অতীত মানে যা চলে গেছে, আর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। সুতরাং বর্তমানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা উচিত। ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তায় নিজেকে হতাশ করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহর আদেশ আসবেই, সুতরাং তোমরা এর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ো না।’ -সুরা নাহল : ১
আয়াতে বর্ণিত ‘আল্লাহর আদেশ’ শব্দের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এর অন্যতম হলো- কেয়ামত সংঘঠিত হওয়া। কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, কাফের ও মুশরিকদের শাস্তি কিংবা ইসলামি আইনের প্রবর্তন।
ইসলাম মনে করে, যা এখনও ঘটেনি তা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি কি ফল পাকার আগেই তা ছিঁড়ে ফেলাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করেন? আজ আগামী দিনের কোনো বাস্তবতা নেই, তাই তা অস্তিত্বহীন। অতএব, আপনি তা নিয়ে ব্যস্ত হবেন কেন? ভবিষ্যৎ বিপর্যয় সম্পর্কে কেন আপনার আশঙ্কা থাকতেই হবে? ভবিষ্যৎ দুর্বিপাকের দুর্ভাবনা নিয়ে আপনাকে কেন বিভোর থাকতে হবে? বিশেষ করে যখন আপনি জানেন না যে আপনি আগামী দিনের সুখটাই শুধু দেখতে পারবেন কি না?
যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে হবে তা এই যে, আগামী দিন অদৃশ্য জগতের এমন এক সেতু, যা আমাদের সামনে না আসা পর্যন্ত আমরা তা অতিক্রম করতে পারি না। কে জানে, হয়তো আমরা কখনো সেই সেতুর কাছে না-ও পৌঁছতে পারি, অথবা আমরা সেটার কাছে পৌঁছার আগেই ওটা ধসে যেতে পারে, অথবা আমরা হয়তো সেই সেতুতে পৌঁছে তা নিরাপদে পার হব?
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘কখনও তুমি ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলে এ কথা বলো না যে আমি আগামীকাল এই কাজ করব...।’ -সুরা কাহাফ : ২৪
মানুষের আগামী মাত্রই অনিশ্চিত। তাই ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলে আগামীর কোনো কথা বা কাজ হতে পারে না। ‘ইনশাআল্লাহ’ মানে যদি আল্লাহ এমনটি চান। আল্লাহ চাইলেই আমরা আগামীতে পৌঁছতে পারি এবং আমাদের আগামীর কাজ সংঘটিত হতে পারে।
সুতরাং ভবিষ্যতের আশঙ্কায় বিভোর হওয়া নিজের বিশ্বাসকে অবজ্ঞা করার নামান্তর। কেননা, সেই আশঙ্কা এ জগতের সঙ্গে আমাদের এক দীর্ঘকালীন সম্পর্ক থাকার কথা মনে করিয়ে দেয়, যে সম্পর্ককে একজন প্রকৃত মুমিন পরিহার করে। এই পৃথিবীর বহু মানুষ ভবিষ্যৎ দারিদ্র্য, ক্ষুধা, পীড়া ও দুর্যোগের ভয়ে অযৌক্তিকভাবে ভীত। এ ধরনের চিন্তা-ভাবনা শয়তানের ধোঁকা মাত্র। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘শয়তান তোমাদের দারিদ্র্যের ভয় দেখায় এবং অশ্লীল কাজ করার আদেশ করে, অথচ আল্লাহ তার পক্ষ থেকে তোমাদের ক্ষমা ও দানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’ –সুরা বাকারা : ২৬৮
অনেকেই এমন আছে যে তারা নিজেদের আগামী দিনের বুভুক্ষু (ক্ষুধার্ত) ভেবে, এক মাস পরের রোগী ভেবে অথবা এক শ বছর পর পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে- এই কল্পিত ভয়ে কান্না করে। যে ব্যক্তি জানে না কখন সে মরবে (অথচ আমাদের সবাইকে মরতে হবে), যে ব্যক্তির কাছে তার মৃত্যুর সময়ের কোনো ইঙ্গিত নেই, ওই ব্যক্তির উচিত নয় নিজেকে এ ধরনের চিন্তা-ভাবনায় নিমগ্ন রাখা। যেহেতু আপনি আজকের কর্ম নিয়ে ব্যস্ত আছেন, তাই ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা পরিহার করুন। এ পৃথিবীর কল্পিত দৃশ্য নিয়ে অযৌক্তিকভাবে নিজেকে নিঃশেষ করা থেকে সাবধান হোন।
ড. আয়েজ আল করনি লিখিত বিখ্যাত গ্রন্থ ‘লা তাহজান’ অবলম্বনে আবদুল্লাহ মাহমুদ