চুপ থাকার উপকারিতা

বিশেষ নিবন্ধ, ইসলাম

মুফতি আহমদ যাকারিয়া, অতিথি লেখক, ইসলাম | 2023-09-01 22:25:37

স্বল্পভাষী কিংবা কম কথা বলা, মানুষের উত্তম গুণগুলোর অন্যতম। কম কথা বলার কারণে মানুষ বেশিরভাগ সময় বিভিন্ন ধরনের বিপদ থেকে বেঁচে যায়। পক্ষান্তরে বেশি কথা বলা কিংবা অহেতুক কাজের কারণে মানুষ বিভিন্ন বিপদে পড়ে। চুপ থাকার মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি পাওয়া যায়। চুপ থাকাটা পরিশ্রমহীন এক উত্তম ইবাদত।

যদি সমাজের হানাহানি, মারামারি ও হিংসা-বিদ্বেষের কারণগুলো খুঁজতে যাই, তাহলে দেখা যাবে, অনর্থক কথা-বার্তা ও কাজে জড়ানোর কারণে এগুলো হয়। অনিয়ন্ত্রিত লাগামহীন কথাবার্তা ঝগড়াঝাটির মূল কারণ। জীবনে যারা অনর্থক কথা-বার্তা ও কাজ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে, তারা পেরেছে সব ধরনের ফেতনা থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে।

চুপ থাকা মানে দুনিয়াবি কথা থেকে চুপ থাকা। জবান সবসময় আল্লাহর জিকির ও ফিকিরের মধ্যে রাখা। হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক বেশি চুপ থাকতেন। মনে রাখতে হবে, মুখ দিয়ে বের হওয়া কথাটা হয় সওয়াবের হবে না হয় গোনাহের হবে। সুতরাং হয়, ভালো কথা বলা, না হলে চুপ থাক। ইরশাদ হচ্ছে, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার কাজে সচেতন পাহারাদার (ফেরেশতা) তার নিকটে রয়েছে।’ –সুরা কাহাফ : ১৮

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে আল্লাহ এবং আখেরাতের ওপর ঈমান রাখে, তার উচিত হলো- ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা।’ –সহিহ বোখারি

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে চুপ থেকেছে, সে নাজাত পেয়েছে।’ –তিরমিজি শরিফ

হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মানুষ তার জবান ও যৌনাঙ্গের জামিন হতে পারে, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হবো।’ –সহিহ বোখারি

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘যে নিরাপদ থাকতে চায়, তার জন্য চুপ থাকাটা অতিব জরুরি।’ -মুসনাদ আবি ইয়ালা

হাদিসে আরও বলা হয়েছে, ‘জিহবা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল’, ‘চুপ থাকা একটা ইবাদত,’ তোমার ওপর নেকির কথা বলা ছাড়া (বাকি সময়ে) বেশি চুপ থাকা জরুরি করে নাও। কারণ, এটি শয়তানকে তোমার নিকট থেকে দূর করে দেবে আর ইসলামের কাজে তোমার সহায়তাকারী হবে।’ হিকমতের দশটি অংশ আছে, নয়টি অংশ একাকীতে আর একটি অংশ চুপ থাকাতে আছে। -মুসনাদুল ফিরদাউস

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, চারটি বিষয় এমন, যা একজন মানুষের নিকট কমই থাকতে পারে, ক. চুপ থাকা যা ইবাদতের খুঁটি, খ. আল্লাহর নিকট মিনতি করা, গ. দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও ঘ. অল্পে তুষ্টি।

হজরত সোলায়মান (আ.) বলেন, ‘যদি কথা বলা রুপার মতো হয়, তাহলে চুপ থাকা হচ্ছে- সোনার ন্যায়।’ হজরত আবদুল্লাহ ইবনুল মোবারক (রহ.) বলেন, ‘যদি আল্লাহর কাজ করার কথা বলা রুপার মতো হয়, তাহলে তার নাফরমানিমূলক কথাবার্তা থেকে চুপ থাকা হলো- সোনার ন্যায়।’

হজরত সুফিয়ান সাওরিরী রহ. বলেন, দীর্ঘ চুপ থাকা ইবাদতের ভান্ডার। হজরত সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, ‘ইবাদতের শুরু চুপ থাকা। অতঃপর ইলম হাসিল করা, এরপর তা মনে রাখা, তারপর তার ওপর আমল করা। সবশেষে তা শেয়ার করা।’

ইসলামি স্কলারদের মতে, ‘নারীর সৌন্দর্য লজ্জা আর বুদ্ধিমানের সৌন্দর্য হলো চুপ থাকা।’ ‘চুপ থাকা নেক লোকদের দোয়া ও ভদ্রতার ভিত্তি।’ চুপ থাকার ছোট ফায়দা হলো, ‘নিরাপদে থাকা, আর অযথা কথা বলার ছোট লোকসান হলো- লজ্জিত হওয়া।’

আদবের চারটি ভালো দিক- ১. তওবা, ২. নফসের বিপরীতে কাজ করা, ৩. চুপ থাকা ও ৪. একাকী থাকা।

মুমিনের চারটি ভালো দিক- ১. চুপ থাকা, ২. মিথ্যা বর্জন করা, ৩. পরহেজগারীতে একনিষ্ঠতা থাকা ও ৪. রিয়া থেকে বেঁচে থাকা।

মূলত অসংযত জিহ্বা সকল ইবাদত-বন্দেগি নষ্ট করে দেয়। কেননা চুপ থাকা হলো- উত্তম পরহেজগারী আর এর কারণে গোনাহ কম হয়। এ জন্যই তো বলা হয়, গীবত থেকে বেঁচে থাকার জন্য চুপ থাকা অত্যাবশ্যক।

আমাদের সামজিক জীবন বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয়, কম কথা বলা বা অনর্থক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ সাধনে সহায়ক।

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর