ক্ষমা চাওয়া মানে আল্লাহর কাছে তওবা-ইস্তেগফার করা, ফিরে আসা ও প্রত্যাবর্তন করা। কাউকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হলে প্রথমেই তাকে কোনো শর্ত ছাড়াই পাপ কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে বা পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করতে হবে। মহান আল্লাহ যেহেতু গাফুরুর রাহিম, সেহেতু তার কাছেই ক্ষমা চাইতে হবে পাপের স্বীকৃতি দিয়ে। ক্ষমা চাওয়ার পর আল্লাহর কাছে ওয়াদা করতে হবে- আমি আর পাপ করব না। তারপর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে- যেন আমরা আর পাপ না করি। এভাবে যদি একজন মহাপাপীও খাস দিলে ক্ষমা চায়, তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন- ইনশাআল্লাহ।
ক্ষমার ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যাদের ওপর দয়া করা হয়েছে ও যাদের সাধ্য আছে, তাদের এমন কসম খাওয়া উচিত নয় যে, তারা নিকটাত্মীয়, মিসকিন ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের সাহায্য করবেন না। তাদের মাফ করে দেওয়া উচিত ও তাদের দোষ না ধরা উচিত। তোমরা কি চাও না, আল্লাহ তোমাদের মাফ করুন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও মেহেরবান।’ -সুরা নুর : ২২
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্যে অথবা গোপনে ভালো কাজ করতে থাকো এবং মন্দ কাজকে মাফ করে দাও, তাহলে আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল। পূর্ণ ক্ষমতাবান তিনি।’ –সুরা আন নিসা : ১৪৯
এভাবে কোরআনে কারিমের অনেক আয়াতে ক্ষমার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। ক্ষমা প্রসঙ্গে আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং আমি অনুতপ্ত হয়ে তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।’ –সুনানে আবু দাউদ
নবী করিম (সা.) আরও বলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! যেদিন হিসাব অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন আমাকে এবং আমার পিতামাতাকে এবং মুমিনগণকে ক্ষমা করো।’
প্রথম মানব ও নবী হজরত আদম (আ.) থেকেই ক্ষমা প্রার্থনার প্রচলন হয়ে আসছে। হজরত আদম (আ.) ও হজরত হাওয়া (আ.) যখন নিষিদ্ধ ফল খেয়ে আল্লাহর বিরাগভাজন হলেন, তখন আল্লাহ তাদের তওবার জন্য দুনিয়ায় পাঠান। দুনিয়াতে তারা দু’জন আল্লাহর শেখানো দোয়া পড়লেন- ‘রাব্বানা জালামনা আনফুসানা ওয়াইল্লাম তাগফিরলানা ওতারাহামনা লানা কুনান্না মিনাল খাসিরিন।’ –সুরা আরাফ : ২৩
অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আমাদের নিজেদের ওপর অন্যায় করেছি। আপনি যদি আমাদের মাফ না করেন এবং আমাদের ওপর দয়া না করেন, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব।
মহান আল্লাহ এ দোয়া পড়ার পর তাদের ক্ষমা করে দিলেন। দুনিয়াতে চলার পথ দেখালেন, ঘর-সংসার পরিবার গঠন, বিয়েশাদীসহ সব সামাজিক কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে দুনিয়া ছেড়ে আবার পরপারে চলে গেলেন, রেখে গেলেন তাদের পরিবার-পরিজন ও সমাজব্যবস্থা। ভালো-মন্দের দোলায় দুনিয়া চলতে লাগলো। যুগে যুগে আরো নবী-রাসুল আসার প্রচলন চলতে থাকল। আসলেন হজরত ইউনুস (আ.)। তিনি ঘটনাক্রমে পানিতে পড়ে গেলেন। বিরাট এক মাছ হজরত ইউনুস (আ.)-কে আস্ত গিলে ফেললো। মহান আল্লাহর রহমতে তার শেখানো দোয়া পড়লেন। ‘লা-ইলাহা ইল্লাহ আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ জালিমীন।’ –সুরা আম্বিয়া : ৮৭
অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তুমি পবিত্র। আমি তো সীমালঙ্ঘনকারী। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে মাছ তাকে এক জনপদে ফেলে দিয়েছিল। সেখানে তিনি আবার আল্লাহর দ্বীনের কাজ চালিয়েছিলেন।
শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন, ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ –সুরা আল বাকারা : ২০১
এভাবে প্রত্যেক নবী-রাসুল তার নিজের জন্য এবং তার উম্মতের জন্য আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়েছেন। এভাবে মহান আল্লাহর নবী দিনে ৭০ বার দোয়া বা ইস্তেগফার করেছেন।
আল্লাহর নবী আরও বলেন, মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ মৃত্যুর লক্ষণ প্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন। আল্লাহর নবী আরও বলেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তার কাছে তার ধারণা অনুযায়ী আমার জিকির করে, আমি তখন তার সাথে থাকি। আল্লাহর শপথ! তোমাদের মধ্য থেকে কোনো ব্যক্তি মরুভূমিতে তার উট হারিয়ে যাওয়ার পর পুনরায় ফিরে পেলে যেরকম খুশি হয়, আল্লাহতায়ালা বান্দার তওবায় তার চেয়েও বেশি খুশি হন। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে, তাহলে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যদি সে আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসে, তাহলে তার দিকে আমি দুই হাত সমান এগিয়ে যাবো। যদি কোনো ব্যক্তি পায়ে হেঁটে আমার দিকে আসে, তবে আমি তার দিকে দৌঁড়ে যাবো।’ -সহিহ মুসলিম
আল্লাহর নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সালাম ফিরিয়ে শব্দ করে বলতেন, আল্লাহু আকবার, তারপর আস্তাগফিরুল্লাহ বলতেন তিনবার। অতএব আমাদের প্রত্যেক নামাজিদের এভাবে আমল করা দরকার।
ক্ষমা চাওয়ার জায়গার মধ্যে কাবাঘর তাওয়াফের সময়ের দোয়া, সাফা-মারওয়ার সায়ির সময় দোয়া, আরাফাতের দোয়া, জুমার দিনের দোয়া, জুমার আজানের পর ইকামতের পূর্বের দোয়া, ফজর ও আসরের নামাজের পরের সময়ের দোয়া, শেষ রাতে তাহাজ্জুদের সময়কার দোয়া বা ইস্তেগফার কবুল করে থাকেন মহান আল্লাহ। এছাড়া বিশেষ বিশেষ সময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করে থাকেন। মহান আল্লাহ তার বান্দাদের জান্নাতে নিতে চান। ভুলভ্রান্তি হলে কায়মনোবাক্যে আল্লাহর শেখানো দোয়াগুলো পড়লে এবং পাপ কাজ থেকে ফিরে এলে আল্লাহ অবশ্যই তার দোয়া কবুল করে থাকেন। প্রত্যেক নবী-রাসুলদের বেলায়ও একই ধারা কার্যকর হয়েছে।