শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র মাস রবিউল আউয়াল। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসেই পৃথিবীতে আগমন করেন। এ মাসের ১২ তারিখে ইহজগতের মানুষের কল্যাণে পথ প্রদর্শন করতে মহান রাব্বুল আলামিন মা আমেনার গর্ভ থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন এ মহামানবকে। পৃথিবীর মানুষ যখন নীতি নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে পশুত্বের রূপ ধারণ করে চলছিল, ঠিক সেই সময়ে রাসুল হিসেবে নবী মুহাম্মদ (সা.) দুনিয়াতে আগমন করেন।
মক্কার তৎকালীন সম্ভান্ত বংশের নেতৃস্থানীয় পরিবারে আবদুল মুত্তালিবের নাতি হিসেবে তিনি ইহজগতে আগমন করেন। গর্ভে থাকা অবস্থায় তিনি পিতা আবদুল্লাহকে হারান এবং শিশুকালেই তিনি মাকে হারিয়ে চাচার কাছে লালিত পালিত হন। মানুষের ভালোবাসায় শিশু মুহাম্মদ (সা.) বড় হতে থাকেন। ছোট সময় থেকেই তার মেধা, যোগ্যতা ও আমানতদারিতার কারণে এলাকায় তিনি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠেন। এক পর্যায়ে মক্কার লোকেরা তাকে ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত করেন। সবাই তার কাছে ধন-সম্পদ আমানত রাখেন এবং বিভিন্ন সমস্যায় তার কাছ থেকে সমাধান গ্রহণ করেন।
নবুওয়ত প্রাপ্তির পর পূর্ব থেকে চলে আসা মূর্তি পূজার বিরোধিতা করার কারণে সর্বপ্রথম তিনি প্রতিরোধের মুখে পড়েন। গোটাজিন্দেগি তিনি নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও তিনি আল্লাহর একত্ববাদ প্রচার করে যান। তার জীবনে বহু ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। তিনি আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন।
মদিনায় মদিনা সনদ প্রণয়নের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে সর্বপ্রথম লিখিত সংবিধান প্রণেতা হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তার জীবনী থেকে প্রশ্রাব-পায়খানাসহ রাষ্ট্র পরিচালনার বিধি বিধানও শিক্ষণীয় রয়েছে। তাই এ মাসে নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনী জানা সকলের প্রয়োজন। প্রয়োজন তার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা-গবেষণার। শুধু রবিউল আউয়ালে তার জীবনাদর্শ নিয়ে আলোচনা ও রাসুলের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে নানা ধরনের কর্মসূচির আয়োজন নয়। দরকার নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর আদর্শের যথাযথ অনুসরণ। তিনি যে আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন, সেই আদর্শের আলোকে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনকে সাজাতে পারলেই তাকে ভালোবাসার সুফল আমরা লাভ করতে পারবো।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ইতিহাসে আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রতিষ্ঠিত কল্যাণরাষ্ট্র, মদিনা সনদ, বিদায় হজের ভাষণ, শিক্ষানীতি, সমরনীতি, কূটনীতি স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে। অর্থনীতির ইতিহাসেও সুদমুক্ত মানবকল্যাণমূলক ধারার স্রষ্টা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিস্ময়কর অবস্থান।
মানবজাতির সচেতন প্রত্যেক ব্যক্তিই তাকে জীবনের সেবক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ বলে মনে করেন। আমরাও মনে করি, শান্তি-সম্প্রীতিতে ভরা সমৃদ্ধ দেশ গড়তে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে সুরা আহজাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলেছেন, ‘তোমাদের জন্য রাসুল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ, তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।’
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকে আদর্শরূপে গ্রহণ করলে সুফল তারাই পাবেন, যারা আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করেন এবং আখেরাতের প্রতি ঈমান রাখেন। উল্লেখিত গুণ অর্জন না করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবন নিয়ে আলোচনা ও গবেষণা করলে শতভাগ সুফল লাভ করার সম্ভাবনা নেই। মানবজাতির জন্য মুক্তি ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহতায়ালা হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন। একটি নির্দিষ্ট সময় দুনিয়ার জীবনে দায়িত্ব পালনের পর মহান আল্লাহ তার প্রিয় হাবিবকে তার কাছে নিয়ে গেছেন। কিন্তু আল্লাহর নাজিল করা পবিত্র কোরআন ও তার হাবিবের আদর্শ আমাদের মাঝে আজও আছে। কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, তার উম্মত বলে পরিচয়দানকারী মুসলিম উম্মাহর একটি বিশাল অংশ আজ দিকভ্রান্ত। তারা হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ ছেড়ে মনগড়া বিভিন্ন মতবাদের মধ্যে মুক্তি অন্বেষণ করছে। আল্লাহ প্রদত্ত জীবনবিধান ছেড়ে মিথ্যা মরীচিকার পিছনে ছুটে দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংস করছে। গোটা মানবজাতিকে দাঁড় করিয়েছে ধ্বংসের মুখোমুখি। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আমাদের আরও বেশি বেশি রাসুল (সা.)-এর সিরাত অধ্যয়ন করতে হবে। তার প্রদর্শিত নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ইসলামের বিজয়ের জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এটাই হোক, এবারের এই রবিউল আউয়াল মাসের শপথ।