মার্কিন-তালেবান চুক্তিতে ১৮ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি!

মধ্যপ্রাচ্য, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 00:57:55

দীর্ঘ দুই বছর আলোচনার পর কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হতে যাচ্ছে। দোহার স্থানীয় সময় শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২ টায় পাঁচ তারকা হোটেল শেরাটনে চুক্তিটি স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। আর চুক্তিটি সম্পন্ন হলে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮ বছরের যুদ্ধের সমাপ্তি হবে।

চুক্তির জন্য শনিবার সকাল থেকে শেরাটন হোটেলে ভিড় করতে শুরু করেছে আফগান, মার্কিন, ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিকগণ। এছাড়া জাতিসংঘের অন্যান্য সদস্যরা ও তালেবানদের ৩১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল পাঁচ তারকা হোটেলটিতে একত্রিত হচ্ছেন।

তালেবানদের পক্ষ থেকে সংগঠনটির রাজনৈতিক প্রধান মোল্লা আব্দুল গানি বারাদার চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন।

এর আগে চুক্তি নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে জানান, এটি আফগানিস্তানের জন্য একটি বিরাট সুযোগ। এটি কাজে লাগিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নতুন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে দেশটি।

ট্রাম্প আরও বলেন, ১৯ বছর আগে আফগানিস্তানে জঙ্গিদের মূল উৎপাটন করতে মার্কিন সামরিক বাহিনীকে পাঠানো হয়েছিল। এরপর থেকে আমরা আফগানিস্তানে দুর্দান্ত অগ্রগতি করেছি। আমাদের সাহসী সেনা সদস্য, মার্কিন করদাতা ও আফগানিস্তানের জনগণদের জন্য এটি সম্ভব হয়েছে।

নিজের শাসন আমলের কথা উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, যখন আমি ক্ষমতায় আসি, আমি মার্কিনীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমি আমাদের সেনাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে শুরু করব এবং এই যুদ্ধ শেষ করার চেষ্টা করব। আমি আমার প্রতিজ্ঞা রাখার চেষ্টা করছি।

এদিকে শান্তি চুক্তির সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাইক এস্পার উপস্থিত থাকবেন। চুক্তির পর আফগানিস্তানের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি যৌথ ঘোষণা দিবে বলে জানা গেছে।

ওয়াশিংটনের ঘোষিত এক সপ্তাহের সহিংসতা হ্রাস করার পরেই এই শান্তি চুক্তিটি হতে যাচ্ছে।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে প্লেন হামলা চালানো হয়। এর জন্য আল-কায়েদাকে দায়ী করে মার্কিন প্রশাসন। এরপরেই তাদের নির্মূল করতে আফগানিস্তানে সেনা পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

চুক্তি অনুযায়ী, তালেবানরা তাদের গোষ্ঠীর পাঁচ হাজার যোদ্ধাকে আফগানিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত করতে দাবি জানিয়েছে। তবে আফগান সরকার এটি মানবে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। এছাড়া ইসলামি সংগঠনটি চুক্তি অনুযায়ী সহিংসতা কমাবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকে।

চুক্তিটি নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে কয়েক মিলিয়ন উৎসুক আফগান নাগরিক। চুক্তি নিয়ে কাবুলের একটি স্কুলের শিক্ষক জাভেদ হাসান বলেন, শান্তি অত্যন্ত সহজ এবং আমার দেশ এটির প্রাপ্য। আজকের দিনে আমরা ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে পারব।

২০১৮ সালে তালেবানদের বোমা হামলায় জাভেদ হাসানের সন্তানাদি মারা যায়। এরপর থেকে তিনি বিশ্ব নেতাদের আফগান যুদ্ধের অবসানে চিঠি পাঠানো শুরু করেন।

এদিকে এই চুক্তিটিকে পূর্ব-চুক্তি হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। তারা জানান, আফগানিস্তানে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা আলোচনার মধ্যে রয়েছে। এছাড়া চুক্তির তথ্য এখনো পরিষ্কার নয়।

আন্তর্জাতিক সঙ্কট গ্রুপের সিনিয়র বিশ্লেষক অ্যান্ড্রু ওয়াটকিনস কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেন, ২৯ ফেব্রুয়ারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানদের মধ্যে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে তা কোনো শান্তি চুক্তি নয়। এটি আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়ার পূর্বের ফল।

তিনি আরও বলেন, মার্কিন-তালেবানদের এই চুক্তি আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও দ্বন্দ্ব শেষ করতে নতুন একটি জানালা খুলে দিবে। কিন্তু সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে আরও অনেক কাজ করতে হবে।

দোহায় চুক্তি করতে যাওয়া তালেবানরা জানান, চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকার তাদের শর্তগুলো মেনে নিবে।

তবে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে তাদের এক সূত্র জানান, তালেবানরা এই মাসের শুরুর দিকে জানিয়েছিল যে, যদি চুক্তি ভেস্তে যায় তাহলে তারা ছয় হাজার যোদ্ধাকে নতুন করে নিয়োগ দিবে। এছাড়া আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীও নিয়োগ দিবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর