মিয়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনী ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাতে জর্জরিত এবং রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল রাখাইন রাজ্য। শিগগিরই রাজ্যের ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতিসংঘ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) জাতিসংঘের উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
‘নজিরবিহীন বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে রাখাইন’ শিরোনামে প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়, একটি মারাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে যাচ্ছে, যা পশ্চিম রাখাইনকে ‘অভূতপূর্ব বিপর্যয়ের কিনারায়’ ঠেলে দিতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ রাখাইনের অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন সেখানকার চাহিদার মাত্র ২০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে।
জাতিসংঘ বলছে, বীজ ও সারের সংকট, বৈরী আবহাওয়া ও চাষাবাদের অভাবে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং চলমান সংঘাতের কারণে চাল উৎপাদন ব্যাপকভাবে কমে গেছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্য প্রায় সম্পূর্ণই স্থবির হয়ে পড়া ২০ লাখের বেশি মানুষকে অনাহারের ঝুঁকিতে ফেলবে।
রাখাইনে পণ্য ও মানবিক সহায়তা প্রবেশে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ, ত্রাণের কর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি খাত পুনরুদ্ধারে জরুরি অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছে ইউএনডিপি।
ইউএনডিপি সতর্ক করে বলেছে, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে ৯৫ শতাংশ জনগণ বেঁচে থাকার সংগ্রামে পিছিয়ে পড়বে। তারা দেশীয় উৎপাদনে ব্যাপক হ্রাস, চরম মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাপক বেকারত্ব এবং ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে নিজেদের মতো করে টিকে থাকতে বাধ্য হবে।
সংস্থাটি আরও বলেছে, বাণিজ্য রুট বন্ধ ও ত্রাণ কার্যক্রমে কঠোর নিষেধাজ্ঞার কারণে রাখাইন গভীর মানবিক সংকটাপন্ন সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, রাখাইনে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এই বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৬০ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এতে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ এখন সম্পূর্ণভাবে সাহায্যের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচিত সরকার অং সান সু চিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন সশস্ত্র দলের সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠেছে মিয়ানমার।
ইউএনডিপি আরও জানিয়েছে, জান্তার ক্ষমতা দখলের পর থেকে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশটির বেশিরভাগ অংশ বিশৃঙ্খলার মধ্যে থাকায় মিয়ানমারে মানবিক সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে রাখাইনে বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের একটি নতুন তরঙ্গের সূচনা করেছে বলেও ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।