চা বাগানের মায়াবী দোলা
মালিনীছড়া চা-বাগান (সিলেট) থেকে: হযরত শাহ জালাল (রহ.), হযরত শাহ পরান (রহ.) এবং ৩৬০ জন পূর্ণাত্মা আউলিয়ার স্মৃতিধন্য পবিত্রভূমি সিলেটের সঙ্গে জড়িয়ে আরও অনেকের নাম: শ্রী চৈতন্য দেব, হাসন রাজা, রাধা রমন, শাহ আব্দুল করিম। পাহাড়, নদী, হাওর-এ পরিপূর্ণ চা উৎপাদনে বিশ্বের অন্যতম এ স্থানটি 'একটি কুড়ি দুটি পাতার দেশ' নামেও সমধিক পরিচিত।
ঢাকা, চট্টগ্রাম কিংবা দেশের যে কোনও জায়গা থেকে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের পর পরই অনুভব করা যায় চা বাগানের সবুজ আলিঙ্গন। অফুরন্ত বাতাসে মিশে থাকে চায়ের সৌরভ। দুটি পাতার একটি কুঁড়ির দেশ সিলেট চায়ের সঙ্গে এভাবেই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।
চায়ের সুবাদে সিলেটের সুনাম ছড়িয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। বর্ষার মৌসুমের শুরু থেকে শীত মৌসুমের আগ পর্যন্ত সিলেটের চাবাগানগুলোয় চলে চা-পাতা তোলা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পালা করে চা-পাতা তোলার কাজে ব্যস্ত থাকেন নারী-পুরুষ চা-শ্রমিকেরা। পাতা তোলা শেষে তা লাইন ধরে জমা দেন শ্রমিকেরা। ওজন শেষে চা-পাতা স্তূপ করে রাখা হয় চা তৈরির জন্য। সেগুলো প্রসেস করার পর চলে আসে চট্টগ্রামের টি বোর্ড-এ। তারপর অকশনের মাধ্যমে পৌঁছে যায় ব্যবসায়ীদের হাত হয়ে দেশে-বিদেশের চা-প্রেমীদের পেয়ালায়।
সিলেটের চা বাগানগুলোর প্রতি পর্যটকদের রয়েছে আলাদা আকর্ষণ। ভ্রমণে এসে কয়েক ঘণ্টা চা বাগানে কাটানোর অভিজ্ঞতা অন্যরকম। চা বাগানে প্রকৃতি অনেক বেশি খুলে দেয় নিজেকে। সেখানে সকাল হয় সমতলের চেয়ে আগে। ভোরের প্রথম সূর্যালোক বিস্তীর্ণ বাগানের চায়ের পাতায় পাতায় বিচ্ছুরিত হয়ে এক অলৌকিক সকালের সন্ধান দেয়। অপরাহ্ণে সন্ধ্যা ঘনিয়ে বাগানে অভূতপূর্ব আলো-ছায়ার বর্ণালীতে। চা বাগানের মায়াবী দোলা সিলেট ভ্রমণের উজ্জ্বলতম অধ্যায়।