রাশিয়া শুক্রবার দাবি করেছে যে, তার সেনারা ইউক্রেনের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা রয়টার্সকে বলছেন, এক্ষেত্রে সামান্যই অগ্রসর হচ্ছে মস্কো বাহিনী।
এএফপি জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ প্রধান ফ্ল্যাশপয়েন্ট শিল্প শহর আভদিভকা। সেটিকে প্রায় ঘেরাও করে রেখেছে রামিয়ার সেনারা।
এদিকে, ইউক্রেন বলেছে তারা হামলা থেকে শহরটিকে রক্ষা করেছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) বলেছেন, ‘আমাদের সেনারা দক্ষতার সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। তারা আরও সুবিধাজনক অবস্থান দখল করছে এবং সবদিকের অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’
রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্তাদের সঙ্গে এক ব্রিফিংয়ে শোইগু বলেছেন, ‘আমাদের সেনারা কার্যকর ও দৃঢ়ভাবে হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষতি সাধন করছে। শত্রু পক্ষের যুদ্ধের ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যহারে কমে গেছে।’
গত বুধবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেনের পূর্ব দোনেটস্ক অঞ্চলের বাখমুতের উপকণ্ঠে একটি ছোট গ্রাম ক্রোমোভের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তবে অন্যান্য আঞ্চল দখল নিতে পারেনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার এক ডিক্রি জারি করে বলেছেন, দেশটির সেনা সংখ্যা ১৫ শতাংশ বাড়ানো হবে।
অন্যদিতে, ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দাদের নির্দেশে নাশকতার দায়ে রাশিয়া-ইতালির দ্বৈত নাগরিকত্বসহ এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি)।
মস্কো শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) জানিয়েছে, সন্দেহভাজন ব্যক্তি চলতি বছরের শুরুতে কিয়েভের ইন্ধনে মস্কোর রেলওয়েতে বোমা হামলা চালিয়েছিল।
সন্দেহভাজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত নভেম্বরের শুরুতে মস্কোর দক্ষিণ-পূর্বে রিয়াজান অঞ্চলে একটি ১৫-ক্যারেজ ট্রেন লাইনচ্যুত করার জন্য বিস্ফোরক রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
এফএসবি আরও জানিয়েছে, ‘ওই ব্যক্তি গত জুলাইয়ে দিয়াগিলেভো সামরিক বিমান ঘাঁটিতেও বোমা হামলা করেছিলেন।’
এফএসবির তদন্ত কমিটি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ওই অপরাধী রাশিয়া এবং ইতালির নাগরিকত্ব নিয়ে রিয়াজান অঞ্চলের ১৯৮৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন বলে প্রমাণিত হয়েছে। আটক ব্যক্তি তার জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’
রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গত ফেব্রুয়ারিতে ইস্তাম্বুলে ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দারা নিয়োগ করেছিল। এরপর তিনি ইইউ এবং ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র লাটভিয়ার বিশেষ পরিষেবা থেকে নাশকতার প্রশিক্ষণ নেন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য নাশকতামূলক কাজে তার ভূমিকা জানার জন্য তদন্ত চলছে।’
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়ার অবকাঠামোতে সর্বোচ্চ প্রোফাইল ইউক্রেনীয় আক্রমণ হয়েছিল ২০২২ সালের অক্টোবরে, যখন ক্রিমিয়ান উপদ্বীপকে রাশিয়ার সঙ্গে সংযুক্তকারী কের্চ স্ট্রেইট সেতুতে বোমা হামলা হয়েছিল।
বিস্ফোরণের কিছুক্ষণ পরেই পাঁচ রাশিয়ান এবং আরও তিনজনকে গ্রেফতার করে এফএসবি, যারা ইউক্রেন এবং আর্মেনিয়ার নাগরিক।
সূত্রগুলো গত বৃহস্পতিবার দাবি করেছে যে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা পরিষেবা (এসবিইউ) সাইবেরিয়ায় একটি রেললাইনে বোমা হামলা করেছে, যা তাদের রাশিয়ার গভীরে পৌঁছানোর চিত্র তুলে ধরেছে।
এসপ্রেসো টিভি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, ‘ওই হামলাটি রাশিয়া ও চীনের মধ্যে একমাত্র গুরুতর রেল সংযোগকে পঙ্গু করে দিয়েছে, যা মস্কো সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য ব্যবহার করেছিল।’