ইসলামে মসজিদ নির্মাণের বিশেষ গুরুত্ব আছে। হাদিস শরিফে মসজিদ নির্মাণকে জান্নাতে ঘর নির্মাণের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মসজিদ নির্মাণের মতো পুণ্যময় কাজ করেছেন নবীরা। নিম্নে যেসব নবী মসজিদ নির্মাণ করেছেন, তাদের বিষয়ে আলোচনা করা হলো-
হজরত আদম আ.
পবিত্র কাবা ঘর সর্বপ্রথম ফেরেশতারা নির্মাণ করেন। অতঃপর হজরত আদম (আ.) তা পুননির্মাণ করেন। কাবা নির্মাণের ৪০ বছর পর হজরত আদম (আ.) অথবা তার কোনো সন্তানের দ্বারা বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণ করা হয়। -সহিহ বোখারি : ৩৪২৫
হজরত ইবরাহিম আ. ও হজরত ইসমাঈল আ.
প্রথম রাসুল হজরত নুহ (আ.)-এর সময়ে প্লাবনে বায়তুল্লাহর প্রাচীর বিনষ্ট হয়ে যায়। তবে এর ভিত্তি আগের মতো থেকে যায়। পরবর্তী সময়ে আল্লাহর হুকুমে একই ভিত্তি-ভূমিতে হজরত ইবরাহিম (আ.) তা পুননির্মাণ করেন। হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে কাবা ঘর নির্মাণ করতে তার ছেলে হজরত ইসমাঈল (আ.) সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহর ভিত্তি উত্তোলন করেছিল, তখন তারা প্রার্থনা করেছিল, হে আমাদের পালনকর্তা! আপনি আমাদের পক্ষ থেকে এটি কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।’ -সুরা আল বাকারা : ১২৭
হজরত দাউদ আ.
হজরত ইয়াকুব (আ.) কর্তৃক বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণের প্রায় হাজার বছর পর হজরত দাউদ (আ.) পুনরায় তা নির্মাণ শুরু করেন এবং তার ছেলে হজরত সোলায়মান (আ.)-এর কাজ সমাপ্ত করেন। হজরত সোলায়মান (আ.) জিনদের দ্বারা মসজিদের কাজ সম্পন্ন করেছেন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি (আল্লাহ) সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন তার মৃত্যুর খবর জিনদের কেউ জানায়নি ঘুণপোকা ছাড়া- যারা সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। অতঃপর যখন সে মাটিতে পড়ে গেল, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে যদি তারা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখত, তাহলে তারা (বায়তুল মোকাদ্দাস নির্মাণের) লাঞ্ছনাকর শাস্তির মধ্যে আবদ্ধ থাকত না।’ –সুরা সাবা : ১৪
হজরত মুহাম্মদ সা.
ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে প্রথমে কুবা নামক স্থানে ১৪ দিন অবস্থান করেন এবং সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এ মসজিদ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘অবশ্যই যে মসজিদ প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, সেটাই তোমার (নামাজের জন্য) দাঁড়ানোর যথাযোগ্য স্থান। সেখানে এমন সব মানুষ আছে, যারা উত্তমরূপে পরিশুদ্ধ হওয়াকে ভালোবাসে। বস্তুত আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ –সুরা তাওবা : ১০৮
কুবা থেকে মদিনায় যাওয়ার পথে আল্লাহতায়ালা জুমার নামাজ ফরজ করেন। ইয়াসরিবের (মদিনার) উপকণ্ঠে পৌঁছে বনু সালেম বিন আওফ গোত্রের ‘রানুনা’ উপত্যকায় তিনি প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন, যাতে ১০০ জন মুসল্লি শরিক হন। এটা ছিল হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) কর্তৃক প্রথম জুমা। -আল বিদায়া : ২/২১১
হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় গিয়ে মসজিদে নববি নির্মাণ করেন এবং সাহাবিরা তার সঙ্গে তাকে সহযোগিতা করেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, (মসজিদে নববি নির্মাণের সময়) আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার দু’টি দু’টি করে কাঁচা ইট বহন করছিল। নবী করিম (সা.) তা দেখে তার দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে।’ –সহিহ বোখারি : ৪৪৭