পার্থিব দুনিয়ায় আল্লাহতায়ালা তার প্রিয় বান্দাদের যেসব ভালো গুণ অবলম্বনের যোগ্যতা দিয়েছেন- দানশীলতা তার অন্যতম। এটি বান্দার মহৎ গুণাবলীর একটি। মানুষ ও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের অন্যতম পন্থা। দানশীল ব্যক্তিকে সকাই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। এটি বান্দার প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ নেয়ামত।
কারণ ধন থাকলেই দান করা যায় না। দান করতে হলে মন থাকা চাই। তা না হলে- পৃথিবীতে ‘কারুণের’ ইতিহাস সৃষ্টি হতো না। আর তাই প্রবাদে বলা হয়, ‘আল্লাহ দিয়া ধন বুঝে মন, কাইড়া নিতে কতক্ষণ।’
দানের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘ওহে যারা ঈমান এনেছো! তোমরা যা উপার্জন করো এবং আমি ভূমি থেকে যা তোমাদের জন্য উৎপন্ন করে দেই, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় করো।’ -সূরা বাকারা: ১৬৭
দানশীলতার প্রতিশব্দ হলো- উদারতা, বদান্যতা ও মহত্ব ইত্যাদি। অন্যের প্রতি দয়াপরশ হয়ে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে নিজ মন থেকে তাদেরকে কিছু দেওয়াই হলো দান। প্রকৃত দানশীল ব্যক্তি উপযুক্ত পাত্রে, নিজ অন্তর থেকে কোনোরূপ ‘রিয়া’ (লোক দেখানো) ব্যতিরেকে উত্তম মাল অতি গোপনে দান করে থাকেন। দান করার পর উক্ত গ্রহীতার নিকট দানের কোনো বিনিময় আশা করেন না বা লোকের নিকট বলে বেড়ায় না। এটিই হলো- উত্তম দানশীলতার নমুনা।
ধনদৌলতের প্রকৃত মালিক আল্লাহ। তিনি তা তার বান্দাদের সাময়িক ভোগের জন্য দিয়েছেন। ধনদৌলত মানুষের জীবনধারণের অবলম্বন মাত্র। নশ্বর এ পৃথিবীতে মানুষের জীবন, ধনদৌলত সবই ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহতায়ালা তার বান্দার মন পরীক্ষার জন্য সম্পদ দিয়ে থাকেন। বলা হয়, ‘দানে বাড়ে ধন, যদি থাকে মন।’
তাই ইসলামের শিক্ষা হলো- দান করতে হবে মন উজাড় করে। রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অথবা পার্থিব লাভের আশায় দান-খয়রাত করলে তা আল্লাহর নিকট কবুল হয় না। যেহেতু আল্লাহতায়ালা আমাদের সম্পদের সাময়িক মালিক বানিয়েছেন। তাই তার শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে দান করতে হবে। আর দান করলে সম্পদ পূত-পবিত্র হয়।
এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে ধনসম্পদ তোমরা ব্যয় করো তা তোমাদের নিজেদের জন্য। তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণেই ব্যয় করে থাকো। আর তোমাদের সম্পদের যে উৎকৃষ্টটুকু ব্যয় করো, তা পূর্ণ করে দেওয়া হবে। তোমাদের প্রতি জুলুম করা হবে না।’ –সূরা বাকারা: ২৭২
সমাজের বিত্তবানরা জনহিতকর কাজ যেমন মক্তব-মসজিদ-মাদরাসা নির্মাণ, বিদ্যালয় স্থাপন, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ বা সংস্কার, হাসপাতাল নির্মাণ, লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা, বিশ্রামাগার, অজু-গোসলখানা নির্মাণ, খাল খনন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা, বিপন্ন মানুষকে আশ্রয় প্রদান, হতদরিদ্র, পথশিশু, পঙ্গু, অন্ধ, অক্ষম এবং অসহায় লোকের পুনর্বাসন, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ইত্যাকার হিতকর কাজ করতে পারেন।
দানের ফজিলত ও বরকত প্রদানের ঘোষণা দিয়ে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যারা নিজের ধন-ঐশ্বর্য আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্য বীজ, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে। প্রত্যেক শীষে রয়েছে একশ’ শস্যকণা, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়।’ –সূরা বাকারা: ২৬১
আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন দানশীলতার অনন্য প্রতীক। তিনি কখনও কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি।
হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা ও সর্বাধিক সাহসি।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দেওয়া সর্বাধিক সাহসের কাজ। আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) প্রতি দায়বদ্ধতা থাকলেই কেবলমাত্র তা সম্ভব হয়।