চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আর অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বিষয়টি 'ওপেন সিক্রেট'। তবে, দক্ষিণ এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন, মার্কিন ও ভারতের সম্পর্কের রসায়নটি যথেষ্ট অন্য রকম। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিশ্বময় চীনের দাপট কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একদিকে বেজিংকে চেপে ধরতে চাইছে, অন্যদিকে দিল্লি তথা ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হচ্ছে।
'উচ্চ প্রশিক্ষিত প্রযুক্তিবিদ এবং উন্নত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের জন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভারত', এমনটিই জানিয়েছে নেতৃস্থানীয় মার্কিন থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশন’ (আইটিআইএফ) প্রণীত সর্বসাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্ট।
সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে আইটিআইএফ বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত ও চীনের সঙ্গে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে তুল্যমূল্য আলোচনা করা হয়েছে।। সেখানে এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য আমেরিকার কতটা ভালো বা খারাপ হতে পারে তার বিশ্লেষণ রয়েছে।
'লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষ-পরবর্তী চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভারতের সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে', একথা উল্লেখ করে আইটিআইএফ বলেছে, এর ফলে দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে। বিশ্ব অর্থনীতির মূল গতিপথটিই বিশ্বের পূর্বাঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে বলেও মনে করে আইটিআইএফ।
পরিবর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র একা তেমন কিছুই করতে পারবে না, তার দরকার শক্রিশালী মিত্র। এজন্য আর্থিক, সামরিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত খুব কাছাকাছি আসার সম্ভাবনাও বাড়ছে বলে আইটিআইএফ'র ধারণা।
তবে, ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন বাইডেন প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে আইটিআইএফ। তারা জানিয়েছে, মেধাস্বত্তের অধিকার, তথ্যের উপর নজরদারি, কর, শুল্ক ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে ভবিষ্যতে দু’দেশের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভুগতে হতে পারে। তথাপি উৎপাদন ক্ষেত্রে চীন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের উপর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইটিআইএফ'র প্রফেসর তথা সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের সহ-লেখক-গবেষক ডেভিড মোসেলা বলেছেন, 'যে শক্তি বা লবি আমেরিকা ও চীনের মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি করছে, সেটাই আমেরিকা ও ভারতকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারত যে ক্রমাগত আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী হয়ে উঠছে, তার প্রমাণ মিলেছে।'