বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের পর ধাপে ধাপে সবার জন্য উমরা পালনে পবিত্র কাবা খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। ঘোষণা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর থেকে প্রথম ধাপে উমরার কার্যক্রম শুরু হয়। ১৮ অক্টোবর থেকে চলছে দ্বিতীয় ধাপের উমরা। তৃতীয় ধাপে আগামী ১ নভেম্বর থেকে বিদেশি উমরা পালনকারীদের গ্রহণ করতে প্রস্তুত সৌদি আরবের অনুমোদিত ৫৩১ উমরা কোম্পানি। খবর সৌদি গেজেটের।
বিদেশি উমরা যাত্রীদের জন্য একটি গাইডলাইনও প্রকাশ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। ওই গাইডলাইনে বলা হয়েছে-
১. উমরা পালনকারীর বয়স অবশ্যই ১৮ থেকে ৫০ এর মধ্যে হতে হবে। ২. সৌদিতে যাওয়ার ৭২ ঘণ্টা পূর্বে করোনা টেস্ট করতে হবে।
৩. উমরা আদায়, হারামাইনে নামাজ, মদিনা ও রওজা শরিফ জিয়ারতের ‘ইতামারনা’ অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে তাসরিয়া (অনুমতি) নিতে হবে।
৪. খাবারসহ হোটেল বুকিং করতে হবে।
৫. হোটেলে এসে প্রথম তিন দিন অবস্থান করতে হবে। এর পর উমরা করতে হবে।
৬. ভ্রমণের ২৪ ঘণ্টা পূর্বে ফ্লাইট নম্বরসহ যাত্রীর যাবতীয় তথ্য উমরার জন্য নির্দিষ্ট সাইটে জমা দিতে হবে।
৭. প্রত্যেক গ্রুপে ৫০ জন উমরার যাত্রী থাকবে এবং একজন গাইড থাকবে।
সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) জানিয়েছে, পবিত্র উমরা পালনে বিদেশ থেকে আগতদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে করোনভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের সাবধানতা এবং নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
সৌদি আরবের জাতীয় হজ ও উমরা কমিটির সদস্য এবং মক্কায় অবস্থিত হোটেল কর্তৃপক্ষ কমিটির সদস্য হানি আল-ওমাইরি বলেছেন, ‘উমরা পালনকারীদের যারা গ্রহণ করবেন, সেসব উমরা সংস্থা ও তাদের কর্মী বাহিনীকে উমরা পালন বিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।’
প্রশিক্ষণে সংকট মোকাবিলার উপায়, ভিড় নিয়ন্ত্রণ, উমরা পালনকারীদের বিমানবন্দর ও হোটেলে অভ্যর্থনা এবং সর্বোত্তম পরিষেবা নিশ্চিত করা, পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদে হারাম তথা কাবা শরিফ আঙিনায় প্রবেশ ও বাইরে তদারকি করা, ‘ইতামারনা’ অ্যাপের মাধ্যমে পবিত্র নগরী মক্কায় উমরা পালন এবং মদিনায় রওজা জেয়ারত ও রিয়াজুল জান্নাতে নামাজ পড়ার সুযোগ লাভের কার্যক্রম সম্পাদনের সহায়তা করাসহ এ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল।
উমরা পালনকারীদের সুবিধার্থে উল্লেখিত বিষয়গুলো উমরা কোম্পানির সদস্যদের সরাসরি তদারকির মাধ্যমে সম্পাদন করা হবে। তা সম্পাদনে ৫৩১ উমরা সংস্থার সদস্যরা প্রশিক্ষণ গ্রহণপূর্বক প্রস্তুত রয়েছে।
আল ওমাইরি আরও বলেন, ‘বহির্বিশ্বের লোকদের উমরা সম্পাদনের সহায়তা অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার উমরা এজেন্সি রয়েছে। তাদের পাঠানো উমরা পালনকারীদের সহায়তায় সৌদি আরবের অনুমোদনপ্রাপ্ত ৫৩১টি উমরা সংস্থা রয়েছে। যারা লাখ লাখ উমরা সম্পাদনকারীর সহায়তা দিতে এ উমরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।’
বিদেশি উমরা পালনকারীদের জন্য উমরা সম্পাদনের সেবা পেতে ৩২টি সাইট ও প্লাটফর্ম প্রস্তুত রয়েছে।
