যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অচলবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা

আমেরিকা, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2023-09-30 16:11:43

বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান সদস্যরা সরকারকে অস্থায়ীভাবে অর্থায়নের জন্য প্রস্তাবিত স্টপগ্যাপ ফান্ডিং বিলটি প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে আগামী রোববার (১ অক্টোবর) থেকে প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা ও ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার (৩১ অক্টোবর) পর্যন্ত মার্কিন পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে স্বল্পমেয়াদি তহবিল বিলটি পাস করানোর চেষ্টা করা হয়। চূড়ান্ত পর্বে বিলের বিপক্ষে ২৩২ ও পক্ষে ১৯৮টি ভোট পড়ে। এতে আংশিকভাবে অচল হয়ে যেতে পারে দেশটির ফেডারেল (কেন্দ্রীয়) সংস্থাগুলো।

উল্লেখ্য, ১ অক্টোবর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী অর্থবছর শুরু হবে। নতুন অর্থবছরের জন্য এখনও কোনো বাজেট বরাদ্দ করেনি কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান রাজনৈতিক প্যাটার্ন এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসে রিপাবলিকান পার্টির আসন সংখ্যা ২২১ যা সংখ্যাগরিষ্ঠ অবস্থানে আছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটদের আসন সংখ্যা ২১২টি। আবার কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ব্যবধান মাত্র দুটি আসনের। ডেমোক্রেটিক পার্টির আসন ৫১টি। বিপরীতে ৪৯টি আসন নিয়ে খুব কাছেই অবস্থান করছে রিপাবলিকান পার্টি। ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের মধ্যে আসন সংখ্যার ব্যবধান কম হওয়ায় এবং হাউসের উভয় কক্ষেই কোনো দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ না হওয়ার কারণে বিল পাসে বাধা সৃষ্টি হয়েছে।

মূলত, ফেডারেল সরকারের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়া এড়াতে অস্থায়ী স্টপগ্যাপ ফান্ডিং বিল আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভসের স্পিকার ও রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেভিন ম্যাককার্থি। কিন্তু তার রিপাবলিকান দলের কট্টর ডানপন্থী অংশের আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণে সেই বিল পাস হতে পারেনি।

বিলে ম্যাককার্থি প্রস্তাব করেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বাজেটের বিষয়ে কংগ্রেস ঐকমত্যে পৌঁছানো ‌না যায় ততদিন অন্তত এক মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে স্টপগ্যাপ ফান্ডিং চালু করা হোক। কিন্তু ভোটে বিলটি পাস হয়নি। বিলের পক্ষে ভোট দেন ১৯৮ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ও বিপরীতে ভোট দেন ২৩২ জন আইনপ্রণেতা। এই ২৩২ জনের মধ্যে আবার ২১ জন রিপাবলিকান পার্টির। অর্থাৎ, নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতাদের বিরোধিতার কারণেই বিলটি পাস হয়নি।

বিল পাস না হওয়ায় আসন্ন শাটাডাউনের ফলে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার বিভাগ, পরিবহন বিভাগসহ বিভিন্ন খাত সরাসরি প্রভাবিত হবে। ফলে দেশটিতে সরকারি সেবা অনেকটাই কমে যেতে পারে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।

মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদ জাস্টিন বেগলি বলেছেন, চরম রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হতে চলেছে। এই অবস্থায় কর্মকর্তারা পূর্ণ বেতন পাবেন না।

এদিকে, বিষয়টি মার্কিন অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে ভিন্ন মত দেখা গেছে। তারা বলছেন, শাটডাউনের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেডিট রেটিং (প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিকে ঋণ দেওয়া হলে, সেটা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করার ক্ষমতা) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়িয়ে দিতে পারে বাইডেন প্রশাসন।

গত ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ বারের মতো শাটডাউন হতে চলেছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারী কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা ছাড়াই চাকরিচ্যুত হতে পারেন। এক্ষেত্রে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী না থাকলে সরকারি কার্যক্রম চালানো সম্ভব না তাদেরই রাখা হবে, তাও বিনা বেতনে।

এই পরিস্থিতি সামলাতে ফেডারেল কর্মীদের ছুটি দীর্ঘ করতে পারে বাইডেন প্রশাসন। কিংবা সামরিক বাহিনীকে বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যেতে বলতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর