ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি কয়েক দিনের মধ্যে দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল ভ্যালেরি জালুঝনিকে বরখাস্ত বরখাস্ত করার ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, কারণ হিসেবে সূত্র বলছে, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে অধিকাংশ যায়গাতেই ব্যার্থতার ঘটনা ঘটেছে এবং সেনাবাহিনীর পিছু হটার যে কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। খুব দ্রুতই প্রেসিডেন্সিয়াল ডিক্রি জারির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
জেলেনস্কি এরা আগে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) জেনারেল জালুঝনিকে নিজ কার্যালয়ে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে কয়েক জন সরকারি কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে জালুঝনির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত এক বৈঠক করে তাকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ওই বৈঠকে উপস্থিতি দু’জন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ওই বৈঠকে জালুঝনিকে প্রথমে কমান্ডিং শাখা থেকে সরিয়ে অন্য কোনো শাখায় বদলির প্রস্তাব দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এই প্রস্তাব তিনি মেনে না নেন, সেক্ষেত্রে তাকে চাকরিচ্যুত হতে হবে।
‘জালুঝনি এ প্রস্তাব মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এখন প্রেসিডেন্টের নির্দেশই কার্যকর হবে,’ সিএনএনকে বলেছেন এক কর্মকর্তা।
জালুঝনিকে বরখাস্তের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য জানতে জেলেনস্কির দপ্তরে সিএনএন এর পক্ষ থেকে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ কোনো কথা বলতে চাননি।
এদিকে সোমবার, রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র সেরহি নাইকিফোরভ সিএনএন এবং অন্যান্যদের বলেছেন যে সেনাপ্রধানের বরখাস্তের গুজব অসত্য। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক তার সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলগুলিতে একটি বার্তাও দিয়েছে যাতে লেখা ছিল, "প্রিয় সাংবাদিকরা, সবার কাছে একটি তাৎক্ষণিক উত্তর: না, এটি সত্য নয়।"
একজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার সিএনএনকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনের পরবর্তী সেনাপ্রধান হিসেবে এই মুহূর্তে দু’জনকে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাদের একজন হলেন দেশটির সামরিক বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টোরেটের প্রধান যার সাথে জেলেনস্কির সাথে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে ৩৮ বছর বয়সী জেনারেল কিরিলো বুদানভ এবং অপরজন দেশটির স্থলবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওলেক্সান্দার সাইরিস্কি।
গত মঙ্গলবার সিএনএন জেনারেল কিরিলো বুদানভ ইউক্রেনের নতুন কমান্ডার-ইন-চীফ হতে চলেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন একটি যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আমার মনে হয় না এখন এসব ইস্যুতে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা আমাদের উচিত হবে।’
জেনারেল ওলেক্সান্দর সাইরিস্কির সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত মিনস্ক চুক্তি অনুযায়ী ক্রিমিয়াকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে ইউক্রেনের স্বীকৃতি না দেওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য তদ্বিরের অভিযোগে ইউক্রেনের সঙ্গে কয়েক বছর টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালে দেশটিতে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই অভিযানের নির্দেশ দিয়েছেন।
যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ক্ষয় পেতে থাকে। এর মধ্যে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জিয়া প্রদেশ দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী এই চার প্রদেশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের ভূখণ্ডের এক পঞ্চমাংশ।