বিদেশি উমরা পালনকারীদের সেবা দিতে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় ১ হাজার ২০০ হোটেল প্রস্তুত। এর মধ্যে পবিত্র নগরী মক্কায় রয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার রুম। মদিনায় ৭৫ হাজার রুম প্রস্তুত।
এছাড়া বিদেশি উমরা পালনকারীদের সহায়তা দিতে ১৪ হাজার সৌদি যুবক ও নারী প্রস্তুত। এবারের উমরা মৌসুমের বাকি সময়ে হোটেল, পরিবহন ও বাণিজ্যিক খাতে প্রায় ১০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল উপার্জন হবে বলে আশা করছেন আল ওমাইরি।
উল্লেখ্য, হারামাইন ডটইনফোর তথ্যমতে, চার ধাপে উমরা পালনের সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব। এখন চলছে দ্বিতীয় ধাপ। এ ধাপে প্রতিদিন ১৫ হাজার ব্যক্তি উমরা পালন করছেন। আগামী ১ নভেম্বর থেকে তৃতীয় ধাপে প্রতিদিন ২০ হাজার ব্যক্তি উমরা পালন করবেন। সর্বশেষ ধাপে পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনায় শতভাগ উমরা পালন করবে মুসলিম উম্মাহ।
এদিকে উমরা পালনকারী ও মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে কাবা এলাকায়া। প্রতিদিন ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী এ কাজে নিয়োজিত। প্রতিদিন স্প্রে করা হয় ১ হাজার ২০০ লিটার জীবাণুনাশক।
এ বিষয়ে হারামাইন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, মসজিদে হারামে উমরা আদায়ের লক্ষ্যে আগত মুসল্লিদের আনাগোনা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, মসজিদে হারামের অভ্যন্তর, বহিরাংশ ও মাতআফসহ পুরো এলাকা পরিচ্ছন্নতায় এবং সুগন্ধি ছিটানোর কাজে ৪ হাজার কর্মী নিয়োজিত। বিশাল এ বহরে পুরুষের পাশাপাশি নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মীও রয়েছেন। বিশাল কর্মী বাহিনী পরিচালনায় ১৮০ জন সুপারভাইজার নিরলস তদারকির কাজ করে যাচ্ছেন। সুপারভাইজারদের দক্ষ পরিচালনায় তিন শিফটে ভাগ করে ২৪ ঘণ্টা এ সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।
প্রতিদিন কাবা শরিফ তথা পুরো মসজিদে হারাম এলাকা রাত-দিন মিলিয়ে ১০ বার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার এ কাজে ডিজিটাল মেশিনে পরিবেশবান্ধব, স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত প্রযুক্তির ডিটারজেন্ট এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয়। সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে প্রতিদিন ১২ লিটার বিভিন্ন দামি ব্র্যান্ডের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি পবিত্র সুগন্ধি ছিটানো হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পরিচালক জাবের ওদাআনি জানান, পুরো মসজিদে হারাম এলাকা ছাড়াও পবিত্র কাবা শরিফ, মাতাফ, রোকনে ইয়ামেনি, হাজরে আসওয়াদ, মুলতাজাম, হাতিমে কাবা, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া পাহাড় সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে সৌদি আরবের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিযেছে, ৪ অক্টোবর থেকে উমরা পালন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো উমরাকারীর কোভিডে আক্রান্ত হননি। তার পরও আমরা সতর্ক অবস্থান বজায় রেখেছি।