প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণের নির্দেশ

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মাহমুদ আহমদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 22:49:15

আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে উত্তম আচরণের জন্য মানবতার ধর্ম ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়করণ, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না, এবং সদয় ব্যবহার করো পিতা-মাতার সঙ্গে, আত্মীয়-স্বজন এবং এতিম এবং মিসকিন এবং আত্মীয় প্রতিবেশী এবং অনাত্মীয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে এবং সঙ্গী সহচর এবং পথচারীগণের সঙ্গে এবং তোমাদের ডান হাত যাদের মালিক হয়েছে, তাদের সঙ্গে। আল্লাহ তাদেরকে আদৌ ভালোবাসেন না যারা অহংকারী দাম্ভিক।’ –সুরা আন নিসা : ৩৬

আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে। কেননা, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা, তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া, তাদের কাছে আসা-যাওয়া করা ইবাদতেরই অংশ। যেমন মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তার রিজিক প্রশস্ত হওয়া এবং মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেওয়া কামনা করে, তার উচিত আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা।’ –সহিহ বোখারি

সাহাবি হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি মহানবীকে (সা.) বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন আমল বলে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে, তখন তিনি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো, তার সঙ্গে কোনো কিছু শরিক করো না। নামাজ ভালো করে আদায় করো এবং জাকাত দাও আর আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখো।’ –সহিহ বোখারি

অপরদিকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের সম্পর্কে মহানবীর (সা.) ভয়াবহ সতর্ক বাণীও রয়েছে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ –সহিহ বোখারি

ইসলামে যে সব অধিকারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে আত্মীয় এবং প্রতিবেশীর অধিকার সম্পর্কে অধিকমাত্রায় তাগিদ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতাযালা প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার জন্য ঘোষণা করেছেন আর এ ব্যাপারে হাদিসেও ব্যাপক আলোচনা করেছেন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘হজরত জিবরাইল (আ.) এসে আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অবিরত উপদেশ দিতে থাকেন। আমার মনে হলো, হয়তো তিনি প্রতিবেশীকে সম্পদের ওয়ারিশ বানিয়ে দেবেন।’ –সহিহ মুসলিম

ইসলাম ধর্মে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার প্রতি এতো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে, কাফেরদের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে আর আত্মীয় অমুসলিম হলেও তার সঙ্গে সম্পর্ক অমলিন রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

হজরত আসমা বিনতে বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় আমার আম্মা মুশরিক থাকতে একবার আমার কাছে আগমন করলেন। আমি হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী, আমি কি আমার আম্মার সঙ্গে সম্পর্ক রাখবো? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, তুমি স্বীয় মাতার সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক রাখবে।’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

ইসলামের অসংখ্য অনুশাসন মেনে চলা সত্ত্বেও কোনো লোক মুমিনের কাফেলার অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না, যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী হয় এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদাচারী না হয়। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে, কোনো মুমিন কোনোভাবেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না এবং সেই সঙ্গে তার প্রতিবেশীরও অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। এ শিক্ষা উপেক্ষা করে কারও পক্ষে পূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব নয়।

আমাদের আশেপাশে এমন অনেক প্রতিবেশী পাওয়া যাবে, যারা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেন। আসুন, আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়াই।

আল্লাহতায়ালা সবাইকে আত্মীয় ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখার এবং প্রতিবেশির সঙ্গে উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর