপ্তানি করেছে চীন। ভারতের রপ্তানিকৃত পণ্যের ১৪ শতাংশেরও বেশি পণ্য চীন থেকে রপ্তানি করা হয়। চীন কখনোই চাইবে না ভারতের এই বৃহৎ বাজারের দখলদারিত্ব হারিয়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে। ইতোমধ্যেই চীনা পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে সর্বভারতীয় ব্যবসায়ী সংগঠন—কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি), এর পাশাপাশি তারা ভোক্তাদেরও চীনা পণ্য বর্জনের জন্য আহবান জানিয়েছে। ভারতের সাথে চীনের এই বিরোধ যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ালে ভারতের বাজারে রাজত্ব হারাবে চীন, এবং বিকল্প হিসেবে ভারতের বাজারে পাকাপোক্ত হবে মার্কিন আধিপত্য। ফলশ্রুতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্যযুদ্ধে পশ্চাদগামী হতে কখনোই পছন্দ করবে না চীন।
অন্যদিকে, ভারতও এটা মাথায় রাখবে—চীন তার তুলনায় পাঁচগুণ বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। সামরিক ব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীন ২০১৯ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করে ২৬১ বিলিয়ন ডলার, যেখানে গত বছরে ভারতের সামরিক ব্যয় ৬.৮ শতাংশ বাড়ার পরও মাত্র ৭১.১ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক ও সামরিক উভয় দিক থেকেই পরিস্থিতি চীনের অনুকূলে রয়েছে বলে ধরা হচ্ছে। তাই সম্মুখ সামরিক লড়াইয়ে না গিয়ে হয়তো অসামরিক বা কূটনৈতিকভাবেই চীনকে কোণঠাসা করার পথকে বেছে নেবে ভারত।
সাম্প্রতিক একটি বিবৃতিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, “ভারত শান্তি চায়”, তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, “চীনের এই ঘটনা যদি ভারতকে উসকে দেওয়ার জন্য হয়ে থাকে তবে ভারতও এর উপযুক্ত জবাব দিতে সক্ষম।” এ-থেকে বোঝা যায় ভারতের ওপর সরাসরি আক্রমণ আসার আগ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে থাকার শক্ত অবস্থানকেই বেছে নেবে ভারত।
ভারত-চীন সংঘাত যুদ্ধে রূপ নিলে সামরিক শক্তি বা পাল্টাপাল্টি সমরাস্ত্র ব্যবহারের বিধ্বংসী প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশকেই, সেকথা তাদের কারোরই অজানা নয়। তাই সীমান্ত-বিরোধ নিয়ে ভারত-চীন সম্পর্ক তলানিতে ঠেকলেও এরবেশি সীমান্ত উত্তেজনা বাড়তে দেবে না বরং শেষমেশ সংযম বজায় রেখে সমঝোতাতেই নজর দেবে দেশ দুটি, এখন পর্যন্ত সেরকমই আশা করছেন বিশ্লেষক মহল।
তবে উভয় দেশের সামরিক প্রস্তুতি জোরদার, যেমন সীমান্তে সেনা ও বিভিন্ন যুদ্ধ সরঞ্জামাদি মোতায়েন, সামরিক মহড়া, সৈন্য সংখ্যা সমৃদ্ধকরণ, বিমানঘাঁটি ও রাডার স্টেশন স্থাপনসহ অন্যান্য সব তোরজোড় যুদ্ধের আয়োজনকে তরান্বিত করে সত্যিই কি কোনো জটিল পরিস্থিতির আভাষ দিচ্ছে নাকি নিতান্তই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা সেটা দেখার জন্য থাকতে হবে সময়ের অপেক্ষায়।
সাদিয়া আফরিন কুমু, শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়,গোপালগঞ্জ