বিশ্বব্যাপী প্রতি তিনজনের একজন নারী তাদের জীবদ্দশায় কখনো না কখনো যৌন বা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন।
মঙ্গলবার (০৯ মার্চ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এমনি তথ্য উঠে এসেছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন দেশের সরকারকে সহিংসতা রোধ ও নির্যাতনের শিকার নারীদের জন্য সেবার মানের আরও উন্নতি এবং নারী-পুরুষের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৫-৪৯ বছর বয়সী প্রায় ৩১ শতাংশ নারীই শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। যা সংখ্যায় ৮৫ কোটি ২০ লাখের বেশি। ২০০০ সাল থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে জরিপ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
ছেলেদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মানের প্রয়োজনীয়তা এবং যৌনতার ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্কুলে পড়ানো উচিত বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থার কর্মকর্তারা।
ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম বলেছেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশে এবং সব সাংস্কৃতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়মিত একটি চিত্র। এতে করে লাখ লাখ নারী ও তাদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহামারি করোনার সময় এই চিত্র আরও বেড়েছে বলে তিনি জানান।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী বা তার সঙ্গীর হাতেই নারীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হন। গরিব দেশগুলোতে এই নির্যাতনের চিত্র আরও হতাশাজনক। তবে নিপীড়িত নারীর প্রকৃত সংখ্যা জরিপে উঠে আসা সংখ্যার থেকেও অনেক বেশি বলে মনে করে ডব্লিউএইচও। কারণ, যৌন নিপীড়নের অনেক ঘটনাই অজানা থেকে যায়।
প্রতি চারজনের মধ্যে একজন নারী তার পরিচিতজনের দ্বারা নিপীড়নের শিকার করা হয় বলে জরিপে উঠে এসেছে।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুয়ায়ী নারীদের প্রতি সহিংসতা বেশি হয়ে থাকে- কিরিবাতি, ফিজি, পাপুয়া নিউ গিনি, বাংলাদেশ, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কঙ্গো এবং আফগানিস্তানে। সহিংসতার সর্বনিম্ন হার ইউরোপের দেশগুলোতে। যেখানেও প্রায় ২৩ শতাংশ পর্যন্ত। তরুণ বয়স থেকেই নিপীড়নের শুরু হয় বলেও জানায় ডব্লিউএইচও।
গবেষণায় জড়িত হাইডি স্টোকেল এই বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, গত দশক ধরে নারীদের প্রতি সহিংসতার কোনও পরিবর্তন হয়নি।
লন্ডনের স্কুল হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিনের জেন্ডার ভায়োলেন্স অ্যান্ড হেলথ সেন্টারের ডিরেক্টর হিসেবে থাকা স্টোকেল বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে নারীদের প্রতি সহিংসতা একইরকম থেকে যায়।
স্টোকেল লিঙ্গ সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিটি দেশের সরকারকে নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নারীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের মুখোমুখি হচ্ছে। তাই প্রতিটি দেশের পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা দরকার।