করোনা মহামারির মধ্যে সীমিত পরিসরে পবিত্র উমরা পালনের সুযোগ দিয়েছে সৌদি সরকার। বিভিন্ন শর্ত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগ্রহীরা উমরা পালনের পাশাপাশি মদিনায় হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করছেন।
৪ অক্টোবর থেকে পবিত্র উমরা এবং ১৮ অক্টোবর থেকে পবিত্র রওজা জিয়ারত শুরু হয়। এতদিন শুধু সৌদি আরবের নাগরিক ও দেশটিতে বসবাসকারী এ সুযোগ পাচ্ছিলেন। ১ নভেম্বর থেকে সৌদি আরবের বাইরের নাগরিকরাও উমরা পালন এবং রওজা জিয়ারতের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে এজন্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ কঠিন শর্ত। তার পরও বাংলাদেশিদের জন্য আপাতত কোনো সুখবর নেই।
বাংলাদেশি উমরা যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হবে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত। এ ছাড়া ভ্যাকসিন আবিষ্কার কিংবা বাংলাদেশের সঙ্গে সৌদি আরবের ফ্লাইট চলাচল স্বাভাবিক হলে উমরার ভিসা পাওয়া যেতে পারে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উমরার বিষয়ে সৌদি আরব থেকে তারা এখনও কোনো চিঠি পাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘উমরার ক্ষেত্রে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজ নেই। মন্ত্রণালয় শুধু উমরার এজেন্সিদের অনুমোদন, লাইসেন্স নবায়ন এবং বৈধ হজ-উমরা এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করে। অনুমোদনপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলো সৌদি আরবের অনুমোদিত উমরা এজেন্সিগুলোর সঙ্গে মিলে যাত্রীদের যাবতীয় সেবা দেয়।’
তবে কয়েকজন হজ এজেন্সির মালিক আশা প্রকাশ করে বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ‘সীমিত পরিসরে বাংলাদেশিদের উমরা পালনের জন্য নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।’
সম্প্রতি সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার ড. আবদুল আজিজ বিন আবদুর রহিম ওজান স্বাক্ষরিত একটি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এতে করোনাকালে উমরা পালনের শর্তগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে সৌদি আরবের বিভিন্ন গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, আপাতত দুই-এক মাসের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতোই শর্তসাপেক্ষে তৃতীয় ধাপে উমরা পালনের সুযোগ দিয়েছে। এক্ষেত্রে উমরা কার্যক্রম, উমরা পালনকারীদের শারীরিক সুস্থতা এবং উমরা শেষ করে দেশে ফেরার পর তাদের শারীরিক অবস্থার মতো বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তী সময়ে শর্তগুলো শিথিল করা হবে।
আপাতত যেসব শর্ত পালন করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে, উমরা পালনকারীর বয়স হতে হবে ১৮-৫০ এর মধ্যে, ভ্রমণের ৭২ ঘণ্টা আগে করোনা পরীক্ষা এবং হারাম শরিফে নামাজ, মদিনা ও রওজা শরিফ জিয়ারতের জন্য ইতামারনা অ্যাপসের মাধ্যমে তাসরিয়াহ নিতে হবে। এছাড়া পরিবহন ও হোটেলের মতো বিমান টিকিটের বিআরএন নেওয়া এবং উমরা পালনকারী যে হোটেলে থাকবেন সে হোটেল থেকেই তিন দিনের খাবারসহ হোটেল বুকিং করতে হবে। হোটেলে এসে প্রথম পর্যায়ে তিন দিন অবস্থান করতে হবে। এর আগে উমরা পালন করা যাবে না। ভ্রমণের ২৪ ঘণ্টা আগে ফ্লাইট নম্বরসহ উমরা পালনকারীর বিস্তারিত তথ্য উমরাহ সিস্টেমে প্রবেশ করাতে হবে। প্রত্যেক দলে ৫০ জন উমরা পালনকারীর সঙ্গে একজন গাইড থাকবেন।
উমরার সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদত হোসেন তসলিম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সৌদি আরব ধাপে ধাপে উমরা চালু করছে। তৃতীয় ধাপে বহির্বিশ্বের জন্য উমরা পালনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০টি দেশ থেকে উমরাকারীরা সৌদি আরব পৌঁছেছেন। তবে বাংলাদেশের জন্য এখনও সৌদি আরব থেকে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে। তবে তারা উমরার জন্য পালনীয় বিষয়, প্রক্রিয়া ও নির্দেশনার বিষয়ে জানিয়েছে। সে হিসেবে আশা করছি, দ্রুতই বাংলাদেশিদের উমরা ভিসা দেওয়া শুরু হবে।’
বাংলাদেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে উল্লেখ করে হাব সভাপতি আরও বলেন, ‘প্রচুর মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন উমরা চালুর সুখবরের জন্য। করোনার কারণে আরোপিত কঠিন কঠিন শর্তপূরণ করেও তারা উমরা পালন করতে প্রস্তুত।’
তবে উমরা পালনের ক্ষেত্রে সৌদি আরব যেসব শর্ত দিয়েছে, তা পূরণ করে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি যাত্রী উমরা করতে পারবেন না বলে মত দিয়েছেন কয়েকজন হজ এজেন্সির মালিক। তদের যুক্তি হলো, ‘১৮-এর নিচে ও ৫০-এর ওপরের বয়সের কেউ উমরা পালন করতে পারবেন না। এখানেই তো বড় বাধা। কারণ বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত উমরা করেন একটু বেশি বয়সে।’
বিগত দিনে অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, ‘সরকারি চাকরিজীবীদের বড় একটা অংশ অবসরে যাওয়ার পর উমরা পালন করেন। সে হিসেবে তারা উমরা যেতে পারছেন না। অনেকেই আছেন পুরো পরিবার নিয়ে উমরা পালন করেন। সেই পরিবারে শিশু থাকলে- তার পক্ষেও উমরায় যাওয়া সম্ভব না। কাজেই এসব শর্ত বহাল রেখে উমরার সুযোগ হলেও বাংলাদেশ থেকে আপাতত তেমন যাত্রী পাওয়া যাবে না। এসব কারণে অনেক এজেন্সি এখনই উমরার সেবাদানের বিষয়েও আগ্রহও দেখাচ্ছেন না।’
সৌদি আরবে বসবাসরত হজ-উমরার সেবা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘উমরা পালনের ক্ষেত্রে কঠিন শর্তগুলো হয়তো বেশিদিন বলবৎ থাকবে না।’ সৌদি আরবের বিভিন্ন এজেন্সির কাছ থেকে তারা এমন আভাস পেয়েছেন। তারা আশা করছেন, আগামী ডিসেম্বরেই চতুর্থ ধাপে আরও সহজ পদ্ধতিতে উমরার ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তখন বাংলাদেশিদের জন্যও আগের নিয়মেই উমরা পালনের সুযোগ মিলতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদেশি উমরার যাত্রীদের সৌদি আরবে যেয়ে প্রথমে নির্দিষ্ট হোটেলে তিন দিন অবস্থান করতে হবে। এর পর ‘ইতামরনা’ অ্যাপসের মাধ্যমে নিবন্ধন করে উমরার অনুমতি নিতে হবে। এই অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করে মসজিদে হারামে নামাজ ও রওজা শরিফ জিয়ারতের সময় নিতে হবে। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার কারণে এক সফরে একবারের বেশি উমরা করা যাবে না, এমনকি নফল তাওয়াফ করারও সুযোগ নেই। এসব কারণে অনেকেই তৃতীয় ধাপে উমরার পরিবর্তে চতুর্থ ধাপে উমরা পালনের জন্য অপেক্ষা করছেন।