দুশ্চিন্তা যেমন মানুষের নিত্যসঙ্গী তেমনি জীবন চলার পথে অনেকেই ঋণ করেন। আবার অনেকেই মন্দলোকের আক্রোশের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। দুশ্চিন্তা, ঋণ ও অন্যের অনিষ্টের কারণে কষ্টে থাকা মানুষের দেখা সমাজে হরহামেশাই মেলে। এসব থেকে নিরাপদের থাকতে দুনিয়াবী প্রচেষ্টার সঙ্গে এমন কিছু দোয়া রয়েছে, যেগুলো পাঠ করলে এসব থেকে নিরাপদ থাকা যায়।
দুশ্চিন্তা ও ঋণ থেকে মুক্তি লাভের দোয়া
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ওই দোয়াটি সকাল-সন্ধ্যা পাঠ করবে, আল্লাহতায়ালা তার সমস্ত ঋণ ও দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন।’
দোয়ার উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি, ওয়াল হুজনি, ওয়া-আউজুবিকা মিনাল আজজি, ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল বুখলি, ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি- ওয়া কাহরির রিজাল।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে, আরও আশ্রয় নিচ্ছি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আরও আশ্রয় নিচ্ছি কৃপণতা ও কাপুরুষতা থেকে আরও আশ্রয় নিচ্ছি ঋণের প্রবলতা ও মানুষের চাপপ্রয়োগ থেকে।’ -সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৫
সব অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকার দোয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে খুবাইব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা এক বর্ষণমুখর অন্ধকার রাতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজতে বের হলাম, যেন তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েন। তার সঙ্গে যখন সাক্ষাৎ হলো- তিনি বললেন, কুল অর্থাৎ, বলো। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, কুল অর্থাৎ, বলো। আমি নিশ্চুপ রইলাম। তিনি আবার বললেন, কুল অর্থাৎ বলো। আমি আরজ করলাম, আল্লাহর রাসূল! কী বলব? তিনি বললেন, কুলহুয়াল্লাহু আহাদ ও মুয়াওয়াজাতাইন (অর্থাৎ সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস)। সন্ধ্যায় ও সকালে তিনবার এ সূরাগুলো পড়বে, সব কিছু থেকে তোমার হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হবে।’ -সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮২
বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তার দোয়া
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বিকেল বেলা এই দোয়াটি তিনবার পড়বে, সে রাতে কোনো বিষধর প্রাণী তার ক্ষতি করতে পারবে না।’ উচ্চারণ: ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক। অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় আমি তার কাছে তার সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।’ -সুনানে তিরমিজি: ৩৬৬৫
শয়তান থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া
হজরত আবু আয়াশ (রা.) সূত্রে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে উপনীত হয়ে এই দোয়া (নিম্নোক্ত) পড়ে এটা তার জন্য হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশীয় একটি গোলাম আজাদ করার সমান হবে, তার জন্য ১০টি পুণ্য হবে ও ১০টি পাপমোচন করা হবে এবং তার ১০টি মর্যাদা উচুঁ করা হবে এবং শয়তান থেকে নিরাপদ থাকবে যতক্ষণ না সন্ধ্যা হয়। আর যদি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে তা বলে, তাহলে ভোর পর্যন্ত অনুরূপ ফজিলত পাবে। বর্ণনাকারী হাম্মাদ (রহ.)-এর বর্ণনায় রয়েছে, এক ব্যক্তি হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) স্বপ্নে দেখে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আবু আয়াশ (রা.) আপনার নামে এই এই বলেছে। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আবু আয়াশ সত্যিই বলেছে।’
দোয়ার উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক ইলাহ নেই, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব তারই, সমস্ত প্রশংসাও তার, আর তিনি সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। -সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৭
জান্নাত পাওয়ার দোয়া (সাইয়িদুল ইসতিগফার)
হজরত শাদ্দাদ বিন আওস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে দিনের শুরুতে সাইয়িদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে ওই দিন ইন্তেকাল করলে জান্নাতি হবে, আর যদি সন্ধ্যায় পাঠ করে এবং রাতে তার ইন্তেকাল হয়, তাহলে সে জান্নাতি হবে।’
দোয়ার উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতাতু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগিফরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর আছি যথাসম্ভব। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গোনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কারণ, আপনি ব্যতীত আর কেউ গোনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না। -সহিহ বোখারি: ৬৩০৬
আল্লাহতায়ালা সবাইকে সকাল-বিকাল উপরোল্লিখিত হাদিসগুলোর ওপর আমল এবং বর্ণিত ফজিলতসমূহ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।