মুসলিম নাগরিকদের জন্য হজে যাওয়ার নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ জারি করল চীন। নতুন নির্দেশিকা মতে, দেশের একটিমাত্র সংস্থা হজযাত্রার আয়োজন ও ব্যবস্থা করতে পারবে বলে জানিয়েছে সি চিন পিং প্রশাসন।
চীনে প্রায় ২ কোটি মুসলিমের বসবাস। মুসলমানদের বেশিরভাগটা উইঘুর ও হুই সম্প্রদায়ের। প্রতিবছর চীন থেকে হজ পালনের জন্য সৌদি আরব যান ১১ হাজার মুসলিম। চীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চীনা ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন ছাড়া মক্কায় হজযাত্রার আয়োজন করতে পারবে না অন্য কোনো সংস্থা।
এতদিন অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা বেসরকারি উদ্যোগে হজে যেতেন। নতুন নির্দেশনা কারণে এবার তা বন্ধ হলো। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হচ্ছে নতুন নিয়ম। চীনের সরকারি মুখপত্র গ্লোবাল টাইমস এসব তথ্য জানিয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ জিনজিয়াং প্রদেশে বাস করেন প্রায় ১ কোটি উইঘুর মুসলিম। অভিযোগ রয়েছে, ওইসব মুসলিম অধিবাসীদের ধর্ম পালনে বাধা দিচ্ছে চীন সরকার। বহু মুসলিমকে ডিটেনশন ক্যাম্পেও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এও অভিযোগ রয়েছে, জিনজিয়াংয়ে হান সম্প্রদায়ভুক্ত চীনাদের বসতি গড়ে দিয়ে এলাকার জনবিন্যাস বদলে দিচ্ছে চীন সরকার।
জিনজিয়াং চীনের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তবর্তী প্রদেশ। এখান অধিবাসীদের অধিকাংশই সুন্নি মুসলমান। প্রাচীন বাণিজ্যিক করিডোর ‘সিল্ক রোড’র পাশে অবস্থিত এবং তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় চীনের ‘হান’ সম্প্রদায়ের লোকজন চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে ব্যাপকভাবে এসে বসতি স্থাপন করে জাতিগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার আশংকায় উইঘুর সম্প্রদায় প্রতিবাদ করে। এতে ২০০৯ সালে জিনজিয়াংয়ের রাজধানী উরুমকিতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধে এবং প্রায় ২০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এরপর থেকে চীন সরকার উইঘুর মুসলমানদেরকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত করে তাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন শুরু করে। ২০১৪ সাল থেকে তারা ‘ভকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার’র নামে বন্দিশালা তৈরি করে সেখানে প্রায় ১০ লাখ উইঘুর মুসলামানকে বন্দী করে তাদের জীবন থেকে ধর্মীয় সংস্কৃতিকে জোরপূর্বক মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।
চারদিকে ধারালো তারকাঁটা বেড়াবেষ্টিত ক্যাম্পে হাজার হাজার সিপাহি রাইফেল, তারকাঁটার লাঠি ও টিয়ার গ্যাস দিয়ে পাহারা দেয় সারাক্ষণ। সেখানে আটক মুসলমানদের ২৪ ঘন্টা নজরদারিতে রেখে নামাজ পড়া, রোজা রাখা, দাঁড়ি রাখা, বোরখা পড়া এবং বিয়ে ও জানাজা ইত্যাদি সবধরনের ধর্মীয় ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক বিরত রাখছে। অন্যদিকে তাদেরকে ধূমপান, মদ্যপান ইত্যাদি ধর্মীয় নিষিদ্ধ কাজে বাধ্য করছে। সেখানে তাদেরকে বলপূর্বক শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করাচ্ছে।
জিনজিয়াংয়ে মুসলিম নারীদের অহরহ ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। জোরপূর্বক নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১০ থেকে ১৫ হাজার মসজিদ, খানকা, দরগাহ ইত্যাদি ধর্মীয় স্থাপনা মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে মুসলিম নির্যাতনকে আইনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়। এই আইনে মুসলমানদের দাঁড়ি রাখা ও পর্দা করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বিশাল ধরনের ধর্মীয় জাতিগত বন্দিশালা আর কোথাও হয়নি। সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের নৃশংসতার মূল উদ্দেশ্য হলো- উইঘুর অঞ্চলকে মুসলমান মুক্ত করা। কারণ জিনজিয়াংয়ের পাশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে চীনের উচ্চাভিলাষী ‘বেল্ট এন্ট রোড ইনিসিয়েটিভ’ নামের বিশাল বাণিজ্যিক করিডোর। যাতে অবকাঠামো নির্মাণে এক ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং এতে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বৈশ্বিক রাজনীতিতে চীনের প্রভাব আরও বাড়বে।