ভারতের আসাম রাজ্যের সরকারি মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি আসামের স্বাস্থ্য ও শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রাজ্য সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে বলেন, ‘রাজ্য সরকার আসামের সমস্ত সরকারি মাদরাসা বন্ধ করে দেবে। কারণ, জনসাধারণের অর্থ দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়।’
তিনি আরও জানান, ‘আগামী মাসে এ সংক্রান্ত সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই সিদ্ধান্তকে ন্যায্য দাবি করে বলেন, ‘ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে সরকারি তহবিল দিয়ে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যায় না। তবে বেসরকারিভাবে চালিত মাদরাসাগুলোর বিষয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’
এর আগে হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছিলেন, সরকারি টাকায় চলা সংস্কৃত টোলগুলোও (হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দেওয়ার প্রতিষ্ঠান) বন্ধ করা হবে। তবে এদিন টোল নিয়ে নতুন করে কিছু বলেননি।
ইতোমধ্যে রাজ্যের মধ্যশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব এসএন দাস মধ্যশিক্ষা বিভাগের পরিচালককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যের সরকারি মাদরাসাগুলো বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ জন্য ১৪৮ জন চুক্তিভিত্তিক মাদরাসা শিক্ষককে মধ্যশিক্ষার অধীনস্থ সাধারণ স্কুলগুলোতে বদলি করা হবে। অন্য শিক্ষক ও কর্মচারীদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
মাদরাসা বন্ধের ঘোষণার পরপর অল ইন্ডিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট- এআইইউডিএফ সুপ্রিমো এবং লোকসভার সাংসদ মাওলানা বদরুদ্দীন আজমল বলেন, ‘বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার যদি সরকার পরিচালিত মাদারাসাগুলো বন্ধ করে দেয়, তবে তার দল আগামী বছরের শুরুর দিকে বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পরে সেগুলো আবার খুলে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আপনি মাদরাসা বন্ধ করতে পারবেন না। বর্তমান সরকার যদি এগুলো জোর করে বন্ধ করে দেয়, তবে আমরা ক্ষমতায় আসার পরে ৫০-৬০ বছরের পুরোনো মাদরাসাগুলো পুনরায় চালু করার বিষয়ে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নেব।’
‘মাদরাসা বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ’ জানাতে প্রস্তুত বলেও মন্তব্য করেন মাওলানা বদরউদ্দিন।
আসামের কংগ্রেস ও অন্য রাজনৈতিক দলগুলোও বলছে, তাদের বক্তব্য হলো, ‘মাদরাসা বন্ধের সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। মাদরাসা নিয়ে তো অন্যকোনো ধর্মের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’
মাওলানা বদরউদ্দিন আজমলের এআইইউডিএফ আসন্ন আসাম বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেছে। বিজেপিবিরোধী মহাজোট রাজ্যে ক্ষমতায় এলে কংগ্রেসের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে এআইইউডিএফ প্রধান জানিয়েছেন। তিনি বা এআইইউডিএফের কেউ মুখ্যমন্ত্রী হবেন না বলেও স্পষ্ট করেছেন মাওলানা আজমল।
প্রসঙ্গত, আসামে ৬১৪টি সরকারি ও প্রায় ৯০০টি বেসরকারি মাদরাসা রয়েছে। যার প্রায় সবই জমিয়তে উলামা দ্বারা পরিচালিত হয়। অথচ প্রায় ১০০টি সরকারি সংস্কৃত টোল এবং ৫০০শ’র বেশি বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। রাজ্য সরকার মাদরাসাগুলোতে বছরে প্রায় তিন কোটি থেকে চার কোটি রুপি এবং সংস্কৃত টোলগুলোতে বছরে প্রায় এক কোটি রুপি ব্যয় করে।
দু’বছর আগে, রাজ্য সরকার দু’টি নিয়ন্ত্রণকারী বোর্ড- রাজ্য মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এবং আসাম সংস্কৃত বোর্ডকে বাতিল করে দেয়। এরপর, মাদরাসাগুলোকে আসামের মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড এবং সংস্কৃত টোলগুলোকে কুমার ভাস্কর ভার্মা সংস্কৃত ও প্রাচীন বিদ্যা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আনা হয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের যুক্তি ছিল, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষাগ্রহণ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারবে।
এদিকে আসামের এসোসিয়েশন ফর প্রোটেকশন অফ সিভিল রাইটস-এপিসিআর’র রাজ্য সভাপতি ও মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ডের সদস্য মুহাম্মাদ শামস আহমেদ স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপি একটি সাম্প্রদায়িক দল। তাদের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, মুসলমানদের কোণঠাসা করে রাখা। আর্থ-সামাজিকভাবে হেনস্থা করা।