গোনাহ থেকে বাঁচতে করণীয়

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাওলানা হাবিবুর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 11:10:29

যে মানুষের মনে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর ভয় জাগ্রত, পরকালের চিন্তা চলমান; এমন মানুষই চায় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে, আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে চলতে। কোরআন-হাদিসে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার অনেক উপায় রয়েছে। তন্মধ্যে বাস্তবতার ভিত্তিতে এখানে কিছু উপায় উল্লেখ করা হলো-

গোনাহের সম্ভাব্য রাস্তা বন্ধ করা

গোনাহ যাতে না হয়, সেজন্য গোনাহের উপায়গুলো বন্ধ করা। গোনাহর সামনে যখন একজন মানুষ দাঁড়ায় তখন গোনাহ থেকে নিজেকে ফিরিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যায়। এর চেয়ে সহজ হচ্ছে, সেই গোনাহের যাতে কাছে না যেতে হয় সেই ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে কোনো কিছুর প্রতি যদি কারও আকর্ষণ থাকে, তাহলে সেটা যদি সামনে এসে যায় তাহলে তা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কঠিন। এর চেয়ে এর মুখোমুখি যাতে না হতে হয় সে ব্যবস্থা করা ভালো। দেখুন, কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘মুমিনদেরকে বলো, তারা যেন দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।’ এখানে আল্লাহ প্রথমে দৃষ্টি অবনত রাখতে বলেছেন। তার কারণ হচ্ছে, দৃষ্টি অবনত রাখতে পারলে লজ্জাস্থানের হেফাজত অনেক সহজ হয়ে যায়।

দৈনন্দিন রুটিন ঠিক করা

দৈনন্দিন রুটিন ঠিক করে চলা। দেখুন, আমরা দিন শুরু করি বিলম্বে, রাতে জেগে থাকি। এটা মহাবিপদ। রাত জেগে সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠার ফলে দিনের পর দিন ফজরের নামাজ কাজা হচ্ছে। ছাত্রদের এ সমস্যা প্রকট। আমরা যদি সাহাবিদের জীবন যাপন দেখি তাহলে দেখব, তারা সব কাজ দিনে সম্পন্ন করতেন। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, তার উম্মতকে যেন সকালের প্রথম ভাগে বরকত দেওয়া হয়। আল্লাহতায়ালা নবী করিম (সা.)-এর এই দোয়া কবুল করেছিলেন। অনেক সময় মনে হতে পারে, রাতে পড়া ভালো হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ভোরে পড়লে পড়া ভালো হয়। আরেকটি জিনিস হচ্ছে, রাতের বেলা ফেতনার সুযোগ অনেক বেশি। তাই আমরা চেষ্টা করব, রাতের বেলা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে ভোরে উঠার। ২/৩ দিন চেষ্টা করলেই ইনশাআল্লাহ তা অভ্যাসে পরিণত হবে।

নিয়মিত কোরআন চর্চা করা

প্রতিদিন কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা ও কোরআনের পেছনে সময় ব্যয় করা। তাহলে এই কোরআনই আমাদের গোনাহ থেকে টেনে তুলবে। পাপের রাস্তা থেকে বিরত রাখবে।

নামাজকে সুন্দর করা

আমাদের চেষ্টা করতে হবে নামাজকে সুন্দর করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই নামাজ মানুষকে মন্দ ও অশ্লীল কাজ হতে দূরে রাখে।’

জিকিরে দরুণ মানুষে অন্তর প্রশান্ত হয়

আল্লাহর সাহায্য চাওয়া

গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে তা সহজ হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় হজরত ইউসুফ (আ.)-এর কথা। হজরত ইউসুফ (আ.) কে যখন সুন্দরী, উচ্চবংশীয় নারী খারাপ কাজের আহ্বান করে, তখন তিনি একজন নবী ও দৃঢ় চরিত্রের হওয়া সত্ত্বেও সর্বপ্রথম আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন।

গোনাহ ও গোনাহের কুফল সম্পর্কে জানা

আমাদেরকে জানতে হবে কোন কোন কাজ গোনাহ। এখনতো মানুষ জানেই না কোন কাজ গোনাহ। এছাড়া আমাদের গোনাহের কুফল সম্পর্কেও জানতে হবে। তাহলে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হবে। গোনাহের কুফল অনেক। যেমন- হেদায়েত থেকে বঞ্চিত হওয়া, জ্ঞান ও স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, আল্লাহর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং জীবন জটিল হয়ে পড়ে ইত্যাদি।

দৈনন্দিন জিকির করা

দৈনন্দিন বিভিন্ন জিকির রয়েছে, যেগুলো গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। যেমন খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলা। এভাবে সবকাজের আগে দোয়া রয়েছে যেগুলো চর্চা করলে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়।

কম কথা ও কম খাওয়া

কথা কম বলা কষ্টকর। কিন্তু যে বেশি কথা বলে তার গোনাহ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাস করে- সে হয় ভালো কথা বলুক, না হয় চুপ থাকুক। কারণ কথা বলতে বলতে এমন গোনাহ হয়ে যেতে পারে, যার শাস্তি খুব সাংঘাতিক। এছাড়া অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত না হওয়া। বেশি না ঘুমানো ও বেশি না খাওয়া। অর্থাৎ হালাল কাজগুলোর মধ্যেও সীমারেখা টানা।

ধৈর্য ধারণ করা

মানুষের ধৈর্যের খুব অভাব। কিন্তু গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হলে ধৈর্য ধারণ ধরতে হবে। ধৈর্য আসবে চেষ্টা করার মাধ্যমে। একজন লোক হয়ত আপনার পায়ে পাড়া দিয়ে চলে গেল আপনি চেষ্টা করুন তাকে কিছু না বলতে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর