প্রায় আট মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে পবিত্র উমরা চালুর তৃতীয় ধাপে ১৩টি দেশের যাত্রীরা যাওয়া শুরু করেছেন। বাংলাদেশিরা উমরা পালনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশিদের জন্য কোনো ঘোষণা না এলেও সরকার উমরা কার্যক্রমের আগাম প্রস্তুতি শুরু করেছে।
বুধবার (৪ নভেম্বর) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আমিনুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈধ উমরা এজেন্সিগুলোর তালিকা তৈরি ও নবায়ন কার্যক্রম শুরুর জন্য আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে যে সব উমরা এজেন্সির নবায়নের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অথবা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে সে সব উমরা এজেন্সি নবায়নের জন্য নবায়ন ফি, ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।
করোনার কারণে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরব উমরার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে উমরাযাত্রীর কোনো আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সৌদি আরবে অবতরণ করতে পারেনি। এতে প্রায় দশ হাজার উমরাযাত্রী আটকা পড়েন। ধীরে ধীরে তাদের নিজ নিজ দেশে পাঠানো হয়। করোনার কারণে সীমিত মানুষের অংশগ্রহণে পবিত্র হজ পালিত হয়।
পরে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হওয়ায় সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় ৪ অক্টোবর প্রথম ধাপে সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে উমরা কার্যক্রশ শুরু করেন। ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় ধাপে ১৫ হাজার উমরাযাত্রীকে দৈনিক উমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১ নভেম্বর থেকে তিউনিশিয়া, মিসর ও পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্যের ১৩টি দেশের উমরাযাত্রীদের উমরা পালনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে দৈনিক ২০ হাজার উমরাযাত্রী উমরা পালন করছেন।
১ নভেম্বর সৌদি আরবের হজ ও উমরা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ সালেহ বেনতেন জেদ্দাস্থ আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পাকিস্তানসহ বর্হিবিশ্বের উরাযাত্রীদের প্রথম দলকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়ে বরণ করে নেন।
সৌদি সরকার মক্কা-মদিনার ১২শ’ হোটেলকে শর্ত সাপেক্ষে উমরাযাত্রী রাখার অনুমতি দিয়েছে। উমরাযাত্রী রাখার অনুমতি পেয়ে হোটেলগুলোতে পুরোদমে ধোঁয়ামোছার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সৌদি সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেক হোটেলে উমরাযাত্রীদের খাবার রেস্টুরেন্ট চালু বাধ্যতামূলক করেছে। এসব হোটেলগুলো তড়িঘড়ি করে কর্মকর্তা, কর্মচারি ও বার্বুচি নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
একাধিক উমরার এজেন্সির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৫৬টি উমরা কোম্পানী উমরা কার্যক্রম শুরু করেছে। করোনাকালীন উমরা সেবার জন্য তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
হাব (হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে পাঁচটি উমরা এজেন্সি মঙ্গলবার সৌদি উমরা কোম্পানি ইস্ট মাশাইর আল হারাম ফর উমরা সার্ভিসেসে ভার্চুয়াল এ্যাগ্রিমেন্ট প্রেরণ করেছে। তারা এসব এ্যাগ্রিমেন্ট সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপন করবে। সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেলে সংশ্লিষ্ট উমরা কোম্পানী আইডি পাসওয়ার্ড দিলেই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সম্মতিক্রমে উমরাযাত্রী প্রেরণ শুরু করা হবে।
এদিকে বুধবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে বৈধ উমরা এজেন্সিগুলোর তালিকা তৈরি এবং এজেন্সির লাইসেন্স নবায়নের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, ইতোমধ্যে যেসব উমরা এজেন্সির নবায়নের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে অথবা ৩১ ডিসেম্বর বা নিকটবর্তী সময় উত্তীর্ণ হবে তাদের নবায়ন ফি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং অন্যান্য কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হবে।
উল্লেখ্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো কারণে উমরা এজেন্সির ট্রাভেল সনদ বাতিল করা হলে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকেও সেই এজেন্সির লাইসেন্স স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আবেদনপত্রের সঙ্গে হালনাগাদ ট্রাভেল লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৯-২০/ ২০২০-২১ অর্থবছরের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, (২০১৯-২০ / ২০২০-২১ অর্থবছরের হালনাগাদ/পরিশোধিত আয়কর সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, চলমান উমরা লাইসেন্সের সত্যায়িত ফটোকপি, হালনাগাদ আইএটিএ , সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, বিগত সময়ে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে সে সংক্রান্ত তথ্য (বর্তমান অবস্থাসহ), পূর্ববর্তী বছরের উমরা কার্যক্রম পরিচালনা করলে সৌদি সিস্টেম থেকে প্রতিবেদনের প্রিন্ট কপি, পূর্ববর্তী বছরে সৌদি আরবে যে কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছিলো সে কোম্পানি থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ছাড়পত্রের আরবি প্রিন্ট কপি এবং সঙ্গে সেই প্রিন্ট কপির ইংরেজি অনুবাদের কপি।
নবায়ন ফি বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে পরবর্তী তিন বছরের জন্য মোট ৭৫ হাজার টাকা (১-৩৫০১-০০০১-১৮৫৪ কোডে) এবং ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বাবদ ১১ হাজার ২৫০ টাকা (১-১১৩৩-০০১০-০৩১১ কোডে) ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে চালানের মূল কপি (শুধু নবায়নের ক্ষেত্রে), ২০১২ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যেসব উমরা এজেন্সি লাইসেন্স পেয়েছে তারা ওই সময়ের মধ্যে ভ্যাট বাবদ ৯ হাজার টাকা এর আগে না দিলে ১ ১১৩৩-০০১০-০৩১১ কোডে বর্ণিত অর্থ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিয়ে চালানের মূল কপি দাখিল করতে হবে।
ঠিকানা পরিবর্তন করা হলে (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) তার অনুমোদনের কপি, জামানত হিসেবে সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর এফডিআর, সচল/কার্যকর রয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রত্যয়ন পত্র থাকতে হবে।
চলমান উমরা লাইসেন্সের মূল কপি (শুধু নবায়নের ক্ষেত্রে) সংযুক্ত ছকে বর্ণিত তথ্য পূরণ করতে হবে।
সম্প্রতি সাউদিয়া এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উমরা এজেন্সি ও ট্রাভেলস এজেন্সিগুলোর কাছে এক ই-মেইল বার্তায় ১ নভেম্বর (২০২০ ) থেকে উমরাযাত্রীর গ্রুপের টিকিটের চাহিদাপত্র যদি থাকে তা এয়ারলাইন্সের অফিসে জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে এটা বলা চলে, করোনা মহামারির দরুণ আট মাসের অধিক সময় ধরে উমরা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় যাত্রীরা উমরা পালনের জন্য প্রহর গুনছেন। সেই অপেক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই।