হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) মতে, ইরাক আগ্রাসনের পর দুই দশক পার হলেও আবু ঘ্রাইব এবং অন্যান্য কারাগারে মর্কিন সামরিক বাহিনীর নির্যাতন ও অপব্যবহারের শিকার ইরাকিদের প্রতিকার বা ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এইচআরডব্লিউর সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিউইয়র্কভিত্তিক গোষ্ঠীটি এমন কোনও প্রমাণ খুঁজে পায়নি যে, মার্কিন সরকার ক্ষতিগ্রস্থদের কোনও ক্ষতিপূরণ বা অন্য কোনও প্রতিকার দিয়েছে। রাষ্ট্রটি ওই বিষয়ে কোনও ক্ষমা বা অন্য সংশোধনও জারি করেনি।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৩ সালে আক্রমণ করে দখল করে ইরাক। ২০০৯ সালে ইরাকের বৃহত্তম কারাগারে আব্র ঘ্রাইবের নিয়ন্ত্রন নেয় যুক্তরাষ্ট্র এবং তার জোট মিত্ররা। ওই কারাগারে প্রায় ১ লাখ ইরাকি বন্দী ছিল বলে ধারণা করা হয়।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো ২০০৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ইরাকে মার্কিন বাহিনীর নির্যাতন এবং অন্যান্য দুর্ব্যবহার নথিভুক্ত করেছে, যা তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেছিল। তবে, তিনি নির্যাতনের প্রকৃতিকে শুধুমাত্র অসম্মানজনক বলে অভিহিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অফ দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি) কর্তৃক ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোটের কাছে জমা দেওয়া একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আইসিআরসিকে বলেছেন, ২০০৩ সালে ইরাকে সামরিক জোটের হেফাজতে থাকা ৯০ শতাংশ বন্দীকে ভুলবশত গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ড ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিলেও, তা কখনওই বাস্তবায়িত হয়নি।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, কিছু ভুক্তভোগী আইনের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু, ফরেন ক্লেইম এ্যাক্টের ধারা অনুযায়ী ঘটনার দুই বছরের মধ্যে মামলা দায়ের না করায় তারা কোনও প্রকার ক্ষতিপূরণ লাভে ব্যর্থ হন।
এইচআরডব্লিউ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ন্যায়বিচারের জন্য ইরাকিদের দাবিগুলোও ১৯৪৬ সালের একটি আইনের মাধ্যমে খারিজ করা হয়।
এইচআরডব্লিউয়ের ওয়াশিংটন ডিরেক্টর সারাহ ইয়াগার বলেছেন, ‘বিশ বছর পর মার্কিন বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত ইরাকিদের কাছে এখনও দাবি করার বা মার্কিন সরকারের কাছ থেকে কোনও ধরনের প্রতিকার বা স্বীকৃতি পাওয়ার কোনও স্পষ্ট পথ নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তারা অতীতে তাদের নির্যাতন ভুলে যেতে চায়। কিন্তু নির্যাতনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব এখনও অনেক ইরাকি এবং তাদের পরিবারের জন্য একটি দৈনন্দিন বাস্তবতা।’
এইচআরডব্লিউ কুখ্যাত আবু ঘ্রাইব কারাগারের একজন সাবেক বন্দী তালেব আল-মাজলির সাক্ষাৎকার নিয়েছে, যিনি অমানুসিক নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং তিনি মার্কিন সরকারের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও ক্ষতিপূরণ বা স্বীকৃতি পাননি।
তাকে পশ্চিম ইরাকি প্রদেশ আনবারে ২০০৩ সালের নভেম্বরে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করার সময় আটক করা হয়েছিল এবং ২০০৫ সালের মার্চ মাসে কোনও অভিযোগ ছাড়াই মুক্তি দেওয়া হয়।
তালেব আল-মাজলি বলেন, ‘তারা আমাদের জামাকাপড় কেড়ে নেয়। তারা আমাদের নিয়ে প্রতিনিয়ত উপহাস করতো। আমরা সম্পূর্ণ শক্তিহীন ছিলাম। কুকুর, সাউন্ড বোমার মাধ্যমে আমাকে নির্যাতন করা হয়েছিল।’ হাতে এবং কব্জিতে এখনও সেই ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন আল-মাজলি।
আল-মাজলির পরিবারও ওই নির্যাতনের পরোক্ষ প্রভাব থেকে রেহাই পায়নি। কারণ, আল-মাজলির স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেছে এবং তার পুত্র স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।
তিনি বলেন, ‘ওরা আমাদের কাছ থেকে আমাদের ভবিষ্যত কেড়ে নিয়েছে।’