করোনাভাইরাস বাদুড় থেকে অন্য কোনও প্রাণীর মাধ্যমে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে থাকতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও চীনের বিজ্ঞানীদের যৌথ অনুসন্ধানের খসড়া প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
ডব্লিউএইচও এবং চীনা বিজ্ঞানীদের করোনার উৎপত্তি নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের এক খসড়া প্রতিবেদন হাতে পেয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে করোনা কোনও ল্যাব থেকে ছড়ানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।
বিজ্ঞানীদের এই অনুসন্ধানে অনেক প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা। ডব্লিউএইচও এবং চীনা বিজ্ঞানীদের ওই দল ল্যাব থেকে করোনার ছড়িয়ে পড়ার পূর্বানুমান ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে আরও গবেষণার প্রস্তাব দিয়েছেন।
প্রতিবেদন প্রকাশের সময় বারবার পিছিয়ে দেওয়া হয়। যে কারণে মহামারির দায় চীনের ওপর চাপানো ঠেকাতে করোনার উৎপত্তি নিয়ে বিজ্ঞানীদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাল্টাতে চীনা পক্ষ চেষ্টা করছে কি না সেটি নিয়েও প্রশ্ন দেখা দেয়।
সোমবার (২৯ মার্চ) ডব্লিউএইচওর সদস্য একটি দেশের জেনেভাভিত্তিক কূটনীতিকের কাছ থেকে প্রতিবেদনের প্রায় চূড়ান্ত সংস্করণটি পেয়েছে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি। চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হওয়া চীনের হুবেই প্রদেশের উহান সফর করেন। সেখানে প্রায় এক মাস ধরে অনুসন্ধানের পর করোনার উৎপত্তি নিয়ে তারা এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।
করোনার উৎপত্তি নিয়ে ডব্লিউএইচও এবং চীনা বিজ্ঞানীদের তৈরি ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদনে পরিবর্তন আনা হবে কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়। এছাড়া ওই কূটনীতিকও তার পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হওয়ার আগে এই প্রতিবেদন প্রকাশের অনুমতি তার নেই।
গবেষকরা সম্ভাবনার ক্রম অনুযায়ী করোনার উৎপত্তির সম্ভাব্য চারটি পরিস্থিতি তালিকাভুক্ত করেছেন। তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, দ্বিতীয় একটি প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমণের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। বাদুড় থেকে সরাসরি মানুষের শরীরে এই ভাইরাসের বিস্তার মূল্যায়ন করেছেন তারা। বলেছেন, কোল্ড চেইন খাদ্য পণ্যের মাধ্যমে ভাইরাসের বিস্তারের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু সেটি হয়নি।
বাদুড়ের শরীরে ভাইরাসটির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আর ভাইরাসটির ঘনিষ্ঠ আত্মীয়গোত্রীয় দ্বিতীয় কোনো প্রাণী এর বাহক ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই বাদুড় ভাইরাস এবং সার্স-কোভ-২ এর মধ্যে বিবর্তনীয় দূরত্ব রয়েছে; যা কয়েক দশক ধরে বিদ্যমান বলে ধারণা করা হয়। তবে এর মধ্যে সংযোগকারীর অনুপস্থিতি দৃশ্যমান।
উহান মিশনে নেতৃত্ব দেওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ পিটার বেন এমবারেক শুক্রবার বলেছেন, প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এই প্রতিবেদনের তথ্য যাচাই-বাছাই এবং অনুবাদ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমি প্রত্যাশা করছি, পরবর্তী কয়েকদিনের মধ্যে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং আমরা এটি প্রকাশ করতে সক্ষম হবো।