মদিনা মসজিদ। অপূর্ব সুন্দর একটি মসজিদ। নিভৃত গ্রামে আল্লাহর ঘর এত সুন্দর হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। আধুনিক নির্মাণশৈলীর কারণে মসজিদটির সৌন্দর্য্যের কথা মানুষের মুখে মুখে। ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা সুবিশাল এই মসজিদটি দেখতে প্রতিদিন প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।
মূল রাস্তা থেকে মসজিদের প্রথম যে অংশটি চোখে পড়বে তা হলো- মসজিদের উত্তর দিকের দেয়াল আর সুবিশাল নির্মাণাধীন মিনার। প্রথম দর্শনে মনে হবে, এটিই যেন মসজিদটির সবচেয়ে সুন্দরতম অংশ। এই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে যখন কেউ মসজিদের সামনের অংশে চলে আসবে, মনের অজান্তেই মুখ থেকে উচ্চারিত হবে- সুবহানাল্লাহ। মসজিদের সামনের কারুকাজ দেখে মনে ভেসে ওঠবে রাসুলের (সা.) শহর মদিনার কথা। চোখের সামনে ভেসে উঠবে, মসজিদে নববির অবয়ব। মিল খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, মসজিদে নববির নকশার সঙ্গে গ্রামের এই মসজিদটির অনেকাংশেই মিল রয়েছে। এককথায় অপরূপ এক মসজিদ।
এটি এমন এক মসজিদ, যে মসজিদের ভেতর থেকে আকাশ দেখা যায়। প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদে নববির আদলে ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে চরখরিচা গ্রামে নির্মিত হচ্ছে এই মসজিদ। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হলেন যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহমুদুল হাসান।
২০১১ সালে শুরু হওয়া মসজিদের নির্মাণ কাজ এখনও চলছে। এখন পর্যন্ত মোট কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। চারতলা বিশিষ্ট মসজিদটির ভিতরে রয়েছে ১৭টি কাতার। প্রতি কাতারে প্রায় ১১০ জন করে মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদে রয়েছে ৯ গম্বুজ। এর মধ্যে ৮টি সাধারণ এবং একটি বৈদ্যুতিক। এই বৈদ্যুতিক গম্বুজ দ্বারাই প্রয়োজন অনুসারে ছাদ খোলা বা বন্ধ করা যায়। ফলে সহসাই মসজিদ থেকে দেখা মেলে নীল আকাশ। রয়েছে ২টি উঁচু মিনার। মাটি থেকে মিনারের উচ্চতা ১৬০ ফুট। মসজিদটি মার্বেল পাথর এবং মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষ কাঠ দ্বারা তৈরি। মসজিদের ভেতরের কারুকাজের বেশিরভাগই করা হয়েছে কাঠ দ্বারা। যার ফলে মসজিদটির সৌন্দর্য বেড়েছে কয়েকগুণ। একটি চলন্ত সিঁড়িসহ মসজিদের ভেতরে রয়েছে আরও চারটি সিঁড়ি। চলন্ত সিঁড়ির কাজ এখনও শেষ হয়নি। ছোট বড় মিলিয়ে মসজিদটিতে রয়েছে ৬টি দরজা। মেহরাবের কারুকাজ ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। মেহরাব থেকে উচ্চারিত বক্তব্য যেন মুসল্লিদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারে, সেজন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে উন্নতমানের সাউন্ড সিস্টেম।
মসজিদের সামনের কোনায় লাগানো হয়েছে বিশেষ দর্পণ। যার দ্বারা মসজিদের সৌন্দর্য বেড়েছে বহু গুণ। ভেতরের পিলারগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নতমানের টাইলস এবং মার্বেল পাথর। মসজিদের সামনে এবং দুই পাশ রয়েছ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের সৌন্দর্য বর্ধনকারী ফুল গাছ। যেখানে দেখা মেলে নানা রঙের ফুলের সমারোহ।
মসজিদের পাশে গড়ে উঠেছে একটি মাদরাসা। সামনে রয়েছে উন্মুক্ত বিশাল মাঠ। যা হৃদয়ের প্রসারতাকে বাড়িয়ে দেয় আরও বহু গুণ।
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে মসজিদটিতে যাওয়ার পথ খুবই সহজ। ময়মনসিংহ শহরের শম্বুগঞ্জ ব্রীজ থেকে অটো রিকশা সহযোগে যাওয়া যাবে জয়বাংলা বাজার। ভাড়া ১৫/২০ টাকা। এরপর জয়বাংলা বাজার থেকে রিকশা বা ভ্যানযোগে সহজেই যাওয়া যাবে মদিনা মসজিদে।
এ ছাড়া ময়মনসিংহ শহরের কাচারীঘাট এলাকা থেকে নৌকাযোগে নদী পার হয়ে মসজিদে যাওয়া যায়। নদী পার হয়ে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল বা অটোরিকশাযোগে খরিচা মসজিদ দেখতে যাওয়া যায়। আলোচিত এই মসজিদের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ চলমান।