বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে প্রায় সাত মাস বন্ধ থাকার পর ৪ অক্টোবর থেকে পবিত্র উমরা শুরু হচ্ছে। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রথম ধাপে উমরা প্রত্যাশীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু হয়েছে।
রোববার (২৭) থেকে উমরার আবেদনের জন্য নির্দিষ্ট অ্যাপ ইতামারনা (Eatmarna, اعتمرنا) উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে উমরার জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে বসবাসরত বিদেশিরা।
এদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ এক ঘোষণায় জানিয়েছে, উমরা পালনের জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় দেওয়া হবে। এর মধ্যে উমরার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। প্রথম দফায় এক দিনের ছয়টি ভিন্ন সময়ে ছয় হাজার হাজি উমরা পালন করতে পারবেন। প্রতি ভাগে এক হাজার হাজিকে তিন ঘণ্টার জন্য উমরাহ পালনের সুযোগ দেওয়া হবে।
হারামাইন সূত্রে জানা গেছে, উমরার যাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনের সময় তাদের সময়, মসজিদে হারামে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে- এসব বলে দেওয়া হবে। আপাতত একা একা কিংবা ছোট ছোট দলে উমরা করার সুযোগ মিলবে না। নির্দিষ্ট সময়ে ১ হাজারজনকে একসঙ্গে উমরার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। তাদের তদারকিতে থাকবে হারামাইনের চৌকস কর্মীরা।
প্রথম পর্যায়ে উমরা পালনকারীরা একবার কাবা তাওয়াফ ও সাফা-মারওয়া সায়ীসহ অন্য আমলগুলো করতে পারবেন। তাদের জন্য দেওয়া সময়ের মধ্যে কোনো ফরজ নামাজের সময় হলে জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন। তিন ঘণ্টা পর তাদের মসজিদে হারাম থেকে বের হয়ে যেতে হবে। প্রত্যেক দলের উমরার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট স্থানগুলো জীবাণুমুক্ত করা হবে। প্রত্যেক দলকে মসজিদে হারামে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য আলাদা আলাদ দরজা ব্যবহার করতে হবে। সঙ্গে বহন করতে হবে ‘উমরা পারমিট।’ কোনো খাবার ও নির্দিষ্ট ব্যাগ ছাড়া অন্য কিছু বহন করতে পারবে না।
তবে উমরাপালনকারীরা মক্কায় অবস্থান কতক্ষণ করতে পারবে, কিংবা তাদের পরিবহন ব্যবস্থা সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি।
মক্কার উমরা সেবা সংস্থাগুলোর অন্যতম উদ্যোক্তা আহমদ সালাবি স্থানীয় গণ্যমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘সৌদি সরকার করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন স্থগিতের পর উমরা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সঙ্গত কারণেই কিছুটা বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস, উমরার যাত্রীরা এই সতর্কতামূলক পদক্ষেপের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের সহযোগিতা করবেন। এই সহযোগিতা ধীরে ধীরে বড় পরিসরে উমরা পালনের দ্বারকে উন্মোচন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘৩০ টিরও বেশি স্থানীয় সংস্থা রয়েছে, যারা হজ ও উমরা পালনকারীদের বিভিন্ন পরিষেবা পরিচালনা করে থাকে। তারা প্রস্তুত উমরার যাত্রীদের পরিষেবা দিতে।’
২২ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষাপটে উমরা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। সে লক্ষে তার পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, তিন ধাপে উমরা চালুর প্রথম পর্যায়ে সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসীদের মধ্য থেকে ৪ অক্টোবর মোট ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ মানুষ উমরা করার সুযোগ পাবেন। অর্থাৎ একদিনে ছয় হাজার মানুষকে উমরা পালনের সুযোগ দেওয়া হবে।
দ্বিতীয় ধাপে ১৮ অক্টোবর থেকে মসজিদুল হারামের মোট ধারণ ক্ষমতার ৭৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫ হাজার মানুষ উমরা পালন ও ৪০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায়ের সুযোগ পাবেন।
তৃতীয় ধাপে ১ নভেম্বর থেকে সকল দেশের মুসলিমদের জন্য বায়তুল্লাহ শরীফ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ সময় প্রতিদিন ২০ হাজার মানুষ উমরা ও ৬০ হাজার মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন।
আর চতুর্থ পর্যায় অর্থাৎ সর্বশেষ ধাপে, করোনা মহামারি দূর হওয়ার পর মসজিদুল হারাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
আরক নিউজের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণায়ের চালু করা ‘ইতামারনা’ অ্যাপসের মাধ্যমে উমরা পালনকারীদের মসজিদে হারামে প্রবেশসহ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই অ্যাপসের মাধ্যমে আগত সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও উমরার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হবে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পবিত্র স্থানগুলোতে আগমনকারী সবাইকে করোনা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে চলা, মাস্ক পরা, অন্যের কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে এবং শারীরিক সংস্পর্শ এড়িয়ে চলারও আহ্বান জানিয়েছে।