সহযোগিতা আর প্রতিযোগিতা শব্দ দু’টির অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে। সহযোগিতা মানুষের অন্তর প্রশান্ত ও পুলকিত করে। সহযোগিতার উৎস হলো- নৈতিকতা মূল্যবোধ। ইসলাম মানুষকে নৈতিকতার শিক্ষা দেয়। আর প্রতিযোগিতা অন্তরকে বিষয়ে তুলে, বিষন্ন ও অবসাদগ্রস্ত করে। তুষের নিভু নিভু আগুন অন্তরকে অশান্ত, হিংস্র ও ভয়ংকর আগ্রাসী করে তুলে। প্রতিযোগিতা ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবী, প্রতিবেশী, আত্মীয় সবার প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বীপূর্ণ মনোভাব পোষণে উদ্ভুদ্ধ করে।
প্রতিযোগিতা প্রবণতা মূলত ঈর্ষা ও পরশ্রীকাতরতা থেকে তৈরি হয়। ছাত্রজীবনে, পেশাগত জীবনে, পারিবারিক সম্পর্ক, সমাজ জীবনে, রাজনৈতিক পরিমন্ডলে ভাবমূর্তি নিয়ে, জাতীয় জীবনে প্রতিহিংসার বলি হতে, অহরহ টিভি ও পত্রপত্রিকায় দেখা মিলে। যা সচেতন মানুষের সুবুদ্ধি দীপ্ত চিন্তাশক্তি হ্রাস করে। আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেয় এবং অন্যের ক্ষতি করে হলেও নিজেকে বিজয়ী করার মনোভাব তৈরি হয়। আল্লাহতায়ালা সত্য ও সুন্দরকে ভালোবাসেন। অর্থবিত্ত, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা না করে, আল্লাহতায়ালা মানুষকে মহৎ কাজে পরস্পরের মাঝে প্রতিযোগিতা করতে বলেন। যে কর্ম দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনকে সহজ করে দেয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সুতরাং তোমরা কল্যাণকর্মে প্রতিযোগিতা কর। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমাদের সবাইকে নিয়ে আসবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান।’ -সুরা বাকারা : ১৪৮
মানুষের জীবন হলো- সংগ্রামমুখর। প্রতিনিয়ত প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হয়। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মানুষ সকল বাধা-বিপত্তি ছাপিয়ে ঝলমলে সকালের মিষ্টি সূর্যের আলো উপভোগ করে। কিন্তু বর্তমানে অসুস্থ প্রতিযোগিতার চর্চায় মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করেছে। যা মানুষের মানবিক গুণাবলি বিকাশে বাধাগ্রস্ত করে। পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয় হওয়া সত্ত্বেও, মানুষের অন্তরে যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি করেছে প্রতিযোগিতা। শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ জিপিএ পাওয়া প্রতিযোগিতা। শিক্ষার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেও জ্ঞান পাপী বানায়। তাই মানুষরূপী পশুর প্রতিচ্ছবি, আমাদের দৃষ্টি এড়াতে পারে না। অভিভাবকদের চাপিয়ে দেওয়া প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য অধরাই থেকে যায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর। যদি শিক্ষার্থীরা মানবিক গুণাবলি নিয়ে বেড়ে উঠতো, তবে করোনা মহামারিতে আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে, ভোগবাদী জীবনদর্শন পরিত্যাগ করে, সহযোগিতা ও ভালোবাসার হাত প্রশস্ত করে, সংকটে মানুষকে বাঁচার স্বপ্ন দেখাতো।
পৃথিবীর সব মানুষের মধ্যে রয়েছে, অসীম শক্তি। তবে সবাই সমান দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। আমরা দলবদ্ধভাবে পড়াশোনা করলে সহজেই কঠিন বিষয়ের সুন্দর সমাধান করতে পারে। একইভাবে সবার সহযোগিতা ও সহাবস্থানের মাধ্যমে সকলের হাতের সুনিপুণ ছোঁয়ায় একটি কাজ সম্পন্ন করতে পারে খুব সহজে।
অর্থহীন প্রতিযোগিতা মানব মনকে বিষন্নতার চাদরে আবৃত করে। প্রতিযোগিতার পাল্লায় সংসারে টানাপোড়ন সৃষ্টি হয়। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই বলি, প্রতিযোগিতা হোক নিজের সাথে, নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার। জাগতিক কোনো উদ্দেশ্যে নয়, প্রতিযোগিতা হোক রবে অধিক প্রিয় হওয়া ও জান্নাত পাওয়ার। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের প্রশস্ততার মতো।’ -সুরা হাদিদ : ২১